ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে কোটি টাকা হাতিয়ে বন্ধ এনজিও

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৮ জুন ২০১৯

 রাজশাহীতে কোটি টাকা  হাতিয়ে বন্ধ এনজিও

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকায় গড়ে তোলা একটি বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উপজেলার কাঁকনহাট রেল স্টেশনের পাশেই ‘লাল-সবুজ’ নামের এনজিওটির প্রধান কার্যালয়। রেলের বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা এনজিওটি গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। এর বিপরীতে সদস্যদের মাঝে ৩০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। এনজিওটি বন্ধ হয়ে গেলেও, গ্রাহকদের থেকে নেয়া সেই আমানত ফেরত দেয়া হয়নি। তবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় এখন অব্যাহত রয়েছে। কয়েক বছর আগে এনজিওটি চালু করেছিলেন আবদুল্লাহিল কাফী। তিনি বর্তমানে পৌরসভার কাউন্সিলর। তবে গত কয়েক মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ। এনজিওটির প্রায় ৬০০ গ্রাহকের অভিযোগ, তাদের কোটি টাকা আত্মসাত করে ‘লাল-সবুজ’ বন্ধ হয়ে গেছে। সরেজমিনে কাঁকনহাটে গিয়ে দেখা যায়, রেল স্টশনের পশ্চিম পাশে রেলের জমিতেই টিনশেড একটি বাড়ি তৈরি করেছেন কাফী। এই বাড়িটিই কথিত এনজিও লাল-সবুজের কার্যালয়। বাড়ির সামনে মাটিতে পড়ে আছে লাল-সবুজের একটি সাইনবোর্ড। কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। লাল-সবুজ নামের সেই এনজিওটির মালিকের নাম আব্দুল্লাহিল কাফী ওরফে কাফী। তার বিরুদ্ধে চরমপন্থী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে কাঁকনহাট পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কাঁকনহাট পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে সংগঠনবিরোধী কর্মকা-ের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। গত ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে ‘সর্বহারা’ কাফী আত্মসমর্পণ করেছেন। এদিন দেশের ১৪ জেলা থেকে মোট ৫৯৫ সর্বহারা ক্যাডার আত্মসমর্পণ করেন। কাঁকনহাটের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রাহকদের টাকা মেরে কোটিপতি হয়েছেন কাফী। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাডার হওয়ায় লাল-সবুজে জমা রাখা টাকা এখন গ্রাহকরা ভয়ে চাইতে পারছেন না। কিন্তু ভয়ভীতি দেখিয়ে কাউন্সিলর কাফী ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন ঠিকই। এখন গত্যান্তর না দেখে আত্মসাত করা গ্রাহকদের টাকা যেন ফেরত দিতে না হয় ও নিজের নামে বিভিন্ন মামলা থেকে রেহাই পেতে নানা কৌশল করেছেন। কাঁকনহাট পৌর মেয়র আবদুল মজিদ বলেন, একজন সর্বহারা ক্যাডার পৌরসভার কাউন্সিলর, এটা নিয়ে আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। কাফী সব সময় আমাদের হুমকি-ধমকিতে রাখেন। তার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার কেউ কখনও পাইনি। মেয়র বলেন, সর্বহারা কাফী আত্মসমর্পণ করলেও এটা আসলে একটা অভিনয়। কারণ, আত্মসমর্পণের পরও তার আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওই আশঙ্কায় এখন সত্য হয়েছে। গ্রাহকদের আমানত গ্রহণ করে এখন তালাবদ্ধ লাল-সবুজ। এ নিয়ে বিভিন্ন চাপ সামাল দিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাফী আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে তারা যেন আমানত ফেরত পান সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাফীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা আছে। তিনি আত্মসমর্পণ করলেও কোন অস্ত্র জমা দেননি। তাই তাকে আত্মসমর্পণের দিন গ্রেফতার করা হয়নি। আত্মসমর্পণ করলেও এখনও তার কার্যক্রম নজরদারি থাকবে। অভিযুক্ত কাউন্সিলর কাফী সর্বহারা হিসেবে আত্মসমর্পণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। লাল-সবুজের গ্রাহকদের আমানতের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে এই কাউন্সিলর বলেন, কারও টাকা আত্মসাত করা হয়নি, বরং আমারই ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকদের মাঝে পড়ে আছে। তুলতে পারছি না। আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই এনজিও বন্ধ করা হয়েছে।
×