ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ২০ বছরের যুবকের লিভার প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৬ জুন ২০১৯

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ২০ বছরের যুবকের লিভার প্রতিস্থাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার ২০ বছরের এক যুবকের লিভার প্রতিস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জনরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগকে সহায়তা করেছে হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়েটিক বিভাগ। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে এ প্রতিস্থাপনটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অনেক টাকার ব্যাপার ছাড়াও লিভার প্রতিস্থাপন খুবই জটিল একটি অস্ত্রোপচার। ওই যুবককে আংশিক লিভার দান করেছেন তার ৪৭ বছর বয়সী মা। লিভারদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই সুস্থ আছেন। প্রতিটি লিভার প্রতিস্থাপন করাতে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকে। মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডাঃ সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জুলফিকার রহমান খান, এ্যানালজেসিয়া এ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম আখতারুজ্জামান ও ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডাঃ পি বালা চন্দ্র মেনন। হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে শল্য চিকিৎসক টিমে ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ মোহছেন চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ বিধান চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইফউদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নূর-ই-এলাহী। আর রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন ডাঃ ওমর সিদ্দিকী, ডাঃ মোহাম্মদ ইমরুল হাসান খান, ডাঃ মোহাম্মদ মশিউর রহমান, ডাঃ রাসেল মাহমুদ, ডাঃ আব্দুল্লাহ মোঃ আবু আইউব আনসারি, ডাঃ সারওয়ার আহমেদ সোবহান, ডাঃ মোঃ নাজমুল হক, ডাঃ এস এম মোর্তজা আহসান, ডাঃ জাবিউল ইসলাম, ডাঃ মোঃ আবদুল কাইউম, ডাঃ মোঃ আরিফুজ্জামান, ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান নূর, ডাঃ মোস্তফা মামুন ওয়ারিদ, ডাঃ এ কে আজাদ, ডাঃ সবিতা রানা, ডাঃ আজফার বিন আনিস, ডাঃ মোঃ ইমরান আলী। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট চালু ও ২০ বছর বয়সী যুবকের জটিল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিনামূল্যে সম্পন্ন করার বিষয়টি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। রোগী ও লিভারদাতা রোগীর মা দুজনকেই আমি দেখেছি। তারা ভাল আছেন। তারা যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান সেজন্য দোয়া করবেন। তিনি আরও বলেন, যে দেশের একজন রোগীর অপারেশনের বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পর্যন্ত খোঁজ-খবর রাখেন সেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা অবশ্যই এগিয়ে যেতে বাধ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হবেই। তিনি বলেন, দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট চালু হওয়ায় এ ধরনের রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার সংখ্যা কমে আসবে। অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, চলতি বছরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠার পরপরই জটিল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিনামূল্যে করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেটা ছিল আমাদের জন্য একটি মহতী স্বপ্ন ও বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই স্বপ্ন, বাস্তবতা ও বাস্তবায়নের মেলবন্ধন ঘটাতে প্রধান সৈনিকের ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসেন হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জুলফিকার রহমান খান। অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে জটিল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিনামূল্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বের এবং পরবর্তী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসাসেবা চালু হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্রম বিকাশমান আধুনিক, উন্নত, চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এটা আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন ও শুভ সূচনা। অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া আরও জানান, বাংলাদেশের লিভারের বিভিন্ন রোগের সমস্যা একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি কোন রোগীর লিভার সিরোসিস হয়ে যায় তাহলে তার একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। এই চিকিৎসাটি বাংলাদেশে করতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়, বিদেশে কোটি টাকা খরচ হয়। আরও বড় কথা দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যাদের টাকা আছে এরকম পাঁচ শতাধিক রোগী প্রতি বছর বিদেশে গিয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে থাকেন। আর যারা পারেন না তারা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুকে মেনে নিতে বাধ্য হন। ডাঃ জুলফিকার রহমান খান বলেন, ২০ বছর বয়সী একজন যুবক গত ৫ বছর ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। হঠাৎ একদিন তার পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তবমি ও রক্ত পায়খানা ইত্যাদি সমস্যাও ছিল। তার জন্ডিসও ধরা পড়ে। পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে ২০১৭ সালে ঐ রোগীর লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। তার লিভার আক্রান্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। একে বলে ক্রিপ্টোজেনিক লিভার সিরোসিস। ২০ বছরের এই যুবকের বাবা একজন পেশকার। এই যুবকের মায়ের বয়স ৪৭ বছর। তিনি তার ছেলেকে আংশিক লিভার দান করতে সম্মত হন। এরপর চলতি মাসের ১৫ জুন ওই যুবককে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জুলফিকার রহমান খানের অধীনে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ২৪ জুন ওই যুবকের মায়ের কাছ থেকে আংশিক লিভার সংগ্রহ করে তার ছেলের লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন সম্পন্ন করা হয়।
×