ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২৮ জুন ২০১৯

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে গঠিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিএফআইইউ’র উদ্যোগে রবিবার সুইস ব্যাংকে টাকা বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে। তবে সংস্থাটি মনে করে, সুইস ব্যাংকে টাকা বাড়ার বিষয়টি শুধু অর্থ পাচার নয়। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের ডিপোজিটের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। তাই সুইস ব্যাংকে টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি ঢালাওভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কিছু নেই বলে মনে করে সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, সুইস ব্যাংকে টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে এসেছে। আগামীকাল রবিবার বিএফআইইউ থেকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের এই টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি কিন্তু শুধু অর্থ পাচার নয়। ইউরোপেরর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও লেনদেন বেড়েছে। এছাড়া ওখানে প্রবাসীরা ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ ডিপোজিট রাখছেন। এসব কারণে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি বলেন, এরপরও কেন টাকা বাড়ছে সে ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হবে। এদিকে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রানে অর্থায়ন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সরকারের এই কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। যা গত ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা বেশি। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিবেদন গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ করা হচ্ছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। তবে ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশী মুদ্রায় এক সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য এখন ৮৬ টাকা ৪৩ পয়সা। ২০১৬ সালের তুলনায় অবশ্য ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার পরিমাণ কমে গিয়েছিল। সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বছরেও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। যেমন ২০১৩ সালে বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, সুইস ব্যাংকগুলোয় কালো টাকা জমা রাখা হয়। তবে এসএনবির প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত কর ফাঁকি দিতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয়। তবে অনেকক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ব্যাংকগুলোয় অর্থ জমা রাখেন। বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অর্থ লেনদেন করতে হয় এমন ব্যবসায়ীরাও সেখানে টাকা জমা রাখতে পারেন। গত কয়েক দশক ধরে সুইজারল্যান্ড বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের নিরাপদে অর্থ রাখার ব্যবস্থা করে আসছে। তাদের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের তথ্য গোপন করার আইন অত্যন্ত কঠোর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক চাপে কিছু কিছু তথ্য প্রকাশ করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোন দেশের নাগরিকদের কত অর্থ জমা আছে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। তবে একক এ্যাকাউন্টের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। এদিকে, সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকের সংখ্যা ২৪৮টি। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই বাংলাদেশীদের টাকা রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাধারণত নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। তারই কিছুটা প্রমাণ সুইজারল্যান্ডের তথ্য থেকে পাওয়া গেছে। এছাড়া গত বছর আমদানি ব্যয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি ব্যয়ের একটি অংশ পাচার হয়ে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে জমা হয়েছে হয়তো। তবে বাংলাদেশ থেকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়লেও ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকের জমার পরিমাণ কমেছে। সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থ জমার পরিমাণ কমার কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভারত সরকারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের এ-সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারত সরকার সে দেশের অনেক অর্থ পাচারকারীর তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করেছে। তবে বাংলাদেশের বেলায় তেমনি ঘটেনি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত একটি চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হতে পারে।
×