ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আটকে গেল কপারটেকের তালিকাভুক্তি

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৫ জুন ২০১৯

 আটকে গেল কপারটেকের তালিকাভুক্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আর্থিক হিসেবে অসঙ্গতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আটকে গেল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তালিকাভুক্তি। আইন অনুযায়ী আইপিও টাকা সংগ্রহের ৭৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। রবিবার ছিল এই সময়ের শেষ দিন। কিন্তু প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জ শেয়ারটির অনুমোদন দেয়নি। তবে ডিএসইর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চাওয়া হয়েছে। ডিএসই কর্মকর্তারা বলছেন, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী কপারটেকের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। বিএসইসি গত বছরের ডিসেম্বরে কপারটেকের আইপিও অনুমোদন করার পর বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা তুলে নেয় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তারা তালিকাভুক্তও হয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আইপিওর প্রসপেক্টাসে ‘নিজেদের সুবিধামতো হিসাব’ দেখানোর অভিযোগ উঠলে ঢাকার বাজারে তাদের তালিকাভুক্তি আটকে যায়। অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয় আইসিএবিকে। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু তালিকাভুক্তি না হওয়ায় প্রযুক্তি খাতের এ কোম্পানি লেনদেনে যেতে পারেনি। ডিএসইর তালিকাভুক্তি আটকে থাকায় সিএসইতেও এ কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়নি। আইন অনুয়ায়ী সাবস্ক্রিপশন শেষ হওয়ার ৭৫ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত না হতে না পারলে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হয় কোম্পানিকে। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের সাবস্ক্রিপশন শেষ হয় ৬ এপ্রিল; সে অনুযায়ী রবিবার ছিল তাদের তালিকাভুক্তির শেষ দিন। কিন্তু রবিবারও ডিএসই সিদ্ধান্ত বদলায়নি জানিয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, যেহেতু সাবস্ক্রিপশনের পর ৭৫ দিনেও ডিএসই কপারটেককে তালিকাভুক্ত করল না, এখন আইন অনুযায়ী বলা যায়, তাদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি আটকে গেল। এখন কী হবে জানতে চাইলে ডিএসই কর্তৃপক্ষের একজন বলেন, এখন পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে বিএসইসির ওপর। বিএসইসি যা বলবে, ডিএসই তাই করবে। বিএসইসি যদি কপারটেককে তালিকাভুক্ত করার কথা বলে, ডিএসইসি তালিকাভুক্ত করে নেবে। লেনদেন শুরু হবে। আর বিএসইসি যদি ডিএসইসিকে সে ধরনের কোন নির্দেশনা না দেয়, তাহলে কপারটেক ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হবে না। লেনদেনও হবে না। সেক্ষেত্রে কপারটেককে বিনিয়োগকারীদের (আইপিও) টাকা ফেরত দিতে হবে। কপারটেকের ভাগ্য নিয়ে এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করতে চাননি বিএসইসির মুখপাত্র (নির্বাহী পরিচালক) সাইফুর রহমান। কপারটেক যদি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত না হয়, লেনদেন শুরু করতে না পারে, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেয়া টাকা যদি তাদের ফেরত দিতে হয়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে জন্য নজিরবিহীন ঘটনা। ডিএসই কর্তৃপক্ষ বলছে, কপারটেকের বিষয়ে বিএসইসি যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তা যেন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নেয়া হবে বলে তারা আশা করছে। আগেও অনেক কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইপিও অনুমোদন নিয়ে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। সে কারণে কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখতে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) নির্দেশ দেয় ফাইনানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এফআরসির চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাওয়া কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ভুল তথ্য পাওয়ার যে অভিযোগ পাওয়া গেছে সে বিষয়টি নিয়ে এখন নিরীক্ষা চলছে। আমরা আইসিএবিকে বলেছি আমাদের এ বিষয়ে জানাতে। আইসিএবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দুর্দশার বড় কারণ হল মানসম্পন্ন কোম্পানির অভাব’। ভাল কেম্পানি কম, তাই ভাল বিনিয়োগ আসছে না, ভাল বিনিয়োগকারী তৈরি হচ্ছে না। সরকারী কোম্পানিগুলোকে বারবার বলা হলেও তারা পুঁজিবাজারে আসতে চাইছে না। মাঝখান থেকে সেই সুযোগে খারাপ কেম্পানি- যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না- তারা বিভিন্নভাবে বাজারে আসছে। আমরা আমাদের ডিএসইর নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে খারাপ কোম্পানিগুলো যেন তালিকাভুক্ত হতে না পারে সেই চেষ্টা করব।
×