ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে আমির ঝলক চলছেই

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২৫ জুন ২০১৯

  বিশ্বকাপে আমির ঝলক চলছেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের স্বপ্নটা এখনও বেঁচে আছে। সেমিফাইনালে ওঠার আশা টিকিয়ে রাখার পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমিরের। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো উদয় হয়েছিলেন, কিন্তু সতীর্থদের প্ররোচনায় ফেঁসে গিয়ে ৫টি বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে গিয়ে খেলা হয়নি ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার মঞ্চ বিশ্বকাপে। এবার বিশ্বকাপেও সাম্প্রতিক ফর্মহীনতায় প্রথমে দলেই সুযোগ পাননি। তবে সাবেক অনেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকদের চাপে আমিরকে দলে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সেই আমিরই এখন পাকিস্তানের অন্যতম স্বপ্ন সারথি। চলতি আসরে সেরা বোলার তিনি এখন পর্যন্ত। মাত্র ৫ ম্যাচ বোলিং করেই ধ্বংসাত্মক চেহারা দেখিয়ে শিকার করেছেন ১৫ উইকেট। সমান উইকেট পেয়েছেন ইংল্যান্ডের উইন্ডিজ বংশোদ্ভুত গতিতারকা জোফরা আর্চার ও অস্ট্রেলিয়ার গতি তারকা মিচেল স্টার্ক। তবে উভয়ে ৬ ম্যাচ করে খেলেছেন এবং গড়েও আমিরের চেয়ে পিছিয়ে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান দলের যদি বিশ্বকাপের সেরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার মতো ক্রিকেটার থেকে থাকেন, তিনি অবশ্যই আমির। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দলের অন্যদের তেমন ধারাবাহিকতা না থাকলেও আমির দুরন্ত গতিতেই ছুটে চলেছেন। ধারাবাহিকভাবেই তিনি বল হাতে নিজের ক্যারিশমা দেখিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রতিপক্ষরাও যথেষ্ট সমস্যায় পড়ছেন তাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে। সেরা ৫ উইকেটশিকারীর মধ্যে তৃতীয় সর্বনিম্ন ওভার (৪৬ ওভার) বোলিং করে সর্বাধিক ১৫ উইকেট আমিরের। আর এ সময় পর্যন্ত সেরাবোলিং ফিগারও তার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচটি ব্যাটিং দুর্গতির পরও আমিরের বোলিং ছিল সবচেয়ে আলোচিত। ৬ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আগুন ঝরানো বোলিংয়ে। তখন সবাই একটি কথাই মনে করেছেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, বাট ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট!’ এমনটা আমিরের বোলিং দেখে চিন্তা করাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, উইন্ডিজের বিপক্ষে নটিংহ্যামের ম্যাচটিতে আমির নামার আগে টানা ১৪ ওয়ানডে খেলে মাত্র ৫ উইকেট দখলে নিতে পেরেছিলেন। কোন ম্যাচেই একাধিক উইকেট পাননি। আর সেজন্যই তাকে বিশ্বকাপের ‘আপাতত’ ঘোষিত দল থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলার জন্য এ পেসারকে স্কোয়াডে রাখে পাক নির্বাচকরা। সেখানেও আমির খেলতে না পারায় তার বিশ্বকাপ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে বসেছিল। কিন্তু অনেক সাবেক ক্রিকেটারদের চাপে এবং ওই ওয়ানডে সিরিজে অন্য পেসারদের বেহাল অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত আমিরকে নেয়া হয়। আর সেই আমির দেখিয়েছেন বড় মঞ্চের তারকা তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ২৭ বছর বয়সে এসে। অথচ ১০ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর পেসার হয়ে ওঠার সব উপলক্ষ দেখিয়ে। ২০১০ সালেই থেমে যেতে হয়েছিল তাকে। স্পট ফিক্সিংয়ে ফেঁসে গিয়ে ৫ বছর ছিলেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। তবে ঠিকই ফিরে আসেন। কিন্তু আগের মতো ধারালো মনে হয়নি তাকে। নিজেকে ফিরে পেতে অনেক সংগ্রাম করেছেন। অবশেষে বিশ্বকাপে এসেই জ্বলে উঠেছেন নিজের সামর্থ্য দিয়ে। উইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জানিয়ে দেন তিনি ভয়ানক রূপ নিয়ে এসেছেন। পরের ম্যাচগুলোয়- ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২/৬৭, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫/৩০, ভারতের বিপক্ষে ৩/৪৭ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২/৪৯ তার বোলিং ফিগার। সবমিলিয়ে ৪৬ ওভার বোলিং করে ৪টি মেডেনসহ মাত্র ৪.৭৬ ইকোনমি রেটে ২১৯ রান দিয়ে ১৫ উইকেট। স্ট্রাইকরেটও ঈর্ষণীয়- ১৮.৪০। ইকোনমি রেট ও স্ট্রাইকরেটে চলতি আসরে শীর্ষ ১০ বোলারের চেয়ে এগিয়ে আমির। গড়টাও দুর্দান্ত- ১৪.৬০! শুধু এগিয়ে আর্চার ১৭.৯৩ গড় নিয়ে কিছুটা এগিয়ে। তবে আর্চার ও স্টার্ক ১৫ উইকেট নিতে পারলেও কম ম্যাচ খেলায় এগিয়ে আমির। এখনও চলতি আসরে পাকিস্তানের ম্যাচ বাকি ৩টি। আগের ৫ ম্যাচের প্রতিটিতে গড়ে ৩ উইকেট করে নিয়েছেন, সেটি অব্যাহত রাখতে পারলে আরও ৯ উইকেট ঝুলিতে জমা হওয়ার কথা আমিরের। সেক্ষেত্রে তিনি এক বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখাবেন। শহীদ আফ্রিদি ২০১১ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২১ উইকেট। এক আসরে সেটিই পাকদের পক্ষে সেরা বোলিং কীর্তি। কিংবদন্তি বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরাম ১৯৯২ বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। সেটি দ্বিতীয় সেরা। তৃতীয় সেরা বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক পেসার ইমরান খান ৭ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। এবার দু’জনকেই ছাড়িয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ আছে আমিরের।
×