ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাতালোনিয়ায় ভয়াবহ দাবানল

ইউরোপে দাবদাহ ॥ ফ্রান্সে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী

প্রকাশিত: ১০:১২, ২৯ জুন ২০১৯

  ইউরোপে দাবদাহ ॥ ফ্রান্সে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী

ইউরোপের কয়েকটি দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এদিন ফ্রান্সের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রীর পারদ ছোঁয়। এ জন্য দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশটির শত শত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বহু মাধ্যমিক স্কুলের পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে ঘরের মধ্যে থাকতে বলা হয়েছে। দেশটির বহু সুইমিং পুল ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার ইউরোপের অপর দেশ স্পেনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত পৌঁছায়। এ তাপমাত্রায় দেশটির কাতালোনিয়ায় ভয়াবহ দাবানলের সৃষ্টি হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্পেন ও ইতালিতে গরমে তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহত একজনের বয়স ১৭ বছর। শুক্রবার হিটস্ট্রোকে মারা যায় ছেলেটি। নিহত অপর জনের বয়স ৪০ বছর। তিনিও হিটস্ট্রোকে মারা যান বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহত অপর জন ইতালির একজন গৃহহীন নাগরিক। উল্লেখ্য, গত বুধবার গরমে জার্মানিতে চার জন মারা যায়। দাবানলের আগুন নেভাতে শত শত দমকলকর্মী কাজ করছে। এ অঞ্চলে গত ২০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশের নাগরিকদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। এসব দেশে সপ্তাহব্যাপী দাবদাহ অব্যাহত থাকার কারণে দূষণের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইউরোপজুড়ে জরুরী সতর্কতা জারির আশংকা অনেক বেড়ে গেছে। ফ্রান্সের আবহাওয়াবিদরা তাপমাত্রার পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, শুক্রবার ফ্রান্সের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করে। এর আগে কখনও ফ্রান্সের মূলভূখ-ে এত বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করতে দেখা যায়নি। ২০০৩ সালের আগস্টে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় মন্টপালিয়ার ও নিমস-এ সর্বোচ্চ ৪৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদ ক্রিস্টেল রবার্ট বলেন, ‘এ বছরের শুরুতেই এই রেকর্ড অতিক্রম করা হবে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।’ ফ্রান্সের সরকারী আবহাওয়া সংস্থা মেটিও ফ্রান্স জানায়, বুধবার ফ্রান্সের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এটি ছিল জুন মাসের গড় তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে এ ধরনের অতি চরম তাপমাত্রা বারবার বিরাজ করতে পারে। স্পেনের কাতালোনিয়ার উপকূলীয় নগরী টারাগোনা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের লা টোরে ডে এসপানিয়োল শহরের কাছে দাবানলে অন্তত চার হাজার হেক্টর বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাবানলের কারণে ৩০ জনকে সরিয়ে নেয়া ছাড়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পাঁচটি সড়ক। কর্মকর্তারা বলছেন, ২০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চলও আগুনের করাল গ্রাসে চলে যেতে পারে। আঞ্চলিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিকুয়েল বুচ কাতালান বেতারে বলেছেন, ওই এলাকায় একটি খামারে গাদাগাদি করে রাখা সার গরমে উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে এবং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে সম্ভবত এ দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার জার্মানি, পোলান্ড এবং চেক রিপাবলিকে জুন মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ইউরোপের এই তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী উত্তর আফ্রিকা থেকে বয়ে আসা গরম বাতাস। স্পেনের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের মোট ১১টি প্রদেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। উত্তর-পূর্ব এলাকার কোন কোন অংশে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও পৌঁছাতে পারে। ইতালিতেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। রোমসহ কয়েকটি শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে অনেক দেশেই তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। ফরাসি স্বাস্থ্যকর্মী তার দেশের জনজনকে দুপুরের দিকে রাস্তায় বেশি চলাচল করতে ও জগিং না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
×