ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আখাউড়া-সিলেট রেলপথ, ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৭ জুন ২০১৯

  আখাউড়া-সিলেট রেলপথ,  ১৬ হাজার কোটি টাকার  প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রেল দুর্ঘটনার তদন্তে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা এবং নিহতদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। বুধবার রেল দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে এসে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল এই রেল বিভাগ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলপথের উন্নয়নে হাত দিয়েছে। তবে ভাল সেবা দিতে রেল বিভাগের সময় লাগবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত হয়েছে। আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করতে ইতোমধ্যেই ১৬ হাজার ১৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করেছে। দ্রুত তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সর্বশেষে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কারও গাফিলতি কিংবা কাজে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে মন্ত্রী কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের দেখতে যান। এরপর কুলাউড়ার বরমচালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেন রেলমন্ত্রী। আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ১৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব সেতুর ওপর ট্রেন পারাপারে ‘ডেড স্টপ’ (সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, এরপর পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে) ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ‘ডেড স্টপ’-এর আওতাধীন রয়েছে। মনু সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকায় রয়েছে। এসব ব্যাপারে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার সজিব কুমার মালাকার বলেন, এই সেকশনের বেশিরভাগ সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নং সেতুতে ‘ডেড স্টপ’ জারি করা হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুই রবিবারের দুর্ঘটনার কারণ কী না তা এখনই বলা যাবে না। পাওয়া তথ্য মতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়ীকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস নামের ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন গড়ে ১২ বার চলাচল করে। এসব যাত্রায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশন নিয়ে সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম পথে ভ্রমণ করেন। রেল পথে যারা ভ্রমণ করেন তাদের বেশির ভাগ রেলকে বেছে নেন নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনার কারণে এই রেলপথে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথও সেতুর পাশাপাশি নড়বড়ে বগী দ্বারা ট্রেন চলাচলের কারণে গত ৬ মাসে সিলেট আখাউড়া রেল সেকশনে ৮ দফা ট্রেনের বগী লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রেলমন্ত্রীর ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন নিজস্ব সংবাদদাতা মৌলভীবাজার থেকে জানান, রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল রেল স্টেশনের কাছে আন্তঃনগর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান রেল মন্ত্রণালয় দায়ী নয়। অতিরিক্ত যাত্রী, নাট বোল্টু খোলা ও কারিগরি ত্রুটি ছিল কিনা এ খতিয়ে দেখবে ২ তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তদন্ত রিপোর্ট যা আসবে তা আপনার সামনে উপস্থাপন করা হবে। যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই রেল বিভাগ ব্যবস্থা নিবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় রেল বিভাগের উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ সরকারের আমলে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে। দৃশ্যমান নানা উন্নয়ন হয়েছে ও হচ্ছে। এ সময় স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে বরমচাল স্টেশনে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন স্টপিজের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আরও স্টপিজ বাড়ানোর কথাও বলেন। ঢাকা সিলেট রেললাইন ডুয়েল গেজ হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেল এ দুর্ঘটনার জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থ বলা যাবে না। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যক আহতকে ১০ হাজার ও নিহতকে ১ লাখ টাকা দেয়া হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনও আর্থিক সহযোগিতা করবে। এরপর মন্ত্রী নিহত কুলাউড়ার আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহত মনোয়ারা পারভীনের বাড়িতে যান এবং তাদের সান্ত¦না দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। একই সময়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
×