ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত বাণী ভবনে কর্মচারীদের বসবাস

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৯ জুন ২০১৯

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত বাণী ভবনে কর্মচারীদের বসবাস

হাসান ইমাম সরকার ॥ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো একটি হল বাণী ভবন। ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজউক থেকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন কর্মচারী সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। বারবার নোটিস দিয়ে সতর্ক করার পরও তারা ওই জায়গা ছাড়ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে ওই ভবনে বসবাসরত কর্মচারীরা বলছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ অনাবাসিক হওয়ায় সেখানে তারা বাধ্য হয়ে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে টিনশেড ঘর করে দিলে তারা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারবেন বলে জানান। সরেজমিন দেখা যায়, ১নং ঈশ্বরচন্দ্র দাস লেনের ৩৫ ও ৩৬ প্যারিদাস রোডের মাথায় অবস্থিত এ ভবনটির ফটকে ‘কর্মচারী আবাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’ লেখা রয়েছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে চুন-সুরকি খসে খসে পড়েছে। দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির লাইন বিছিন্ন। সন্ধ্যার পর সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। ভবনের কয়েকটি কামরায় ময়লা আবর্জনায় স্তূপ হয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বাণী ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়নে নেই। ভবন ছেড়ে দেয়ার জন্য কয়েকবার নোটিস দেয়া হলেও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই সেখানে বাস করছেন। এখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না। আর ভবনটি ভেঙে নতুন কোন ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনাও আপাতত নেই। জানা যায়, ‘বাণী ভবন’ আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হল হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন তা কর্মচারী আবাস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের সব হল ছাত্ররা ছেড়ে দেয়। সরেজমিন দেখা যায়, বাণী ভবনের ২১ রুমে অর্ধশতাধিক কর্মচারী বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে পরিবার নিয়ে সেখানে আছেন। ভবনে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ নেই। সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে তারা আলো জ্বালাচ্ছেন। জরাজীর্ণ ভবনটিতে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পরিত্যক্ত ভবনে থাকার কারণ কি জানতে চাইলে জবির কর্মচারী আল আমিন বলেন, আমরা খুব অল্প বেতনে কাজ করি। আলাদা বাসা ভাড়া দিতে গেলে সংসার চলবে না। তাই গ্যাস-বিদ্যুত না থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছি। এখানে আমাদের কষ্টের কোন সীমা নেই। রিয়াজুল ইসলাম নামে আরেকজন কর্মচারী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। নোংরা পরিবেশ। তারপরও কোন রকমে দিন কাটাচ্ছি। সত্যি বলতে এটা কোন জীবন না। কর্তৃপক্ষকে আবাসন সমস্যার কথা বলা হয়েছে। তারা আবাসন সমস্যার সমাধান করবে করবে বললেও এক বছর চলে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নেই। কর্মচারীদের জন্যও কোন আবাসন ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নেই। বাণী ভবন একটি পরিত্যক্ত ভবন। ওখানে কেউ থাকে না। হয় তো এ সুযোগে কেউ কেউ গিয়ে আবাস গড়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখান থেকে কর্মচারীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গত মে মাসেও সেখানে নোটিস দিয়ে ভবনটি খালি করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরেও ভবন থেকে কেউ সরে না গেলে এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকেই নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে বলার বা করার কিছু নেই। ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে টিনশেড করে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য কর্মচারীদের আবাসনের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মচারীদের এখনই কোন আবাসন সুবিধার পরিকল্পনা নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এদিকে ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাসের বিষয়ে জানে না রাজউক। রাজউকের উন্নয়ন কর্মকর্তা মেজর সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাণী ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে লোকজনের বসবাসের বিষয়টি আমার জানা নেই।
×