ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১০ বছর পর মশার ওষুধ পরিবর্তন

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৯ জুন ২০১৯

১০ বছর পর মশার ওষুধ পরিবর্তন

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ ১০ বছর পর এই প্রথমবারের মতো মশার ওষুধ পাল্টাতে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। পরিবেশবান্ধব ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে না এমন আধুনিক ওষুধের কম্পোজিশন পরিবর্তন করে নতুন কম্পোজিশনের প্রয়োগের মাধ্যমে মশা মারতে কার্যকর ওষুধ ছিটাবে সংস্থাটি। বর্তমানের ছিটানো ওষুধগুলো তেমন কার্যকর হচ্ছে না ফলে মশাও মরছে অনেক কম। তাই নতুন মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমের মধ্যেই এই নতুন ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হবে। নাগরিক যন্ত্রণা লাঘবে ডিএনসিসি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেই দীর্ঘদিন পর ওষুধ পরিবর্তন করছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে নতুন কম্পোজিশনের এই মশার ওষুধ ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। অপরদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বর থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে ডিএনসিসি ২৯ জুন থেকে একযোগে মশা মারতে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করবে। আগামী শীতের আগেই যেহেতু মশার উৎপাদন বেশি হয় তাই চলতি বর্ষায়ই এই নতুন মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে দিতে চায় ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। তবে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে ও মশক নিধনে শুরু হওয়া ক্রাশ প্রোগ্রামে বর্তমান প্রচলিত মশার ওষুধই ব্যবহার করা হবে। ওষুধ ছিটালে মশাও মরবে ও একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব হবে অর্থাৎ পরিবেশের তথা জনস্বাস্থ্যের কোন প্রকার ক্ষতি হবে না। অপরদিকে মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করতে এ বছর বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা চলতি বর্ষা থেকেই মশক নিধনে একযোগে সকল ওয়ার্ড কমিশনার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তথা সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে কাজ করতে চায়। একই সঙ্গে নাগরিক সচেতনতার জন্য বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করবে বলে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মশার ওষুধ ছিটালেও মরছে না মশা এ অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষেই কার্যকর নয় মশার ওষুধ। এর বাইরেও কোন কোন এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতেও যায় না সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা। এসব অভিযোগ পুরোপুরি বন্ধ করতে চায় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, আগামী ২৯ জুন থেকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মশক নিধনে এক বিশাল জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠান থেকেই মশক নিধনের কার্যক্রম ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে একযোগে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করবে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, মশা মরার জন্য ব্যবহৃত বর্তমান ওষুধ তেমন একটা কার্যকর হচ্ছে না। প্রয়োজনমতো মশার ওষুধ ছিটানোর পরও মশা মরছে তুলনামূলক খুবই কম। মেয়রের নির্দেশে স্বাস্থ্য শাখা মশার ওষুধ পরিবর্তনের প্রস্তাব দিলে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব অথচ কার্যকরী এমন মশার ওষুধ ছিটানো যায় কি না তার জন্য বর্তমান ওষুধের কম্পোজিশন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে নতুন কম্পোজিশনের এই ওষুধ কতটা মানসম্পন্ন তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিও হবে না এমনি পরিবেশবান্ধব হবে তা পরীক্ষার জন্য ওষুধের কম্পোজিশনের মাত্রা সঠিক কি না তা জানতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে চিঠি দেয় ডিএনসিসি। ওষুধের মান পরীক্ষা করতে আইসিডিডিআরবির সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হয়। জানা গেছে, নতুন ওষুধ মশা মারতে অধিক কার্যকরী হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মশার উৎপাত থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। নাগরিক যন্ত্রণা লাঘবে ডিএনসিসি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই এরই অংশ হিসেবে আমরা দীর্ঘ দশ বছর পর নতুন কম্পোজিশন দিয়ে মশার ওষুধ তৈরি করছি। যা পরিবেশবান্ধব ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতি হবে না। এই নতুন কম্পোজিশনের ওষুধটির মান পরীক্ষা করতে আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মতি পেয়েছি। এতে আইসিডিডিআরবির সহযোগিতা রয়েছে। মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে আমরা ২৯ জুন থেকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করব। এরপর প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করব। নতুন ওষুধ সম্পর্কে মেয়র বলেন, চলতি মৌসুমে শীতের আগেই নতুন ওষুধ প্রয়োগ করে মশা মারার কাজ শুরু করব। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
×