ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরের আশিকাটি মাদক কারবারিদের স্বর্গরাজ্য

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৬ জুন ২০১৯

চাঁদপুরের আশিকাটি মাদক কারবারিদের স্বর্গরাজ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর, ২৫ জুন ॥ চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের চাঁদখাঁর দোকান, পূর্ব হোসেনপুর, পশ্চিম হোসেনপুর, বাবুরহাট, মুন্সিহাটের একাংশ, রালদিয়াসহ আরও এলাকায় এখন মাদককারবারিদের স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছে। প্রভাবশালী একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রশাসনের নজরে আসছে না। ২০ থেকে ২৫ জনের ওই চক্রটির কথানুযায়ী মাদক বিক্রি ও বিক্রির টাকার ভাগ না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে হয় খুচরা মাদক (ইয়াবা ট্যাবলেট) বিক্রেতাদের। মাদককারবারিদের কারণে এলাকার যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি আশিকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমন এক মাদক বিক্রেতার স্বীকারোক্তি নিলে বেরিয়ে আসে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের নাম ও মাদক বিক্রির বর্তমান হালচিত্র। মাদকের সঙ্গে জড়িত সেবনকারী ও বিক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ আটক হলেও ছাড়া পেয়ে পুনরায় একই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। বিক্রেতাদের অর্থ জোগান ও প্রশাসনের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন মর্মে নেপথ্যে কাজ করছেন বিভিন্ন পরিচয়দানকারী প্রভাবশালী চক্র। তারাই বিক্রেতাদের অর্থ জোগান দেন এবং লাভের অংশ নিয়ে যান। চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রদান করেন ওই ইউনিয়নের ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রেতাদের অন্যতম হোসেনপুর গ্রামের ছাত্তার ঢালীর ছেলে মুসলিম ঢালী। মুসলিম ঢালী স্বীকারোক্তিতে বলেন, সে মাদক বিক্রি ছাড়া অন্য কোন কাজ করে না। তার প্রবাসী ভাই এর কাছ থেকে প্রতিমাসে ২-৩ হাজার টাকা খরচের জন্য পান। ইয়াবা সেবন ও বাকী চলার জন্য মাদক বিক্রির কাজ করেন। গত কয়েকমাস আগে সে প্রতিদিন কমপক্ষে ২শ’ থেকে ৩শ’ ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি কমেছে প্রতিদিনি ৭০-৮০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করেন। মুসলিম আরো বলেন, তার এই কাজে প্রভাবশালীদের মধ্যে চাঁদখাঁর দোকান এলাকার মাহবুব গাজী, পূর্ব হোসেনপুর গ্রামের রাজিব ও সেলিম সার্বিক সহযোগিতা করেন। মাদক ক্রয় করার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে রাজিব যোগান দেয়। অনেক সময় রাজিবের চাঁদখাঁর দোকান অফিস থেকেই ইয়াবা সাপ্লাই দেয়া হয়। মাদকসহ প্রতারণা কাজে জড়িত অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছেন রাজিব জানান মুসলিম। মাদক বিক্রেতা সোলেমান গাজী, হামিম প্রধানিয়া ও প্রবাসী নজরুল ইসলামের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, মুসলিমসহ ওই ইউনিয়নের মাদক বিক্রেতারা শহরের ষোলঘর এলাকার চক্ষু হাসপাতালের বিপরীত এলাকার বাসিন্দা নয়নের কাছ থেকে তারা ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করতেন। এখনও মাঝে মাঝে ক্রয় করেন। তার কাছে না পেলে ক্রয় করতে পুরানো বাজারের মিলন নামে আরেক মাদককারবারির কাছ থেকে। পুরো ইউনিয়নে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম মুন্সির হাট-বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুমন, রালদিয়া এলাকার শাহজাহান প্রধানিয়ার ছেলে হামিম প্রধানিয়া, পূর্ব হোসেনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মালের ছেলে মাহবুব মাল, চাঁদখাঁর দোকান এলাকার হেলাল, ডিস ব্যবসায়ী পাভেল, চা দোকানি মোঃ সাইফুল, বাবুরহাট এলাকার মামুন মাল, অপু মাল, শাহ আলম ডাক্তার, পশ্চিম হোসেনপুর মৃত আবিদ মালের ছেলে পগু মাল। এলাকায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিবাদ ও স্বীকারোক্তি নেয়ার পর থেকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে আসছেন প্রভাবশারী ওই চক্রটি। তারা প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমনের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছেন। এই ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী ১৫ জুন চাঁদপুর মডেল থানায় মাদক বিক্রেতা রাজিব মৃধা, মাহবুব গাজী, পগু মাল ও ইউসুফ পাটওয়ারী নামে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি নম্বর : ৭৩৬। এলাকাবাসীর পক্ষে প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমন মাদকের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন। চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নাসিম উদ্দিন বলেন, গণঅভিযোগের ভিত্তিতে মডেল থানা পুলিশ গত এক সপ্তাহে তিনবার অভিযান চালিয়েছে। পুলিশের টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। সর্বশেষ ২০ জুন প্রত্যেক মাদক বিক্রেতার বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদের হুঁশিয়ারি করে দেয়া হয়েছে এবং থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
×