ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরমচাল স্টেশনের কাছে সেতুটির দুরবস্থা আগেই জানানো হয়!

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৫ জুন ২০১৯

  বরমচাল স্টেশনের কাছে সেতুটির দুরবস্থা আগেই জানানো হয়!

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার, ২৪ জুন ॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ২ শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ছয় বগি লাইনচ্যুত হয়। আহতদের উদ্ধার করে কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেটের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর সন্ধ্যা সাতটায় ট্রায়াল রান চালু করা হয়। এর পর সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস চলাচলের মাধ্যমে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ আবার শুরু হয়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেলওয়ে স্টেশনের কাছে যে সেতুটি ভেঙ্গে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, সেই সেতুটির দুরবস্থা নিয়ে অনেক আগে থেকেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রবিবার গভীর রাতে ট্রেনটির ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাহাড়ি ছড়ার মধ্যে পড়ে ৪ জন নিহত হন, আহত হন অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী। এ সময় রেললাইনটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর পরই প্রথমে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তারাই পুলিশ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে খবর দেন। রাতেরবেলায় আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। নিজেদের বাড়ি থেকে লাইট এনে অনেককে উদ্ধার কাজে তৎপর হতে দেখা যায়। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে ইসলামাবাদ এলাকায় পৌঁছলে পেছন দিকের বগিতে বিকট শব্দ হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সামনে বড়ছড়া ব্রিজ ভেঙ্গে নিচে একটি বগি পড়ে যায়। আরও তিনটি বগি ব্রিজের পাশে উল্টে দূমড়েমুচড়ে পড়ে। অন্য আরও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের লোকাল ইনচার্জ দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ট্রেনে মোট ১৭ বগির মধ্যে ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ঘটনার পর পর এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের উদ্ধার কাজ চালায়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে সোমবার ভোরেই সাতটি সচল বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে দুর্ঘটনা কবলিত উপবন এক্সপ্রেস। কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মালেক এই তথ্য জানিয়েছেন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সেতু ভেঙ্গে আন্তঃনগর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ দুর্ঘটনায় চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন শাজাহান কবীর চৌধুরী। কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে মোট ৬৭ আহত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন মনোয়ারা পারভীন (৪৮), ফাহমিদা আক্তার (২০), সানজিদা আক্তার ও হবিগঞ্জের কাওছার আহমেদ। উল্লেখ্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তিতাস নদীর ওপর শাহবাজপুর ব্রিজটি গত ১৮ জুন ভেঙ্গে যায়। এতে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলা সম্পূর্ণ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আংশিক ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ট্রেনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। প্রতিটি ট্রেনে ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী চলাচল করে। ট্রেনের যাত্রী রহিমউদ্দিন জানান, তার বগিতে সিটের দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। রাত পৌনে বারোটার সময় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। শব্দের পর পরই ট্রেনটির বগি কাত হয়ে পড়ে যায়। এর পর আর কি হয়েছে তিনি জানেন না। অপর আহত যাত্রী কলিম জানান, ট্রেনের বগি বিকট শব্দে রাস্তার নিচে পড়ে গেলে অনেক যাত্রী তার ওপর পড়ে। তাদের চিৎকারে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। এ সময় তার পকেটে থাকা ৯ হাজার টাকা নিয়ে যায়। উদ্ধার কাজে আসা রেললাইনের পাশের গ্রাম নন্দনগরের বাসিন্দা ফারুক মিয়া (৪৫) বলেন, ব্রিজের সাইডে পাত দুইডা লাগানো থাকে, জোড়ার মধ্যে। এর এদিকে একটি নাট, ওদিকে আরেকটি নাট। আর কোন নাট নাই। গাড়ি যখন যায়, তখন খালি কাঁপে, ঝিলকা মারে। প্রায় সময়ই আমরা রেলের মানুষকে বলছি। এখানে একটা সমস্যা ঘটবে। আপনারা দয়া করে দেখেন, সমস্যাটা কী। এখনও আছে। এখান থেকেই সমস্যাটার শুরু হইছে। রাতে যখন ট্রেনটি যায় তখন অন্যদিনের চেয়ে কালকে গতিও একটু বেশি মনে হইছে। ব্রিজটার যেহেতু সমস্যা আছে, একটু আস্তে যাওয়া উচিত ছিল, বলেন একই গ্রামের নুরুল আমিন চৌধুরী। তিনিও দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেন।
×