ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের মানুষ এখন উন্নয়নের রূপরেখা ঠিক করছে

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৮ জুন ২০১৯

 গ্রামের মানুষ এখন উন্নয়নের রূপরেখা ঠিক করছে

সমুদ্র হক ॥ উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন নিচের ধাপ থেকে ওপরের দিকে যাচ্ছে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ধারণার বাস্তবায়নে গ্রামের মানুষ চাহিদার তালিকা করছে। তারাই তৈরি করছে গ্রামের উন্নয়নের রূপরেখা। যা বাস্তবায়ন করছে সরকারের লোকাল গবর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)। পূর্বের সফলতার ধারাবাহিকতায় এলজিএসপির তৃতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম চলমান। শেষ হবে ২০২১ সালে। দেশের ৪ হাজার ৫শ’ ৫০ ইউনিয়নের সঙ্গে এই প্রথমবার ৮ বিভাগ থেকে দুইটি করে ১৬ পৌরসভা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এলজিএসপির তৃতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫শ’ ৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারের বরাদ্দ ৩ হাজার ১শ’ ৫৩ কোটি টাকা। যা বরাদ্দের ৫৭ শতাংশ। বাকি ৪৩ শতাংশ বিশ্ব ব্যাংকের। দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন এগিয়ে নিতে এলজিএসপি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মাঠপর্যায়ের উন্নয়ন এখন বহির্বিশ্বের মানুষের চোখে পড়ছে। এলজিএসপির বগুড়ার কার্যক্রমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সফলতার শতভাগ অর্জন নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুফিয়া নাজিম বললেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়নের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাদ্দ মেলে। প্রতিটি স্কিম গ্রহণ করা হয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওয়ার্ড সভায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। প্রকল্প প্রস্তাবগুলো উপজেলা পরিষদের সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নে নারীর সরাসরি ভূমিকা থাকে। প্রকল্পের বৈঠকে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। নারীর মতামত না থাকলে সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না। এভাবে নারীর ক্ষমতায়নে এলজিএসপি বড় ভূমিকা রেখে এসডিজির পঞ্চম অভীষ্ট পূরণে সহযোগী হয়েছে। এই অভীষ্টে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের সমতা শতভাগ অর্জন করতে বলা হয়েছে। বগুড়ার ১শ’ ৮ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ৯০টির পারফর্মেন্স খুব ভাল। বগুড়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১শ’ ৮ ইউপিতে মৌলিক থোক বরাদ্দ (বেসিক ব্লক গ্রান্ট বা বিবিজি) দেয়া হয় ২১ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। বরাদ্দের অর্থ প্রতিটি ইউনিয়নের ব্যাংকের হিসাবে যোগ হয়েছে। এই বরাদ্দে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। বগুড়ায় ২ হাজার ৮১টি স্কিম বাস্তবায়িত হয়েছে। এলজিএসপির অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখে। প্রথমে দেয়া হয় মৌলিক থোক বরাদ্দ (বিবিজি)। এই অর্থে উন্নয়নের সফলতার ভিত্তিতে পরে আরেকটি বরাদ্দ মেলে। যা দক্ষতাভিত্তিক বরাদ্দ (পারফর্মেন্স বেজ্্ড গ্রান্ট বা পিবিজি)। আশা করা হয়েছে চলতি বছর বগুড়ায় পিবিজির বরাদ্দে এগিয়ে থাকবে। উপপরিচালক সুফিয়া নাজিম জানালেন, সরকারের ‘আমার শহর আমার গ্রাম’ ধারণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসডিজিকে সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে উদ্ভাবনী উন্নয়ন স্কিম নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আর্সেনিক পরীক্ষার ভিত্তিতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সরবরাহ, শতভাগ বিদ্যুত ব্যবস্থা ও সোলার স্ট্রিট লাইট, কমিউনিটি ভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্ট, স্বল্প বিদ্যুতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ শহরভিত্তিক সব সুবিধা। প্রতিটি উন্নয়ন মনিটরিং ও অডিট করা হয় নিবিরভাবে। এ জন্য রয়েছে প্রজেক্ট ম্যানেজেমেন্ট ইউনিট। যারা হলেন, প্রতি জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক। সঙ্গে আছেন জেলা ফ্যাসলিটেটর (ডিএফ)। বগুড়ার জেলা ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) আশরাফুল জানান তৃতীয় পর্যায়ের কর্মসূচীর বাস্তবায়ন চলমান। ইউপির নানা কর্মসূচীর রাজস্ব সময়মতো জমা হয়েছে। অডিটে ৩৫ ইউপির বিরূপ মতামত ছিল। যার ৩২টির ত্রুটি মার্চে নিষ্পত্তি হয়েছে। বগুড়ায় সেলফ এ্যাসেসমেন্টে কর আদায়ের হার সন্তোষজনক। এলজিএসপির নীতিমালায় আছে যে, ইউনিয়নে অডিট আপত্তি থাকবে সেখানে বাৎসরিক বরাদ্দের ২৫ শতাংশ মিলবে। আপত্তি নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাকি ৭৫ শতাংশ দেয়া হবে। এভাবে প্রতি ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজে জবাবদিহিতা এসেছে। ইউনিয়নের ভাল কর্মকা-ে ৪০ নম্বর বরাদ্দ আছে। যে ইউনিয়ন পারফর্মেন্সে ৪০ নম্বর পাবে তাদের উন্নয়নে বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হবে। নিকট অতীতে গ্রামের কোন প্রসূতি রাস্তা এবড়ো থেবড়ো থাকায় হাসপাতালে পৌঁছতে পারত না। কখনও পথেই দুর্ঘটনা ঘটত। তারা এখন সময়মতো ম্যাটারনিটি সেন্টারে পৌঁছে। সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়। মা ও শিশু সুস্থ থাকে। একটা সময় এলাকার লোকজন সহজে উপজেলা সদরে ও জেলা সদরে সহজে পৌঁছতে পারত না। এখন পাকা সড়কে সব ধরনের যানবাহনে যে কোন সময় যোগাযোগ করতে পারে। শহরের মানুষ গ্রামে গেলে শহরের সব সুবিধাই কাছে পায়। এখন কি নেই গ্রামে! এলজিএসপি গ্রামগুলোকে শহরের সব সূযোগ সুবিধার আওতায় দিচ্ছে। এলজিএসপি প্রথম পাইলট প্রকল্প করে সিরাজগঞ্জ। ২০০৬ সালে প্রথম পর্যায়ের এলজিএসপি শুরুর পাঁচ বছরের সফলতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায় চলমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলজিএসপির অর্থ বরাদ্দ দেন। সফলতার এই ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের (২০৩০ সাল) মধ্যে এসডিজি অর্জনেও সক্ষম হবে।
×