ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন বাংলাদেশীসহ নব্য জেএমবির ৪ জঙ্গী কলকাতায় গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৬ জুন ২০১৯

তিন বাংলাদেশীসহ নব্য জেএমবির ৪ জঙ্গী কলকাতায় গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ইসলামিক স্টেট (আইএস) অনুসারী তিন বাংলাদেশীসহ চার নব্য জেএমবি জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ কলকাতার শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে তাদের গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে আইএস নথি। আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী তাদের মুখপত্র আমাখ নিউজে বাংলায় এক বিবৃতিতে, খুব শীঘ্রই বাংলায় তারা আসছে-এই ধরনের ঘোষণা দেয়ার পর কলকাতায় ধরা পড়ল নব্য জেএমবির চার জঙ্গী। বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ-দুই বাংলাতেই জঙ্গী হামলার জন্য ছক কষছিল এবং এ জন্য তারা ফের সংগঠিত হচ্ছিল বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। কলকাতায় তিন বাংলাদেশী নব্য জেএমবি গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর কলকাতার পুলিশ এসটিএফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে ঢাকার গোয়েন্দারা। ইসলামিক স্টেট (আইএস) অনুসারী বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী তিন নব্য জেএমবির জঙ্গীরা হচ্ছে মহম্মদ জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, মামুনুর রশিদ, মহম্মদ শাহিন আলম ওরফে আলামিন এবং রবিউল ইসলাম। রবিউল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের নয়াগ্রামের বাসিন্দা। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে শিয়ালদহ স্টেশনের পার্কিং এরিয়া থেকে মহসিন ও মামুনুরকে গ্রেফতার করে। দুই জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলামিন ও রবিউল ইসলামের খোঁজ পেয়ে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর নব্য জেএমবির চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে-দুই বাংলাতেই নব্য জেএমবি ফের নতুন করে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, আইএস-এর প্রত্যক্ষ সাহায্যে জঙ্গী হামলার জন্য মাঠে নেমেছে নব্য জেএমবি। আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী তাদের মুখপত্র আমাখ নিউজে সম্প্রতি বাংলায় এক বিবৃতি জারি করে দাবি করে, খুব শীঘ্রই বাংলায় তারা আসছে। এই ঘোষণা দেয়ার পর কলকাতায় আইএস মতাদর্শী চার জেএমবির জঙ্গী গ্রেফতার হলো। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ছবি ও ভিডিওসহ মোবাইল ফোন, আইএস মতাদর্শের বেশ কিছু প্রচার পুস্তক ও পত্রিকা পাওয়া গেছে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ রাজ্যসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে টাকা সংগ্রহ করে সেগুলো জঙ্গী কার্যকলাপে ব্যবহার করা হতো। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে জঙ্গী নিয়োগ ও জিহাদী কার্যকলাপ চালাত তারা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জিহাদ সংক্রান্ত প্রচুর ডিজিটাল নথিও পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়ার আবেদন জানাবে বলে জানিয়েছেন এসটিএফ-এর জয়েন্ট সিপি শুভঙ্কর সিংহ। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ তিন বাংলাদেশীসহ নব্য জেএমবির চার জঙ্গীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, গ্রেফতারকৃত তিন বাংলাদেশীসহ নব্য জেএমবির চারজনই জঙ্গী সংগঠন জঙ্গী জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। এ কারণে তিন বাংলাদেশী জঙ্গী ভারতে পালিয়ে এসে গা ঢাকা দিয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নব্য জেএমবির জঙ্গীরা ফের বাংলাদেশে পালানোর ছক কষেছিল। কিন্তু জঙ্গী হামলার আগেই তারা পুলিশের জালে আটকা পড়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কলকাতার পুলিশ এসটিএফ বলছে, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ছিল নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। সেই সময় অবিভক্ত জেএমবি ছিল। অবিভক্ত জেএমবির সুরা কমিটির সদস্য হাতকাটা নাসিরুল্লাহ ছিল খাগড়াগড় মডিউলের অন্যতম সদস্য। আদর্শগত মতপার্থক্যের কারণে নাসিরুল্লাহ এবং জেএমবির বেশ কিছু সদস্য আইএস মতাদর্শী হয়ে নব্য জেএমবি তৈরি করে। ভারত থেকে বাংলাদেশ আসার পর সম্প্রতি নাসিরুল্লাহ বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) এর একজন কর্মকর্তা জানান, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার পর অন্তত দুই মাস আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস- বাংলায় লেখা, ‘শীঘ্রই আসছি, ইনশাল্লাহ...ইসলামিক স্টেটকে সমর্থনকারী’ একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি পোস্টারের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণা দেয়ার দুই মাস পর চলতি মাসে তিন বাংলাদেশীসহ চার নব্য জেএমবির জঙ্গী কলকাতায় ধরা পড়ার পর কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে ঢাকার সিটিটিসিসহ গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে। এরপর রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান ও মালিবাগে পৃথক স্থানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গীরা। এতে পৃথক দুই স্থানে ছয়জন পুলিশ আহত হন। এখন আবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় তিন বাংলাদেশীসহ চার নব্য জেএমবির জঙ্গী ধরা পড়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকাসহ নজরদারি করাসহ জঙ্গীবিরোধী চলমান অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×