ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৮ জুন ২০১৯

 নুসরাত হত্যা  মামলার  সাক্ষ্যগ্রহণ  শুরু

বাংলানিউজ ॥ ফেনী জেলার সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। অভিযোগ গঠনের ছয়দিনের মাথায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এদিন তিনজন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করবেন। এ মামলার চার্জশীট জমা দেয়ার আগে ৭ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। সব আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে; যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সব আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয়। নুসরাতের ভাই মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান, নুসরাতের বান্ধবী নিশাত ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দেবেন। এর আগে ২০ জুন মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে আদেশ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাষ্ট্রপক্ষ মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন করে অভিযোগ গঠনের জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন। আসামিদের আইনজীবীরা এ মামলাটি নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের বৈধতা বিষয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা মামলার ধারার (নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৪ (১) ও ৩০ ধারা) বিষয়ে আদালতের আপত্তি জানান। ‘পরে আসামিরা তাদের বক্তব্য শুনতে বিচারকের কাছে আর্জি জানান। আদালত একে একে ১৬ আসামির বক্তব্য শোনে। তাদের মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দী প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন।’ তিনি বলেন, আদালত তাদের আবেদন মামলার নথিতে সংযুক্ত করে। পরে আসামিদের পক্ষে আইনজীবীদের বক্তব্য শোনে আদালত। আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে। বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলাটির বিচার কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী হানিফ মজুমদার বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাপ প্রয়োগ করে আসামিদের জবানবন্দী নিয়েছেন। আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করলেও আদালত তাতে সাড়া দেয়নি। আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। এ জন্য উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে। গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে গেছেন নুসরাত। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গবর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দী গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনের মামলায় গ্রেফতার সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন কারাগারে রয়েছে।
×