ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেমির আশায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৬ জুন ২০১৯

সেমির আশায় বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্বপ্নটা বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবার সেমিফাইনাল খেলার আশা নিয়ে ইংল্যান্ড অভিযানে যায়। তবে সে জন্য বাংলাদেশের পথটা বেশ বন্ধুর ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট পাওয়া টাইগারদের। পরবর্তী দুই ম্যাচে শক্তিশালী ভারত ও পাকিস্তানকে হারাতে হবে এবং ওপরের সারির দলগুলোর ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে মূলত ইংল্যান্ডের বাকি তিন ম্যাচে দু’টি হার প্রার্থনা করতে হবে। সেটি না হলে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট কোনভাবেই বাকি ম্যাচগুলো থেকে ১১-এর বেশি হওয়া যাবে না। এই শক্ত সমীকরণটা আরও কঠিন হতে পারে টাইগাররা একটি ম্যাচ হারলেই এবং ইংল্যান্ড, ভারত একটিতে জিতলে। সেক্ষেত্রে ভারত ও ইংল্যান্ডের বাকি সব ম্যাচে পরাজয়ের প্রার্থনা করতে হবে বাংলাদেশকে। তাই সেমিতে ওঠার আশা সফল করতে হলে সবচেয়ে নিরাপদ হবে পরবর্তী দুই ম্যাচেই জয় তুলে নেয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণ শুরু হয়েছিল এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অভিযাত্রা। সেই স্বপ্নযাত্রায় বড় ছেদ পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছে হার এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায়। তবে এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুণভাবে হারিয়ে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। আর সবার আলোচনার বাইরে থাকা শ্রীলঙ্কা অপ্রত্যাশিতভাবে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়াতে স্বপ্নটা আবার উজ্জ্বলতা পেতে শুরু করে। তবে সে জন্য সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছিল অপরিহার্য। সেই চ্যালেঞ্জে টাইগাররা উতরে যায় ৬২ রানে জিতে। সেমির স্বপ্ন তাই এখন অনেকটাই উজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের। ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এখন এগিয়ে আছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। শীর্ষ চারটি দল নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের পরেই পঞ্চম স্থানে এখন টাইগাররা। মঙ্গলবার লর্ডসে যদি অস্ট্রেলিয়া জিতে যায় সেক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে ১২ পয়েন্ট নিয়ে। কারণ বাকি দুই ম্যাচ জিতলেও ১১ পয়েন্ট হবে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আশা করতে হবে পরবর্তী ম্যাচগুলো থেকে যেন ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অন্তত দু’টি দল কোনভাবেই ১১ পয়েন্ট পেরোতে না পারে। কারণ বাংলাদেশের বড় হুমকি হয়ে আছে এই মুহূর্তে লঙ্কানরাও। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট তাদের। বাকি ৩ ম্যাচেই জিতে গেলে বাংলাদেশ দল সবগুলো ম্যাচ জিতলেও সমস্যায় পড়বে। তবে শ্রীলঙ্কা দলটি বাকি ৩ ম্যাচের একটিতে হারলেও সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রেও সমীকরণ একটিই- পরের দুই ম্যাচেই জয় পেতে হবে বাংলাদেশকে। এত সমীকরণের প্রয়োজন হবে না যদি ইংল্যান্ড পরের তিন ম্যাচেই (মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিসহ) হেরে যায়। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর ইংলিশরা অবশ্য নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে ১০ বার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়ে জিততে পারেনি এক ম্যাচেও। সমীকরণটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের এক নম্বর দল ইংল্যান্ড। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশের হুমকি হতে পারে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান। এ দুটি দল সবগুলো ম্যাচ জিতে গেলে পয়েন্টে ছুঁয়ে ফেলবে মাশরাফিদের। ৬ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৬ ও পাকিরা ৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট পেয়েছে। বাকি ম্যাচ তিনটি উভয় দল জিতলে শ্রীলঙ্কা ১২ ও পাকিস্তান ১১ পয়েন্ট হয়ে যায়। তখন দুই ম্যাচেই জিততে হবে বাংলাদেশকে। তবে একটি করে ম্যাচ উভয় দল হারলেও বাংলাদেশ এক জয় তুলে নিয়েও আশা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রানরেটের হিসেবে গড়াতে পারে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের রানরেট রেসে থাকা ৮ দলের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। সেখানে অবশ্য কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ। তাই জেতার সঙ্গে সঙ্গে রানরেট বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। নাহলে এ তিনটি দল সব ম্যাচ না জিতে যদি সমান ৯ পয়েন্ট হয়ে যায় এবং ওপরের সারির ৪ দলের একটি ৯ পয়েন্ট ছুঁতে ব্যর্থ হয় (শুধু ইংল্যান্ড হতে পারে সেই দল, কারণ তাদের ম্যাচ নেই এ তিন দলের বিপক্ষে), তখন ক্যারিবীয়দেরও সুযোগ থাকবে বাকি ৩ ম্যাচ জিতলেই। তখন সবাইকে টপকে তারাই খেলবে সেমি। কারণ ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও নেট রানরেটে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে উইন্ডিজ দল। তাই বাংলাদেশের বাকি দুই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ইংল্যান্ডের আরও অন্তত দুটি এবং শ্রীলঙ্কার একটি হারই কাম্য হবে। তবেই নিরাপদে সেমিতে উঠতে পারবে টাইগাররা। তবে একটি ম্যাচও হেরে গেলে অনেক সমীকরণের জটিলতায় পড়তে হবে এবং নেট রানরেট বাজে হওয়ার কারণে কাটা পড়ার সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের। কিন্তু ক্ষীণ সম্ভাবনাটাও থাকবে সেক্ষেত্রে। তখন ইংল্যান্ডের ৩, শ্রীলঙ্কার ২, উইন্ডিজের ১ ও পাকিস্তানের ১ ম্যাচ হারের প্রার্থনা করতে হবে। তবে ইংল্যান্ড, ভারত ১টি করে ম্যাচ জিতলেই বাংলাদেশের দুই ম্যাচই জিততে হবে।
×