ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদকের ভাষ্য

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৯ জুন ২০১৯

 প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদকের ভাষ্য

গত ২৫ জুন দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত “পেনশন চালুর কথা বলে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়” শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের ভাষ্য নিচে দেয়া হল- রিপোর্টটি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির তদন্ত প্রতিবেদন নির্ভর, একটি শব্দও তথ্য বহির্ভূত নয়। গত ৩ বছর ধরে প্রফিট বোনাস বিতরণকালীন ও পেনশন চালুর কথা বলে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ব্যাপক জানাজানি ও টক অব দ্য টাউন আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে কয়লা খনির প্রশাসনিক কাঠামো, অস্তিত্ব ও ডিসিপ্লিনে হুমকির মুখে পড়ে। এসব প্রশমিত করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে ৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ২৮.১২.০০০০.২০০.৮৫. ১৪৪.১৯.১১২ স্মারকে খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক খান মোঃ জাফর সাদিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৯ জুন /১৯ তারিখে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানের হাতে জমা দেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জানান, তদন্তের স্বার্থে, কয়েকটি সভায় মিলিত হয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়। ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিতে কর্মরত স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী, সে সময় বিসিএমসিএল-এর সুবিধাভোগী অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যবৃন্দের তালিকা আন্তঃবিভাগীয় পত্রের মাধ্যমে কোম্পানির প্রশাসন বিভাগ হতে সংগ্রহ করা হয়। বর্ণিত অর্থ বছরসমূহে কোম্পানির স্টাফদের কি হারে প্রফিট বোনাস দেয়া হয়েছে প্রমাণসহ তার তথ্য ট্রাস্ট্রি বোর্ডের নিকট থেকে নেয়া হয়। এ ছাড়াও এ সময়ে ট্রাস্টি বোর্ডকে কি পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে সে তথ্যও সংগ্রহ করা হয় অর্থ ও হিসাব বিভাগ থেকে। তারপর ১৪ প্রশ্ন সম্বলিত একটি প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে দৈবচয়নের ভিত্তিতে বিসিএমসিএলের ১০৯ কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। তাদের লিখিত জবাব পর্যালোচনা করে পরে তৎপরিবর্তে ১৭ জনের সম্পূরক প্রশ্নপত্র প্রদানের মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়। এর পরে তারা মাঠে নামে তথ্যানুসন্ধানে। তারা ৪.১, ৪.২, ৪.৩, ৪.৪, ৪.৫, ৪.৬, ৪.৭, ৪.৮, ৪.৯, ৪.১০ এই ১০ আইটেমে অনুসন্ধান চালায়। এ প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিসিএমসিএল এর সুবিধাভোগী অংশীদারিত্ব ও কল্যাণ তহবিল ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় কার্যবিবরণী এবং কমিটির নিকট প্রদত্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিসিএমসিএল সুবিধাভোগী অংশীদারিত্ব তহবিলে ১ম দফায় স্থানান্তরকৃত অর্থ হস্তান্তরের বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনপ্রতি যথাক্রমে ৯২ হাজার, ৯৬ হাজারও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ট্রাস্টি বোর্ডের নিজস্ব চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের নিজস্ব চেকের মাধ্যমে প্রদান করার অর্থই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট চাঁদা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। তবে এই অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের বিসিএমও /২০১৪/১৯ স্মারকের পত্র অনুযায়ী কোম্পানিতে পেনশন প্রথা চালুর বিষয়ে ১০-৯-১৪ তারিখে বড়পুকুরিয়া কোল মাইন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের বিশেষ জরুরী সভা কোম্পানির অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোম্পানির কর্মকর্তা ছাড়াও শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভাল। এছাড়াও পেট্রোবাংলার কয়েকটি কোম্পানিতে ইতোমধ্যেই পেনশন প্রথা চালু হয়েছে। তাই এ কোম্পানিতেও পেনশন প্রথা চালুর বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। তা বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি আবুল কাশেম প্রধানীয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামানকে অনুরোধ জানানো হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেনশন চালুর জন্য জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা প্রদান করেছেন ঠিকই কবে এই অর্থ কোথায় কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুপারিশ কলামে কমিটি উল্লেখ করেছে, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী তারা জনপ্রতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯২ হাজার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেছেন। এছাড়াও পেনশন চালুর ব্যাপারে জনপ্রতি দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। তবে তা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা তারা জানেন না। এই টাকা তারা ফেরৎও চেয়েছেন। বর্নিত বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে উচ্চতর শক্তিশালী কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেছেন, বিগত ম্যানেজমেন্টের হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে দিয়ে দায়িত্ব নিয়ে অগ্নিকুন্ডের ওপর বসে সবকিছু সামাল দিতে হচ্ছে। বিচ্ছৃঙ্খল অবস্থা প্রশমিত করতে কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আগের চেয়ে এখন অবস্থা ভাল। কাজের পরিবেশ ফিরে এসেছে। বিগত দিনে ভূল বুঝিয়ে, জুলুম করে ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যারা কর্মকর্তা, কর্মচরিীদের বেতনের টাকায় কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। তারা এ ধরনের খারাপ কাজ করে খনি থেকে সরেও গেছে। তবে আবারও তারা খনিতে ফিরে আসার জন্য ঐ সব লব কুশলীরা নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এ ছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলে পানি ঘোলা করার ঘটনায় তিনি হতবাক হয়েছেন।
×