ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রদলের দু’গ্রুপে ফের সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাংচুর

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২৬ জুন ২০১৯

ছাত্রদলের দু’গ্রুপে ফের সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় আবারও ছাত্রদলের দুগ্রপের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুর, মারামারি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বয়সসীমা বাতিলের দাবিতে ক’দিন ধরে আন্দোলনরত ও এ দাবির বিপক্ষে অবস্থানকারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বয়সসীমা বাতিলের পক্ষের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সংগঠনের ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপিকে আবারও ১ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে দাবি আদায় না হলে বৃহস্পতিবার থেকে আবারও কঠোর কর্মসূচী পালনের হুমকি দেয়। উল্লেখ্য, সোমবারও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ ও ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আগের দিনের মতো মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে জড়ো হয়ে বয়সসীমা বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন ও ১২ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। স্লোগানের ভাষা ছিল এমন- ‘সিন্ডিকেটের দালালদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশন’ ‘সিন্ডিকেটের দেয়া নির্বাচন মানি না, মানব না’ ইত্যাদি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলর নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে আগে থেকে বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান করা কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠনের পক্ষের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিত-ার এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করে অপরপক্ষের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার পাশাপাশি ভাংচুর চালায়। তারা বিএনপি কার্যালয়ের টেবিল-চেয়ার ও সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুরের করে। এ ছাড়া কার্যালয়ের ভেতরে দুটি জানালাও ভাংচুর করা হয়। বিএনপি কার্যালয়ে আগে থেকে থাকা নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কার্যালয়ের বাইরে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহত একজন ছাত্রদল কর্মী মাহবুব ইমতিয়াজ অভিযোগ করেন, ডাকসুর জিএস প্রার্থী অনিক এবং এজিএস প্রার্থী সোহেল তার ওপর ভাঙ্গা কাঁচ নিক্ষেপ করে। এতে সে ছাড়াও আন্দোলনকারী আরও ক’জন ছাত্রদল নেতাকর্মী রক্তাক্ত হন। আর বিএনপি কার্যালয়ে আগে থেকে অবস্থান করা ছাত্রদল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে বিক্ষুব্ধ ক’জন ছাত্রদল নেতাকর্মী কার্যালয়ে প্রবেশ করে তা-ব চালায়। এরপর তারা প্রধান ফটকে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুসহ শতাধিক নেতাকর্মী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচী পালন করায় কার্যালয়ের ভেতরে বিএনপি নেতাকর্মীদের যাওয়া-আসা বন্ধ ছিল। দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বয়স সীমা বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন ও ১২ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বুধবার কর্মসূচী স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়ে দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে আবার কঠোর কর্মসূচী পালনের কথা জানিয়ে বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। তারা সেখান থেকে চলে আসার পর পর সেখানে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ককটেল দুটি একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ায় কারের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন এলাকা ত্যাগ করার আধাঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলে আন্দোলনকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় তারা। এ ছাড়া কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেও স্লোগান দেয়। মিছিল শেষে তারা আবার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি ইকতিয়ার রহমান কবির সাংবাদিকদের জানান, বয়সসীমা তুলে দিয়ে নির্বাচনের পুনঃতফসিল না হলে কাউন্সিল হতে দেয়া হবে না। বুধবারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পরের দিন বৃহস্পতিবার কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে তার জন্য বিএনপি সিন্ডিকেট দায়ী থাকবে। আমরা ঘোষিত তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিলের দাবি জানাচ্ছি। আর যে ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে যারা ছিলেন তারা চেয়ার, টেবিল, সিসি ক্যামেরা এগুলো ভেঙ্গেছে। আমরা যখন ভেতরে প্রবেশ করতে যাই তখন ভেতরে যারা ছিল তারা কাপ-পিরিচ ছুড়ে মেরেছে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে। এ সময় তিনি তার হাত দেখিয়ে বলেন, এই যে দেখেন আমার হাতেও লেগেছে। তিনি বলেন, বুধবার মানবাধিকার দিবস। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা চাই, এই সঙ্কটের সমাধান। এজন্য আমরা ১ দিনের জন্য কর্মসূচী স্থগিত রাখছি। আমরা আশা করব, এর মধ্যে বিএনপি নেতারা সমস্যার সমাধান করবে। ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি মামুন বিল্লাহ বলেন, বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীদের হামলায় আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমাদের দাবি মানা না হলেও বৃহস্পতিবার থেকে আবারও আন্দোলন করব। এর আগে বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আমাদেরই ছোট ভাই, আমরা আশা করবো সিনিয়র নেতারা যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা মেনে নিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবে। প্রসঙ্গত, বয়সসীমা বাতিল করে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে সোমবারও নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা। ২ ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচী পালনকালে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে লাঞ্ছিত করে বিক্ষুব্ধরা। এ ছাড়া ছাত্রদলের অপর পক্ষের ৫ নেতাকেও মারধর করে তারা। আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে চলবে কাউন্সিল। ইতোমধ্যে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, আচরণবিধি ও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। বয়সসীমা নির্ধারণ না করে নির্দিষ্ট মেয়াদে ধারাবাহিক কমিটি গঠন করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটির জন্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২০০০ সালের পরের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তারোপ করে। আর বয়সসীমা উঠিয়ে দেয়ার দাবিতে ১১ জুন থেকে বিক্ষোভ করে আসছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। ওইদিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে তারা। এরপর ক’দিন বিরতি দিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু ও কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপি নেতাদের নাজেহাল করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ২২ জুন ১২ ছাত্রদল নেতাকে সংগঠনের বহিষ্কার করা হয় এবং ২৩ জুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ১৫ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে তফসিল ঘোষণা করে। আর ২৪ জুন ছাত্র দলের কাউন্সিলে নির্বাচনের জন্য ৫৭৫ জন ভোটারের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ছাত্রদলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে ৫ জন করে ভোটার করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৭ সদস্য বসে খসড়া তালিকা ঠিক করে।নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ৭ দফা আচরণবিধিও প্রণয়ন করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোন প্যানেল হবে না। প্রার্থী এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। পোস্টার, ব্যানার ও গণমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, আপ্যায়ন ও কোন ধরনের উপহার সামগ্রী দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার, সংবাদ সম্মেলন ও টকশোতে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবে না। তবে প্রার্থী ভোট প্রার্থনার জন্য ভিজিটিং কার্ড বা সাদা-কালো সাইজের লিফলেট ব্যবহার করতে পারবে। নির্বাচন যারা করবে তাদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটি ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে রাজীব আহসান সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। প্রথমে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হলেও পরে ৭৩৬ জনকে কমিটির বিভিন্ন পদ দেয়া হয়। আর ওই কমিটি গঠনের পরও পদবঞ্চিতরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে।
×