ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিপক্ষ আজ দক্ষিণ আফ্রিকা

সেমির সম্ভাবনা জোরালো করতে চায় শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৮ জুন ২০১৯

সেমির সম্ভাবনা জোরালো করতে চায় শ্রীলঙ্কা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপের আটটি দল যেখানে এখন পর্যন্ত সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বুনছে, সেখানে আগেভাগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে নাম থাকলেও বরাবরের মতো এবারও প্রোটিয়ারা লজ্জাজনক পারফর্মেন্স দেখিয়েছে চলমান ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। ৭ ম্যাচে মাত্র এক জয়ে ৩ পয়েন্ট লাভ করা দক্ষিণ আফ্রিকার এখন বাকি দুই ম্যাচ মুখ রক্ষার জন্য খেলা এবং মর্যাদা নিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চ ত্যাগ করতে আজ শ্রীলঙ্কাকে হারাতে চায় তারা। কিন্তু আগের ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে নিজেদের দিকে ক্রিকেট বিশ্বের আকর্ষণ ফিরিয়ে আনা লঙ্কানদের এখন সেমিতে ওঠার স্বপ্ন পূরণের মিশন। সে জন্য বাকি ৩ ম্যাচেই জয় তুলে নিতে পারলে সম্ভাবনাটা অনেক উজ্জ্বলতর হবে। কিন্তু হেরে গেলে শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে পড়বে। তাই আজ উজ্জীবিত লঙ্কানরা হারাতে চায় কোণঠাসা দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ম্যাচটি আজ চেস্টার লি স্ট্রিটে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে। এ মাঠে চলতি আসরে আজই প্রথম ম্যাচ হওয়াতে অবশ্য উভয় দলের জন্য আজ উইকেট একটা রহস্য হয়ে থাকবে। সেই রহস্য যে দল দ্রুত ভেদ করতে পারবে, জিতবে হয়তো তারাই। একটি জয় বদলে দিতে পারে অনেককিছু। বিশ্বকাপের আগে কিংবা শুরুর দিকে কেউ ঘুণাক্ষরেও শ্রীলঙ্কা দলের দিকে মনোযোগ দেয়নি। কোন বিশ্লেষণেই তারা গুরুত্ব পায়নি সাম্প্রতিক সময়ে নাজুক পারফর্মেন্সের কারণে। ক্রিকেটের মাঠে যেন একেবারেই দরিদ্র এসে হানা দিয়েছে লঙ্কান দলটির ওপর। হতশ্রী অবস্থা নিয়েও এবার বিশ্বকাপে বিধাতার আশীর্বাদে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি করে ২ পয়েন্ট অর্জন করে লঙ্কানরা। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় ম্যাচ দুটি। তবে তাদের ভয়াবহ অবস্থাটা বোঝা গেছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রবল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। উভয় ম্যাচে বেহাল চেহারা ফুটে উঠেছিল লঙ্কানদের। তবে ইংলিশদের হারিয়ে আবার কিছু করে দেখানোর সামর্থ্য দেখাতে পেরেছে তারা। সেই জয়েই সেমির রেসে টিকে গেছে সবমিলিয়ে ৮ দল। সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে সবার। সবচেয়ে বেশি সেদিক থেকে সুবিধায় আছে শ্রীলঙ্কা। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পাওয়া লঙ্কানরা আজ জিততে পারলেই এগিয়ে যাবে সেমির পথে আরও একধাপ। তাদের চেয়ে পেছনে পড়ে যাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সবমিলিয়ে ৩ ম্যাচ বাকি থাকার কারণে তারা অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রোটিয়াদের কাছে হেরে গেলেও বাকি দুই ম্যাচে জিতলে ক্ষীণ সম্ভাবনা টিকে থাকবে। তাই আজ জানপ্রাণ দিয়েই লড়বে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া