ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে হারাতে আত্মবিশ্বাসী মিরাজ

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৮ জুন ২০১৯

 ভারতকে হারাতে আত্মবিশ্বাসী মিরাজ

মিথুন আশরাফ ॥ এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য সামনে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে। দলটি ভারত। যে দলটি উড়েই চলেছে। সামনে পড়া কোন প্রতিপক্ষকেই যেন পাত্তা দিচ্ছে না বিরাট কোহলির দল। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও দারুণ শুরু করেছে। ২ জুলাই বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে ভারত। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটিতে ভারতই থাকছে ফেবারিট। কিন্তু একটি দিনের খেলা। দিনটিতে যে দল ভাল খেলবে তারাই জিতবে। বাংলাদেশ দলের স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের তাই আত্মবিশ্বাস আছে, ভারতকেও হারাতে পারবে বাংলাদেশ। এখন ক্রিকেটাররা ছুটিতে আছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর পাঁচদিন ছুটি পেয়েছেন টাইগাররা। ছুটি যে যার মতো করে কাটাচ্ছেন। সাউদাম্পটন থেকে দল বার্মিংহ্যামে চলে গেছে। ক্রিকেটাররা বার্মিংহ্যামে গিয়ে ছুটি কাটাচ্ছেন। কেউ আছেন বার্মিংহ্যামে। কেউ আবার লন্ডনে ছুটি কাটাতে গেছেন। কেউ পরিবার নিয়ে ফ্রান্স ঘুরছেন। মিরাজ আছেন বার্মিংহ্যামেই। ছুটি কাটিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ভারতের বিপক্ষে নামার অপেক্ষায় আছেন টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে মিরাজ বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে অনেকগুলো ম্যাচ আমরা খুব কাছে গিয়ে হেরেছি। বলব ভাগ্যের ছোঁয়া সেভাবে পাইনি। আল্লাহ সহায় হলে এই ম্যাচটা (২ জুলাই) আশাকরি জিততে পারব। হ্যাঁ, অবশ্যই ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ। তারা দাপটের সঙ্গে খেলছে, ভাল খেলছে। আমরা এসব ভেবে চাপ নিচ্ছি না। স্বাভাবিকভাবে খেলা খেললেই ভাল কিছু হবে আশাকরি।’ ভারতের বিপক্ষে খেলা হলেই এখন উত্তাপ চরমে পৌঁছায়। উন্মাদনা থাকে। সেই উত্তাপ, উন্মাদনা, উত্তেজনা চাপ তৈরি করে। কিন্তু চাপ নিয়ে যে ভারতের বিপক্ষে জয় মিলবে না তা টাইগারদের ভাল করেই জানা আছে। ভারতের বিপক্ষে জিততে হলে সব বিভাগেই ভাল করতে হবে। শুধু যে কোন এক বিভাগে ভাল করলে জেতা অসম্ভবই বলা চলে। ভারত যে এ বিশ্বকাপে সেরা শক্তির দলগুলোর একটি। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে জিতে বাংলাদেশ। প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে লড়াই করতে নেমেই ভারতকে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। এরপর বিশ্বকাপে আর জয় মিলেনি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে হারের পর গত বিশ্বকাপে ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে হারে বাংলাদেশ। সেই হারটিতে বিতর্ক জড়িয়ে ছিল। সেই থেকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই উত্তেজনা তৈরি করে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে খেলতে এসে ওয়ানডে সিরিজ হারে ভারত। কিন্তু এরপর আর ভারতকে হারানো যায়নি। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে জয়ের একেবারে কাছে গিয়েও পারা যায়নি। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে হার হয়। গত বছর দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হার হয়েছে। কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও জয় মিলেনি। ভারতের কাছে ২০১৫ সালের সিরিজ জয়ের পর আর কোন জয় মিলেনি। এবার যখন আবার বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ, তার আগেও তৈরি হচ্ছে উত্তেজনা। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা আছে ভারতের। আর তাই ভারতের তরফ থেকে তেমন উত্তেজনা নেই। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই উত্তাপ আরও বেড়েছে যখন সাকিব বলে দিয়েছেন, ভারতকে হারানো সম্ভব। তিনি জানিয়েছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছে। ওদের হারাতে আমাদের অনেক ভাল খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমাদের কাজটি সহজ হবে না। অভিজ্ঞতা সাহায্য করে বটে তবে অভিজ্ঞতাই শেষ কথা নয়। ভারতকে হারাতে হলে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে আমাদের। তাদের এমন সব ক্রিকেটার আছেন যারা একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। যেটা বললাম, নিজেদের সেরাটা দিতে হবে আমাদের এবং আমাদের সামর্থ্য আছে জয়ের।’ শুধু সাকিবই নন, এ মুহূর্তে ভারতের সাবেক স্পিনার সুনীল যোশী হচ্ছেন বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ। তিনিও ভারতকে হারানোর সম্ভাবনা দেখছেন। তিনিতো হুঙ্কারই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) কিন্তু এখন আর কোন ফেলনা দল নই।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে আমরা কতটা ভাল তা ইতোমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছি। আমরা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের মাঠের পাশাপাশি তাদের মাঠে গিয়েও হারিয়েছি। গত তিন বছরে তিনবার আমরা ভারতকে হারানোর খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। প্রতিটি দলের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা থাকে। ভারতেরও দুর্বল জায়গা আছে। যে কোন ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য একটি বলই যথেষ্ট। আবার বলছি, আমরা কিন্তু তিনবার ভারতকে হারানোর খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমরা কিন্তু এখন আর কোন ফেলনা দল নই।’ যোশীর এমন বক্তব্য টাইগারদের মধ্যে প্রেরণা হয়েই ধরা দিচ্ছে। ভারতের খুব বেশি সতর্ক থাকার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাপ যা থাকবে ভারত ক্রিকেটারদের ওপরই। হারলেই যে দুয়োধ্বনি শুনতে হবে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা সেমিফাইনালে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটিতে অবশ্যই জিততে চাইবেন। কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত হারও হয় তাহলেও সেরা দলের কাছে হার হবে। সমালোচনায় তেমন বিধতে হবে না। তাই চাপ কমই থাকবে টাইগারদের। বল হাতে ৬ ম্যাচে সবচেয়ে কম ৫.৪৫ ইকোনমিতে সবচেয়ে বেশি ৫৭ ওভার বোলিং করে ৫ উইকেট নেয়া মিরাজ যেমন বলেছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে চাপের কিছু নেই। আগের ম্যাচগুলোতে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি, আমরা সেভাবেই খেলব। দু’টো ম্যাচ আছে, আমরা যদি চিন্তা করি আমরা জিততেই হবে ওরকম না, আমাদের স্বাভাবিক থাকতে হবে। আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা শেষ দু’টা-তিনটা ম্যাচ যেভাবে জিতেছি আমাদের ঐ প্রক্রিয়াতে থাকতে হবে। তাহলে আমাদের জন্য ভাল সুযোগ হবে বলে আমার কাছে মনে হয়। আমাদের ম্যাচ জিততেই হবে বা সেমিফাইনালে উঠতেই হবে এ রকম না। আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হবে। আর যদি আমাদের ভাগ্য সহায় হয়, আল্লাহ যদি আমাদের রহম করে অবশ্যই ইনশাল্লাহ আমরা ভাল কিছু করব।’ ভারতের বিপক্ষে জিততে হলে স্পিনারদেরও ভাল করতে হবে বলে জানান মিরাজ, ‘আমরা যদি জিততে পারি ভারতের বিপক্ষে তবে এটা বিশ্বকাপে আমাদের জন্য বড় পাওয়া হবে। পরবর্তীতে আমাদের জন্য অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। তাই আমাদের স্পিনারদেরও অনেক বড় অবদান রাখতে হবে। আমাদের রান সেভ করতে হবে। সাকিব ভাই-মোসাদ্দেক ভাই বা আমি, যেই বোলিং করি না কেন আমাদের রোলটা গুরুত্বপূর্ণ মাঝের ওভারগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’ সাত খেলায় ৭ পয়েন্ট বাংলাদেশের। অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের নিচে আছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান। বড় দলগুলোই বাংলাদেশের নিচে আছে। ব্যাট হাতে বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচের ৪ ইনিংসে ব্যাটিং করে ১০.০০ গড়ে ৩০ রান করা মিরাজ তাই বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ছুটি আছে আমাদের। অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। আসলে প্রত্যেকটা ম্যাচই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিশ্বকাপে। আমাদের যে দল, এখন পর্যন্ত আমরা খুবই ভাল ক্রিকেট খেলছি। শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়াও আরও যে বড় দলগুলো আছে তারা কিন্তু পয়েন্ট টেবিলে আমাদের নীচে রয়েছে। আমরা পাঁচ নম্বরে আছি। বড় চারটা দলের পরই আমরা অবস্থান করছি। আমাদের দলে সবাই ভাল ক্রিকেট খেলছে। তাই এখন আমরা ভাল অবস্থায় আছি।’ এই ভাল অবস্থা আরও তরতাজা দেখাবে যদি ভারতকে হারানো যায়। বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব, বোলিং কোচ যোশীর মত ভারতকে হারাতে আত্মবিশ্বাসী মিরাজও।
×