ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুনীর বিচার

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২৯ জুন ২০১৯

খুনীর বিচার

সমাজ এমন একটা দুঃখজনক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে যে, সিনেমার ভয়ঙ্কর নৃশংস দৃশ্যগুলোই বাস্তব হয়ে উঠছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কোপানোর দৃশ্য হিন্দী ও বাংলা সিনেমায় অহরহ দেখানো হয়। অনুরূপ একটি বাস্তব দৃশ্য ইউটিউবের মাধ্যমে দেশে ভাইরাল হয়েছে, একইভাবে ফেসবুকেও ওই হত্যাকান্ডের স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা ধিক্কারের ঝড়। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনায়। স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে দুই নরাধম রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। স্ত্রী একাই লড়ে গেছেন স্বামীকে বাঁচাতে, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বহু মানুষ। তারা কেউ এই হত্যাকান্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের ভেতর খুনিদের সহযোগী থাকতে পারে- যারা এই ঘটনায় পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী। ঘটনার বিবরণ পড়লে যে কেউই শিউরে উঠবেন। রিফাত শরীফ বুধবার সকালে তার স্ত্রীকে বরগুনা সরকারী কলেজে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবকের হামলার শিকার হয়। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপায়; উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। প্রশ্ন উঠছে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের সাহস পায় কোথা থেকে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কারা। তারা কি ভেবেছে যে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তারা পার পেয়ে যাবে! অর্থাৎ তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না! ইতোমধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের যে কোন মূল্যে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মানব হত্যাকা-ের মতো গুরুতর অপরাধ করে এখন আর কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে না। সব অপরাধীকেই আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ফলে এটা ভাবার কোনই কারণ নেই যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে দেশের উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রী ওই নৃশংস ঘটনার পর দ্রুত যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে এই সমাজে যেমন কুপিয়ে হত্যার মতো খুনীরা রয়েছে, তেমনি তাদের দমন করার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা এবং সমাজে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার যথাযথ প্রয়াসও রয়েছে। মানুষ আশা করে দ্রুত ওই খুনীদের আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হবে। তাহলেই সমাজে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে এই ভেবে যে এই দেশে বর্তমানে এমন একটি ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিরাজ করছে যেখানে অপরাধী অপরাধ করে কোনক্রমেই রেহাই পাচ্ছে না। বিচারহীনতার ও হত্যাকান্ড সংঘটিত করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ানোর দুঃসময়ের অবসান ঘটেছে। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানই হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, এটি এখন সুনিশ্চিত। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় হলো চোখের সামনে হত্যাকা- ঘটতে দেখে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ছে এবং সাহসী ও প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে অপারগ থাকছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে কিভাবে তা নিয়ে চিন্তাবিদরাও বিজ্ঞজনেরা নিশ্চয়ই আলোকপাত করবেন এবং বেরিয়ে আসার একটি পথের নির্দেশনা দেবেন, এমনটিই প্রত্যাশা।
×