ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতকে বড় করে দেখছে না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৯ জুন ২০১৯

  ভারতকে বড় করে দেখছে না বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর যে মিলেছিল পাঁচদিনের ছুটি, তা শেষ হয়ে আসল। আজ অথবা রবিবার অনুশীলন শুরু করে দেবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে অনুশীলন শুরুর আগে ছুটি ভালভাবেই কাটিয়ে নিলেন টাইগাররা। যে যেভাবে পেরেছেন ঘুরেছেন। এই ছুটি দলের ক্রিকেটারদের ভেতর ফুরফুরে মেজাজ এনে দিয়েছে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। মানসিকতাও শক্ত হয়েছে। আর তাতে করে এমন অবস্থা দাঁড়াচ্ছে, ভারতকেও বড় করে দেখতে রাজি নয় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার যেমন বলেছেন, ‘ভারত এগিয়ে আছে, এই চিন্তা করে নামলে আমি আগে থেকেই পিছিয়ে থাকব। নামতে হবে এভাবে আমরা জেতার জন্যই নামছি। আমরা সেমিফাইনালের দৌড়ে আছি। বড় টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি। এখানে যদি আমরা কাউকে বড় করে দেখি তাহলে প্রথম থেকেই পিছিয়ে যাব। তো ওইটা চিন্তা না করে আমরা কোথায় আছি, কিভাবে খেলছি এটা যদি তিনভাগেই কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা জিতব।’ ভারতকে বড় করে না দেখে জয়ের ভাবনাই চলছে। তা হওয়ারই কথা। ভারত যেভাবে ব্যাটিংয়ে ভুগছে ইদানীং, তাতে আশা দেখারই কথা। ভারত দলকে সবসময়ই ব্যাটিংয়ে দুর্বার দল ভাবা হয়। অথচ দলটি গত দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে এতটাই চাপে থেকেছে তা বাংলাদেশকে আশাও দেখাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটিতে জিতলেও ২৬৮ রানের বেশি করতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়েই তা সম্ভব হয়েছে। এর আগে আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষেও ব্যাটিংয়ে ভুগেছে ভারত। ২২৪ রানের বেশি করতে পারেনি। তবে বোলারদের দক্ষতায় ম্যাচ বের করে নিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ বোলাররা যদি ভারতকে চাপে ফেলতে পারেন তাহলে ব্যাটিং দিয়ে জেতা সম্ভব। কারণ বাংলাদেশের ব্যাটিং অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভারতের বিপক্ষে জিততে যে ব্যাটিংয়েই আসল কাজটা করতে হবে, সেই ইঙ্গিতও দিলেন সৌম্য। বলেছেন, ‘ভারত দলে বিশ্বের এক নাম্বার পেস বোলার আছে। আবার স্পিনার যারা তাদের কোয়ালিটিও অনেক ভাল। আমাদের ওভাবেই খেলতে হবে। কোন বোলার ভাল করবে সেটা বুঝে নিতে হবে। সবদিন কিন্তু সবার ভাল যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা কাকে দেখে খেলব। ওইদিন দেখতে হবে কার বল সহজে খেলতে পারি। এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করার।’ এবার বিশ্বকাপে শুরুতে ওপেনিংয়ে খেললেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে পাঁচ নাম্বারে ব্যাটিং করতে হয়েছে সৌম্যকে। যেহেতু আফগান দলে ডানহাতি স্পিনে ভরপুর ছিল। স্পিন দিয়েই তাদের বোলিংটা শুরু হবে। দুইজন বাংলাদেশের বামহাতি ব্যাটসম্যান হয়ে যায়। তাই সৌম্যকে ওপেনিং থেকে সরিয়ে লিটন কুমার দাসকে খেলানো হয়েছে। এই এক ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী হয়ে নেমেছেন সৌম্য। কিন্তু তেমন নৈপুণ্য মিলছে না। যেমনটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে ৪২ রানের ইনিংস উপহার দেন। এরপর আর কোন ম্যাচেই ৩০ রানও করতে পারেননি। শুরুটা ভাল হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সৌম্য ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খান। ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ১৮.৫০ গড়ে ১১১ রান করতে পারেন সৌম্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে বল হাতে দেখান ঝলক। ৩ উইকেট শিকার করে নেন। কিন্তু তার কাছ থেকে আগে ব্যাটিং নৈপুণ্যই চাওয়া হয়। সেই চাওয়া পূরণ হচ্ছে না। লীগপর্বে বাংলাদেশের আর দুটি ম্যাচ আছে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে। সেমিফাইনালে খেলতে হলে এ দুটি ম্যাচ জয় জরুরী। জয় পেতে হলে শুরুটাও ভাল করা জরুরী। আর শুরুতে যেহেতু সৌম্যের কাছ থেকে রান মিলছে না, তার ওপরই চাপ থাকছে বেশি। ৬ ম্যাচে সৌম্যের ইনিংসগুলো এমন-৪২, ২৫, ২, ২৯, ১০, ৩। রুগ্ন দেখাচ্ছে। সৌম্য তাই রানে ফেরার প্রত্যাশা দিচ্ছেন, ‘অবশ্যই রানটা ফ্যাক্ট। আমি যেভাবে আউট হয়েছি, যত রান করে আউট হয়েছি ওইগুলো যদি বড় হতো তাহলে ভাল হতো। অবশ্যই আমি খুশি না। কারও খুশি হওয়ারও কথা না। এখনও দুইটা ইনিংস বাকি আছে। যদি এখানে ভাল করতে পারি, অবশ্যই আগেরগুলো মুছে ফেলা সম্ভব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যেভাবে খেলেছি, যেখানে ৩০-৪০ করে আউট হয়ে যাচ্ছি এখানে যদি আমি আরও সময় নিয়ে ৫০ করতাম তাহলে হয়তো আমারও লাভ হতো, দলের প্রয়োজনেও আসত। ওইখান থেকে ইনিংগুলো আরও বড় করতে পারতাম। ওটা হয়নি। পরের দুই ম্যাচে আছে, চেষ্টা করব যেন সময় নিয়ে হলেও ইনিংসটা বড় করা যায়।’ ইনিংসটা বড় করতে গেলেই আউট হচ্ছেন সৌম্য। এ নিয়ে বলেছেন, ‘যখন রান আসছিল আমি সে সময় আউট হয়েছি। চিন্তা করছিলাম আমি যদি ওখান থেকে আরও দ্রুত রান নিতে পারি তাহলে হয়তো আমার পরের ব্যাটসম্যানরা সহজে খেলতে পারবে। বা ওই অবস্থাটা আমি যদি হ্যান্ডেল করতে পারি তাহলে পরে যারা আসবে তারা সময় নিয়ে ইনিংসগুলো বড় করতে পারবে। তাতে আমাদের দলের রানও বেশি হবে।’ সৌম্য এখন রানে ফিরলেই হলো। ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেই ব্যাট হাতে নৈপুণ্য ফিরলেই হলো। ভারতকে যে বড় করে দেখছেন না, ব্যাটে নৈপুণ্য দেখিয়ে তার প্রমাণ দিলেই হলো।
×