ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফল পাকার মধু মাস

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২৯ জুন ২০১৯

 ফল পাকার মধু মাস

বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন যখন চরম অস্থিরতায় দিন কাটায় পাশাপাশি মৌসুমী ফলের বিচিত্র সম্ভার পুরো প্রকৃতিতে নিয়ে আসে অন্য রকম এক মিষ্টি সুবাস। বৈশাখ মাসে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আম পাকে এমন প্রচলিত প্রবাদ বাস্তবে ভিন্ন রূপ নেয়। কারণ আম পাকার যথার্থ সময় জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে। এই জনপ্রিয় ফলটি নৈসর্গিকতাকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দেয়ার আগেই আর এক মনমাতানো ফল লিচুর আবির্ভাব জনগণের হৃদয়ে দহনের তীব্রতায় সুমিষ্ট পরশ বুলিয়ে দেয়। সত্যিই গ্রীষ্মকালের এই চমৎকার টক-মিষ্টি মাখা ফলটির আকর্ষণ ও জনপ্রিয়তা কোনভাবেই কম নয়। তবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে লিচুর যোগান কমে যায়। ফলে ফলটির চাহিদাও থাকে নজরকাড়া। বাজারে আসতে না আসতেই শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দামের উর্ধগতিতে ক্রেতারা নাজেহাল হলেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের গাফিলতি দৃশ্যমান হয় না। প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং সুস্বাদুর একাত্মতায় ফলটির যে চাহিদা সর্বসাধারণের মাঝে তা সত্যিই দেখার মতো। গাছপালায় আবৃত এই সুরম্য লীলানিকেতনের প্রাকৃতিক সম্ভার শুধু নিবিড় ছায়াঘেরা স্নিগ্ধ প্রতিবেশই নয় তার চেয়েও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর ফলের এক সমৃদ্ধ পীঠস্থানও। যা বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের আকর্ষণীয় ও বিচিত্র ফলফলাদির পরম নিদর্শন বটে। ফলের রাজা আম তো এদেশের সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার এক অপরিহার্য মিষ্টিমধুর আবহ। আমের দেশ বলে খ্যাত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফলের এই বিশেষ ঋতুতে আমের সুবাসে পুরো পরিবেশ অন্য রকম হয়ে যায়। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম সরবরাহ হয়। যেখানে রাজশাহী আর নবাবগঞ্জের মানুষরা আমের দিন প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নের চাহিদা পূরণ করে শুধুমাত্র আম খেয়ে। ভরা মৌসুমে আমের বিচিত্র আর ব্যাপকতায় ফল উৎসবের পর্যায়ে পড়ে যেতেও সময় লাগে না। তবে অন্য বারের মতো এ বছর আমের মধ্যে তেমন কোন অস্বাস্থ্যকর উপাদান মেশানোর খবর শোনা যাচ্ছে না। গাছের যথার্থ আম বাগান মালিক থেকে পাইকারি বিক্রেতা এবং সবশেষে ভোক্তা শ্রেণীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। শস্য-শ্যামলা বাংলার অবারিত সবুজ বৃক্ষরাজির যে অভাবনীয উৎপাদন ক্ষমতা সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার শামিল হতে পারে। আর সে জন্য প্রয়োজন ফলের এমন ব্যাপক সমারোহের যথার্থ সংরক্ষণ। বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান মিশ্রণ ছাড়া বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় এসব মৌসুমী ফলের পচন কিভাবে রোধ করা যায় তাও বিবেচনায় আনা অত্যন্ত জরুরী। আম ছাড়াও জাম, কাঁঠাল, আনারসসহ আরও কিছু ফল জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে বাজারে আসে। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এই খাদ্যটি পুষ্টিমান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অতি আবশ্যিক দেশজ ফল যা মিষ্টি এবং সুস্বাদুও। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লালমাটির কাঁঠাল সারা বাংলাদেশে আদৃত। কাঁঠালের কদর আমের মতোই বাংলার ঘরে ঘরে। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবেও অভিনব এবং চমৎকার। আর পাকা কাঁঠালের বিচির ভর্তা থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের সহকারী হিসেবে আলুর মতোই প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। আম-কাঁঠালের এমন মিষ্টি সুবাস পরিবেশে মানুষের প্রতিদিনের জীবনেও আসে বিচিত্র অনুভবের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। আনারসের মতো ফলও আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ফলটি অত মিষ্টি না হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ স্বীকার করতেই হয়। এভাবে মধুমাসের ফল উৎসবের সাধারণ মানুষের জীবন প্রবাহে যে মিষ্টিমাখা অপূর্ব আয়োজন তা এদেশের প্রকৃতিরই অবারিত দান। নদীমাতৃক বাংলার নরম উর্বর পলিমাটি যে প্রাকৃতিক সম্পদে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছে বিচিত্র রকমের ফল-ফলাদি তারই অনন্য উপহার।
×