ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন সায়াহ্নে ঘুরছে না মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফার জীবিকার চাকা

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৯ জুন ২০১৯

জীবন সায়াহ্নে ঘুরছে না মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফার জীবিকার চাকা

ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি মোস্তফা ভুইয়া। এখন জীবন সায়াহ্নে এসে দৌড়াচ্ছেন জীবীকার টানে। দৌড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নামটি লেখানোর। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানুষটি বৃদ্ধ বয়সে কী যে করবেন তাও ভেবে পাচ্ছেন না। অসুস্থ শরীর। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো তা মানছে না। তাই একটু স্বস্তি লাগলেই সাগরে ছুটছেন। কারও ট্রলারের জেলে হিসেবে। একটি বাজারের ব্যাগে মুক্তিযুদ্ধের কিছু প্রমাণপত্র নিয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। সহায়-সম্বল, অবলম্বন সব হারিয়ে এখন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মোস্তফার ঠাঁই হয়েছে কলাপাড়ার হাকিমপুরের আবাসন প্রকল্পের একটি বিধ্বস্ত কক্ষে। মোস্তফা জানান, ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে ৮০ জনের একটি দলে নোয়াখালীর শ্রীনগর বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে হরিনা শরণার্থী ক্যাম্পে ১০দিন ছিলেন। এরপরে বগাপাড় ট্রেনিং সেন্টারে চলে যান। সেখানে অস্ত্র চালানোর ট্রেনিংয়ের পরে এফ এফ গ্রুপে ১৮০ জনের একটি দলে মেজর রফিকুল ইসলামের অধীনে এক নম্বর সেক্টরে নোয়াখালীতে যুদ্ধে যোগদান করেন। তিন মাস পরে ভারতের মেজর নরসিমা রাওসহ ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে ডাল্ডা কোম্পানি আর্টিলারি গ্রুপে চার নং সেক্টর চট্টগ্রামে যোগ দেন। এরপরে চলে যান জন্মস্থান সন্দ্বীপে। দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনের পরে অভাবের তাড়নায় ক্যাপ্টেন এনামুল হকের শরণাপন্ন হন। ক্যপ্টেন একটি চিঠি লিখে পাঠান ইঞ্জিনিয়ার আফলাতুন সাহেবের কাছে। তার সহযোগিতায় সিআরবি বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় হিসেবে চাকরি করেন কয়েক মাস। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের পরে যুদ্ধাপরাধীদের তা-বে ফের সন্দ্বীপে ফিরে যান মোস্তফা ভুইয়া। কিন্তু ভাগ্য বড় নির্মম। প্রকৃতির রুদ্রতায় নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তিন দফা বসত ভিটা পাল্টেছেন। সবশেষ সর্বনাশ হয় ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে। মোস্তফার মুক্তিযুদ্ধকালীন সকল সনদসহ বাড়িঘরের আসবাবপত্র হারিয়ে ফেলেন। ২০০৬ সালে সব হারিয়ে চলে আসেন কলাপাড়ায়। ২০১৭ সালের কলাপাড়ার যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় মোস্তফার নাম রয়েছে ৩৫ নম্বরে। এখন অসহায় এ মানুষটি জীবন সায়াহ্নে তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারের সহায়তার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। স্ত্রী, দুই সন্তানসহ চার জনের সংসারের বোঝা বইতে গিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছেন। মানুষটির রাত কাটছে বিনিদ্র। চরম অসহায়ের মতো ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। কলাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধারাও মোস্তফা ভুইয়ার জন্য সহমর্মিতা জানিয়ে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×