ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেত্রকোনায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত ॥ পাহাড়ী ঢলে বাঁধে ধস

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৯ জুন ২০১৯

নেত্রকোনায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত  ॥ পাহাড়ী ঢলে বাঁধে ধস

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ২৮ জুন ॥ তিন দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার বিকেলনাগাদ এসব গ্রামে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এদিকে ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন এক ব্যক্তি। এছাড়া দুর্গাপুর পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত বুধবার থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁও, ধারাপাড়া, নয়াচৈতা, রামনাথপুর, নক্লাই, কৃষ্টপুর, রায়পুর, নতুন বাজার, বারমারা, খারনৈ ইউনিয়নের সন্দুরীঘাট, বাউসাম, ভাষাণকুড়া ও লেংগুরা ইউনিয়নের চৈতা, লেংগুরা বাজার, ফুলবাড়ি, জিগাতলা, শিবপুর এলাকার নাজিরপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এসব গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরের ভিটাও তলিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকার আউশসহ শাক-সব্জির জমিও নিমজ্জিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। পানির তোরে পাঁচগাঁও এলাকার একটি বেড়িবাঁধও ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া কলমাকান্দা-মহেষখলা সড়কসহ বেশ কয়টি সড়কও ডুবে গেছে। এদিকে লেঙ্গুরা ইউনিয়নের চৈতা গ্রামের আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার বিকেলে গণেশ্বরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্তও পানি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ জাকির হোসেন ১৫টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের জন্য জেলা প্রশাসন ১৫ টন জিআর চাল বরাদ্দ করেছে। এছাড়া স্থানীয় এমপি মানু মজুমদার শুক্রবার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। এদিকে বৃষ্টির পানিতে দুর্গাপুর পৌর শহরের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে- উকিলপাড়া, মাছবাজার, মোক্তারপাড়া, বাগিচাপাড়া প্রভৃতি। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে এসব মহল্লার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা, ধরলা ও রত্নাইসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানির প্রবল তোড়ে বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। গত বুধবার সকালে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ওয়াবদা বাজার এলাকায় ধসে যাওয়া রাস্তাটি দু’দিনেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এতে একটি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধরলার ¯্রােতে জেলা সদরের কুরল, বনগ্রাম, কর্ণপুর ও মোগলহাটে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এদিকে তিস্তা নদীর উপকূলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২০ হাজার পরিবার। বুধবার কুলাঘাট ইউপির ওয়াপদা বাজার এলাকার ৩০ মিটার পাকা সড়ক নদীগর্ভে চলে গেছে। দু’দিন অতিবাহিত হলেও সড়কটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি । জানা যায়, দক্ষিণ শিবের কুঠি গ্রামের ওই স্থানে একটি কালভার্ট ছিল। পাকা করার সময় সেটি সড়কটির নিচে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে কালভার্টটি দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ধরলা নদীর পানি বেড়ে যায়। এই পানি বের হতে না পেরে তার চাপ পড়ে সড়কটিতে। একপর্যায়ে বুধবার সড়কটির অন্তত ৩০ মিটার অংশ ভেঙ্গে নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। চর শিবের কুঠি গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন, গফুর মিয়া ও আলতাফ হোসেন বলেন, এমনিতেই ‘এখন বর্ষাকাল, চলাচলের অনেক সমস্যা। তার ওপর রাস্তার কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আমরা দুর্ভোগে পড়েছি। সড়কটি দ্রুত মেরামত করা না হলে আমাদের আয়-উপার্জনের জন্য গ্রামের লোকজন কোথাও যেতে পারবে না।’
×