ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

পেনশন চালুর কথা বলে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২৫ জুন ২০১৯

 পেনশন চালুর কথা বলে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়

শ আ ম হায়দার, পার্বতীপুর থেকে ॥ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ দফায় প্রফিট বোনাস বিতরণের সময় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে ৯২ও ৯৬ হাজার টাকা করে ও তৃতীয় দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন প্রথা চালুর কথা বলে ৩০ হাজার করে ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা গ্রহণ করা হয় ১৫০ জনের কাছ থেকে। চাকরির খাতিরে ক্ষতিগ্রস্তরা নীরব থাকলেও এধরনের জুলুম ও দুর্নীতি একসময় ফাঁস হয়ে পড়ে। এ নিয়ে পেট্রোবাংলাসহ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা তথা খনির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে খনির উপ-ব্যবস্থাপক খান মোঃ জাফর সাদিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন মোঃ মোশররফ হোসেন সরকার (সার্ভে এ্যান্ড মাইন প্লানিং) অন্য ৪ সদস্য হলেন মুহাম্মদ সাইদুর রহমান (বিল), আরিফুর রহমান ব্যবস্থাপক (মেইন্ট্যানেন্স এ্যন্ড অপারেশন), জাহিদ আনোয়ার, ব্যবস্থাপক (পার্সোনেল), মোঃ শাফায়েত আলী মিয়া, উপ-ব্যবস্থাপক (ডিএলও) ও আব্দুল ওয়াহেদ (গাড়ি চালক ও সভাপতি, সিবিএ)। কমিটি ৯ জুন/১৯ তারিখে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কমিটি সুপারিশে বলেছে, কর্মকর্তা কর্মচারীরা জনপ্রতি বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯২ হাজার, ২০১৫ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেছেন। কর্মকর্তা কর্মচারীদের লিখিত বক্তব্য মোতাবেক পেনশন প্রথা চলুর জন্য প্রত্যেকে চাঁদা দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। আদায়কৃত চাঁদার টাকা কোনখাতে ব্যয় করা হয়েছে তা তারা জানে না। এ বিষয়ে স্বচ্ছতার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে উচ্চতর কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিসিএমসিএলের সুবিধাভোগী অংশীদারিত্ব তহবিলে প্রথম দফায় ১০ কোটি , ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই তহবিলে আরও ১০ কোটি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফা ১০ কোটি টাকার মধ্যে ১৪৭ জন যোগ্য সুবিধাভোগী অংশিদারিত্ব এবং ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসে কর্মরত ১২ কর্মকর্তা কর্মচারী (ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ) এবং প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ১৩১ জন কর্মকতা কর্মচারীর প্রত্যেকের নামে ৯২ হাজার টাকা ট্রাস্টি বোর্ডের চেকের মাধ্যমে নগদ, অবশিষ্ট ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২ শ’ ৬২ টাকা করে সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীর ব্যাংক একাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১০ কোটি টাকা অনুরূপভাবে বণ্টন করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১২ কোটি টাকা বিসিএসসিএলের সুবিধাভোগী অংশীদারিত্ব তহবিলের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এসময় প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ১২৯ কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রত্যেকের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ট্রাস্টিবোর্ডের চেকের মাধ্যমে নগদ প্রদান করা হয়। ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসে কর্মরত ১০ কর্মকর্তাকে একইভাবে চেকের মাধ্যমে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিসিএমসিএলের সুবিধাভোগী অংশীদারিত্ব তহবিল থেকে স্থানান্তরের সময় প্রাপ্য অর্থ তাদের স্ব স্ব ব্যাংক হিসাবে একাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। তবে তদন্ত কমিটির কাছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগ বিগত ২০১৪-১৫ , ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রফিট বোনাস গ্রহণকালে চাঁদা প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবুল কাশেম প্রধানীয়ার নির্দেশে ট্রাস্টি বোর্ডের আহ্বায়ক ও সদস্যগণ মিলে অর্থ ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফাইজউদ্দিন মৃধা, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও মোহাম্মদ নোমান প্রধানীয়া কর্তৃক কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে ইস্যুকৃত ট্রাস্টি বোর্ডের চেকে স্বাক্ষর নিয়ে ওই অর্থ প্রদান করেছেন বলে তারা তদন্ত কমিটিকে জানান। অপরদিকে কোন কোন কর্মকর্তা কর্মচারী সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চাঁদা নেয়া হয়েছে বলেও তার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তথাপিও ৩ কর্মকর্তা ট্রাস্টি বোর্ডে রক্ষিত চেক বইয়ের মুড়িসমূকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখিত ৩ বছরে সংশ্লিষ্টরা প্রফিট বোনাস গ্রহণকালে যে পরিমাণ অর্থ চাঁদা হিসেবে দিয়েছেন, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীরা সমুদয় টাকা ফেরত চেয়েছেন। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বড়পুকুরিয়া কোল মাইন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন এক বিশেষ সাধারণ কোম্পানির অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিসিএমসিএলের কর্মকর্তারা ছাড়াও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন। বিসিএমসিএলের আর্থিক অবস্থা ভাল এবং পেট্রোবাংলার কয়েকটি কোম্পানিতে পেনশন প্রথা চালু হয়েছে। তাই তাদের অনুরূপ এ কোম্পানিতেও পেনশন প্রথা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি আবুল কাশেম প্রধানীয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামানকে অনুরোধ জানানো হয়। এ সভায় ৩০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। যোগাযোগ করা হলে সোমবার সকালে খনির ব্যবস্থাপনা মোঃ ফজলুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন , এখন কয়লা খনিতে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। কয়লা উৎপাদন হচ্ছে পুরো উদ্যোমে।
×