ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনয় শিল্পী সংঘের অভিষেক, আনন্দ আয়োজন

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৯ জুন ২০১৯

 অভিনয় শিল্পী সংঘের অভিষেক, আনন্দ আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক আঙিনায় দেখা গেল আপামর মানুষের প্রিয় মুখগুলো। টিভি কিংবা চলচ্চিত্র পর্দায় তারাই কখনও দর্শককে, কখনও হাসান, কখনও বা কাঁদান। আপন অভিনয়শৈলীতে চরিত্রের আবেগটি ছড়িয়ে দেন দর্শকের মননে। হয়ে ওঠেন গণমানুষের নির্মল বিনোদনের উৎসব। সেসব অভিনয়শিল্পীরা শুক্রবার বিকেলে জড়ো হয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। উপলক্ষটি ছিল অভিনয় শিল্পীসংঘের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান। ফুলেল শুভেচ্ছা, প্রদীপ প্রজ্বলন, সঙ্গীত পরিবেশনা ও পাঠের সঙ্গে আনন্দময় আড্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে আয়োজন। ‘জিতবে একুশ, হারবে না কেউ’ স্লোগানে ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয় অভিনয় শিল্পী সংঘের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদীপ প্রজ্বলন করেন সংঘের নবনির্বাচিত ২১ জন অভিনয়শিল্পী। তাদের মধ্যে ছিলেন সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, সহ-সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, ইকবাল বাবু ও তানিয়া আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রওনক হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান জর্জ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায়, কার্যনির্বাহী সদস্য বন্যা মির্জা, মনিরা বেগম মেমী ও শামস সুমন। প্রদীপ প্রজ্বলনের পর সকলে মিলে গেয়ে শোনান জাতীয় সঙ্গীত। নির্বাচিতদের পাশাপাাশি ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার খায়রুল আলম সবুজসহ দুই নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মাসুম আজিজ ও বৃন্দাবন দাশকে। তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নাট্যজন মামুনুর রশীদ, জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান, শর্মিলী আহমেদ, লাকী ইনাম, সালাউদ্দীন লাভলু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, তমালিকা কর্মকার, আবদুল আজিজ প্রমুখ। নানা কারণে সংঘের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন না অভিষেক অনুষ্ঠানে। মজ্জাচ্ছলে চমৎকারভাবে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাজু খাদেম। অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অঙ্গীকার তুলে ধরে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, শিল্পীদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তাসহ পেশাদারিত্ব রক্ষার বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করবে অভিনয় শিল্পী সংঘ। প্রত্যেক বছর জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কর্মজীবনের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। সেগুলো দিয়ে গড়া হবে আর্কাইভ। চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো টেলিভিশনের অভিনয়শিল্পীদের জন্যও জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তনের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। জাতীয়ভাবে অভিনয়শিল্পীদের পৃথক পরিচয়পত্র প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। সাম্প্রতিক সংঘের নির্বাচনের প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, একটি মহল এই নির্বাচনটিকে স্থগিত করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়ে সেই দুষ্টু চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাই কখনও থেমে থাকবে না ক্রমশ বেগবান হবে অভিনয় শিল্পী সংঘ। এখন থেকে প্রতিবছর ২২ ডিসেম্বর এ্যাক্টরস ডে পালনের ঘোষণা দেন আহসান হাবিব নাসিম। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাগতা। পাঠ ও গানের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন জয়িতা মহলানবীশ ও ছোটন। এছাড়াও পরিবেশিত হয়েছে ফজলুর রহমান বাবু ও খায়রুল আলম সবুজের গান। যৌথভাবে সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনা করেন বন্যা মির্জা ও সাজু খাদেম। শুদ্ধমঞ্চের সুবীর নন্দী স্মরণ ॥ আবহে ভেসে বেড়াচ্ছিল ‘দেখো আলোয় আলোয়, আকাশ দেখো আলোয় ভরা/ ও মহাসিন্ধু ওপার থেকে থেকে কি সঙ্গীত ভেসে আসে’। যার জন্য গানটি বাজছিল গত ৭ মে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। তিনি আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী সুবীর নন্দী। গানটির সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিকৃতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্ত্রী পূরবী নন্দী ও ফাল্গুনী নন্দী। এভাবেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক সংগঠন শুদ্ধমঞ্চের আয়োজনে ‘তোমার গানের ছায়ায়’ শিরোনামে সুবীর নন্দীর স্মরণ সভা। এরপর ছিল আলোচনা। এতে অংশ নেন কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। বক্তারা বলেন, সুবীর নন্দী ছিলেন একজন প্রকৃত শিল্পী। গানকে তিনি হৃদয় দিতে গাইতেন। অর্থের মোহের পেছনে না ছুটে আমৃত্যু সঙ্গীতের সাধনা করে গেছেন। তার কর্মকে সংরক্ষণ করতে হবে। তার কর্ম সংরক্ষিত হলে, নতুন প্রজন্ম সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। অনুষ্ঠানে মসিউদ্দিন খান সমীর ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণি’ আবৃত্তি করেন ও গেয়ে শোনান। শিল্পী স্বরলিপির কণ্ঠে গীত হয় ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করো’, ‘সুরে সুরে তোমায় ছুঁয়ে যাই’ ও ‘খেলিছো এই বিশ্বলয়ে’। এছাড়াও অনুষ্ঠানে গান শোনান লিনু বিল্লাহ, রাম চন্দ্র দাস ও অপু। জঙ্গীবাদবিরোধী নাটক রেণুলতার উদ্বোধনী প্রদর্শনী ॥ ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। ইউনিভার্সেল থিয়েটার নিয়ে এসেছে জঙ্গীবাদবিরোধী নতুন প্রযোজনা ‘রেণুলতা’। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’-এই অমোঘ বিধানের বিপরীতে নির্মিত নাটক রেনুলতা। রচনার পাশাপাশি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আবুল হোসেন খোকন। নাটকের শুরুতেই দেখা মিলে জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেণুলতা সিদ্দীকের। বীভৎস এক অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে ফিরেছে সে। প্রিয়তম স্বামী জাহিদ নিখোঁজ হওয়ার পর মঞ্চেই নিজেকে খুঁজে ফেরে রেণুলতা। তার নাটক চলাকালীন সময়েই মিলনায়তনে আচমকা হামলা চালায় একদল জিহাদী। যাদের মধ্যে রেণুলতা খুঁজে পায় স্বামী জাহিদকে। এখন তার নাম যিহাদ জাঈদী। তীব্র ঘৃণায় উন্মাদ হয়ে যায় রেণুলতা। তাকেই তুরুপের তাস বানায় জাহিদ। সঙ্গে নিয়ে নেয় নাটকের নির্দেশক হিমেশ চন্দ্র প্রেক্ষিতকে। এর পর সরকারের সঙ্গে চলতে থাকে দর কষাকাষি। যার এক পর্যায়ে প্রাণ হারায় সকল জিহাদী। সন্দেহভাজন হিসেবে ইন্সপেক্টর আরমানের জেরার মুখে পড়ে রেণুলতা। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে নাটকের কাহিনী। নাটকটিতে রেণুলতা চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সুমী ইসলাম, জাহিদ ওরফে যিহাদ জাঈদী চরিত্রে শওকত আলী মনসুর, ইন্সপেক্টর আরমান চরিত্রে আবুল হোসেন খোকন ও হিমেশ চন্দ্র পরিপ্রেক্ষিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাজহারুল হক পিন্টু। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অধরা, কানিজ সুলতানা, মিরাজ আহমেদ, শাহরিয়ার খান সাদ, রুবেল চৌধুরী ও মোহাম্মদ রাসেল।
×