ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিমেন্টের বস্তাপ্রতি উৎপাদন খরচ বাড়বে ৪২ টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৬ জুন ২০১৯

সিমেন্টের বস্তাপ্রতি উৎপাদন খরচ বাড়বে ৪২ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিকল্প নেই সিমেন্টের। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে কোন সুখবর নেই এ শিল্পের জন্য। সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর ও ৩ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর ধার্য করা হলে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ (বস্তাপ্রতি) বেড়ে যাবে ৪২ টাকা। এতে সিমেন্টের বিক্রয়মূল্য বাড়লে বিঘিœত হবে দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রগতি। আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে ভ্যাট আইন। এ আইনে সিমেন্ট খাতে যে করারোপ করা হয়েছে তাতে একদিকে যেমন আবাসন খাতে প্রভাব পড়বে, একই সঙ্গে সরকারের অবকাঠামো খাতের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়বে ব্যয়। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে চাপে থাকা মধ্যবিত্তের বোঝা হিসেবে আরেকটি পণ্যের নাম যুক্ত হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি ও উদ্যোক্তাদের হিসাবে, নির্মাণ খাতের উপকরণের মধ্যে গত বছর ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে সিমেন্ট খাতে। ’১৭ সালে দেশের সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় দুই কোটি ৭০ লাখ টন। ’১৮ সালে তা বেড়ে হয় তিন কোটি ১৩ লাখ টন। দেশে ৩১ কোম্পানির ৪০ প্লান্টে সিমেন্ট উৎপাদন হচ্ছে। কারখানাগুলোর উৎপাদনক্ষমতা রয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিডব্লিউ রিসার্চের ‘বাংলাদেশ সিমেন্ট মার্কেট রিপোর্ট ১৭’-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সরকারী অবকাঠামো উন্নয়নে সিমেন্টের ব্যবহার হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। ব্যক্তি উদ্যোগে অবকাঠামো নির্মাণে তা ব্যবহৃত হচ্ছে ৪০ শতাংশ। আবাসন খাতে ব্যবহার ২৫ শতাংশ। সিমেন্ট শিল্প মালিকদের হিসাবে, দেশের মোট সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা বছরে তিন কোটি টন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পসহ আবাসন খাতের সব প্রকল্পে দেশের উৎপাদিত সিমেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুত, স্থানীয় সরকার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার অধীনে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। কিন্তু প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর ও ৩ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর ধার্য করা হয়েছে। এতে অবকাঠামো উন্নয়নের উড়ন্ত গতি ব্যাহত হবে। সরকারের বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় অনেক বাড়বে। জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে ভ্যাট আইন। এ আইনে সিমেন্ট খাতে যে করারোপ করা হয়েছে, তাতে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ৪২ টাকা বাড়বে। এতে একদিকে যেমন আবাসন খাতে প্রভাব পড়বে, একই সঙ্গে সরকারের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয়ও বাড়বে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে চাপে থাকা মধ্যবিত্তদের ওপর খড়গ পড়ার তালিকায় আরেকটি পণ্যের নাম যুক্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে সিমেন্ট সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করলে এ অতিরিক্ত ৫ শতাংশের জন্য ব্যাংকঋণ করতে হবে। ব্যাংকঋণের জন্য ব্যাংকের সুদের হার বাড়বে। এই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ পরবর্তীতে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। কারণ এই শিল্পে শুধু গ্রান্ডিং ও মিস্কিং করা হয়। এটি শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর শিল্প। মূল্য সংযোজনের হার খুবই কম। ফলে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আগাম কর সমন্বয়ের সুযোগ নেই। ফলে দেখা যায়, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ, সরবরাহ পর্যায়ে ৩ শতাংশসহ মোট ৮ শতাংশ অগ্রিম করের দায় সমন্বয় করার জন্য ৩২ শতাংশ মোট মুনাফা করতে হবে। এছাড়া ব্যাগপ্রতি দাম বাড়বে ৪২ টাকা। বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর (এটি) অতিরিক্ত ৫ শতাংশ। এর ফলে এখন মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এ ছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-র ধারা সি অনুসারে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ উৎসে কর্তনকৃত অগ্রিম আয়কর এবং স্থানীয় সরবরাহ পর্যায়ে ৩ শতাংশ উৎসে কর্তনকৃত অগ্রিম আয়কর ন্যূনতম আয়কর হিসেবে গণ্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এ খাতে ‘ট্যাক্স অন ট্যাক্স’ হয়ে যাবে। আর এতে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে দাম বাড়বে ৪২ টাকা। কারণ ভ্যাট ও অগ্রিম কর আরোপ করায় সিমেন্টের এক টন কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বাড়বে ৮৫০ টাকা। এক টনে ২০ ব্যাগ সিমেন্ট হয়। সে হিসাবেই প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে দাম ৪২ টাকা বাড়ে। তবে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হলে এ খরচ কমে আসবে। এ বিষয়ে আবাসন খাতের মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান খাত সিমেন্ট সেক্টরে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রতিবস্তা সিমেন্টের দাম বাড়বে ৪২ টাকা। এতে আবাসনখাতে প্রভাব ফেলবে, বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসনখাত চাঙ্গা করার জন্য যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে তা থেকে আমরা বঞ্চিত হব। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসন খাতে নির্মাণশিল্পের উপকরণের ওপর আমদানি কাঁচামালে অগ্রিম কর আরোপ করায় বাজেটে দেয়া সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। একই সঙ্গে দেশের সাধারণ ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করে এ খাতকে গতিময় করবে। তিনি বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন, শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর ধার্য করা হবে না। আমরা তার এ বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চাই।
×