দলটি। দিমুথ করুনারতেœর জন্য তা হবে স্বপ্নময় একটি ব্যাপার। কারণ ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলার পর তিনি ওয়ানডে দলেই ছিলেন না, এবার প্রথম ৫০ ওভারের দলটির নেৃতত্ব নিয়ে বিশ্বকাপ দিয়ে ফিরেছেন। করুনারতেœর মূল অস্ত্র অভিজ্ঞ পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। ইংলিশদের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়টি এসেছে মালিঙ্গার ভয়ানক পেস আক্রমণে। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন সেদিন নুয়ান প্রদীপ। তাই আপাতত পেস বোলিং নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তাই নেই লঙ্কানদের। যত ঝামেলা ব্যাটিং নিয়ে। তবে ইংলিশদের বিপক্ষে মিডলঅর্ডারের চিন্তাটা কমিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ৮৫ রানের যে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন তাতেই পরে মালিঙ্গার পেসে জয় এসেছিল। টপঅর্ডাররা এখন ভাল করতে পারলেই লঙ্কানরা হয়ে উঠবে দুরন্ত। আর এই মুহূর্তে প্রোটিয়ারা যে সমস্যায় পতিত, সেখান থেকে তাদের উঠে আসাটাই হবে আশ্চর্যের। নবীন ভ্যান ডার ডাসেন ছাড়া ব্যাট হাতে ফর্মে নেই অন্যতম নির্ভরতা হাশিম আমলা। কুইন্টন ডি কক ও ফাফ ডু প্লেসিসের ব্যাট একেবারেই অধারাবাহিক। এইডেন মার্করামও নিজেকে জুতসইভাবে প্রমাণ করতে পারেননি, ঝড় দেখা যায়নি ডেভিড মিলারের ব্যাটেও। এ কারণে এখন সম্মান নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করাটাই তাদের চ্যালেঞ্জ। সেখানেও অভিজ্ঞ পেসার ডেল স্টেইন নেই, ইনজুরির কারণে অনেক আগেই দেশে ফিরে গেছেন এ ডানহাতি। লুঙ্গি এনগিদি ইনজুরিতে পড়েছিলেন, ফিরে এসে হয়ে গেছেন নিষ্প্রভ। আবার কাগিসো রাবাদাও ফর্মে নেই। তাই আজ অনেক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে প্রোটিয়া একাদশে। পেস আক্রমণে দেখা যেতে পারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস এবং রাবাদা বা এনগিদির বদলে আসতে পারেন ব্যুরেন হেনড্রিকস। ব্যাটিংয়ে আবার ফিরতে পারেন জেপি ডুমিনি। প্রোটিয়ারা দুর্বল হয়ে পড়লেও এবার বিশ্বকাপে বেশ আলো ছড়িয়েছেন অভিজ্ঞ লেগস্পিনার ইমরান তাহির ও ডাসেন। এ দু’জনই মূল ভরসা আজ তাদের জয়ের ধারায় ফেরার জন্য। তাছাড়া গত বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রোটিয়ারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ সময়ের মধ্যে ১৬ ম্যাচে ১৪টি জিতেছে প্রোটিয়ারা। তবে বিশ্বকাপে ৫ বার মুখোমুখি হয়ে ৩ বারই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, ১টি টাই হয় এবং একটিতে জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপেও লঙ্কানরাই জিতেছে। সার্বিক ওয়ানডে পরিসংখ্যান বলছে পরস্পরের মধ্যে হওয়া ৭৬ ওয়ানডেতে ৪৩ বার জিতে এগিয়ে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার জয় ৩১টি। আজ চেস্টার লি স্ট্রিটে দু’দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে অবশ্য সবাই শ্রীলঙ্কাকেই এগিয়ে রাখছে চলমান আসরের পারফর্মেন্স বিবেচনায়। তবে এই ভেন্যুতে চলতি বিশ্বকাপে এখনও কোন ম্যাচ না হওয়াতে উভয় দলের জন্য উইকেট বড় একটি রহস্য হবে। সেই রহস্য যে দল দ্রুত ভেদ করতে পারবে জয়ের হাসি তারাই হাসতে পারবে।
×