ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যকৃত প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২৮ জুন ২০১৯

যকৃত প্রতিস্থাপন

কোন কোন ক্ষেত্রে বিশ্বমানের চিকিৎসা এখন সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশেই। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সফলভাবে। ২০ বছর বয়সী একজন কলেজ ছাত্র গত দু’বছর ধরে ভুগছিল লিভার সিরোসিসে, যা দুরারোগ্য। এ ক্ষেত্রে সুস্থ মানুষের আংশিক যকৃত সংগ্রহ করে রোগীর লিভারে প্রতিস্থাপনই উত্তম বিকল্প চিকিৎসা। তবে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের যকৃত তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে ম্যাচিং থাকা চাই। এক্ষেত্রে রোগীর যকৃত প্রতিস্থাপনে এগিয়ে আসেন ছেলেটির মা। বিএসএমএমইউ-এর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক ও নার্সের একটি টিম সফলভাবে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টায় এই জটিল অপারেশনটি সম্পন্ন করে বিনামূল্যে। উল্লেখ্য, লিভার প্রতিস্থাপনে রোগের ধরন অনুযায়ী অস্ত্রোপচারে কমপক্ষে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। বিদেশে তো আরও বেশি। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক বৈকি। ইতোপূর্বে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুরারোগ্য ক্যান্সারের চিকিৎসায় সফলভাবে বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষায়িত চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিল হদরোগের সফল অপারেশনও এখন সম্ভব হচ্ছে দেশেই। শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানের। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আগামীতে আর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। লিভার বা যকৃতের একটি প্রাণঘাতী ব্যাধির নাম হেপাটাইটিস-বি। অদ্যাবধি এর কোন নিরাময় বা সুচিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই রোগটির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে তাতেও রোগীর নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবনে। সম্প্রতি বাংলাদেশের দু’জন গবেষক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসায় অধিক কার্যকর ও উন্নত ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। তাদের একজন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং দ্বিতীয় জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব। তাদের দীর্ঘ গবেষণায় উদ্ভাবিত ওষুধের নাম ‘ন্যাসভ্যাক’. যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদ্বয়ের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হলো, হেপাটাইটিস-বি’র বিরুদ্ধে মানুষের নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর পাশাপাশি লিভার প্রতিস্থাপন তো আছেই। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মুহাম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল গবেষক এমন একটি কিট আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে ঘরে বসেই প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব। তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটির দামও খুব কম। বাংলাদেশী টাকায় মাত্র দেড় শ’ টাকা। উল্লেখ্য, ক্যান্সারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তবে চক্ষু, লিভার, কিডনি, হৃৎপি-সহ আনুষ্ঠানিক কিছু জটিল ও দুরারোগ্য চিকিৎসায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ও নীতি-নৈতিকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা ‘মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-২০১৭’-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করেছে। এটি আইনে পরিণত হলে আগামীতে আর এই সমস্যা থাকবে না। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থেই এর আবশ্যকতা রয়েছে।
×