ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেথওয়েট এই কষ্ট ভুলবেন কি করে!

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৪ জুন ২০১৯

 ব্রেথওয়েট এই কষ্ট ভুলবেন কি করে!

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেখানে মাঝে মধ্যে এমন সব ঘটনা ঘটে যেটি বিশ্বাস করতে গিয়ে নিজের মাথায় টোকা দিয়ে চেতনা ফেরাতে হয়। অবিশ্বাস্য কিংবা ভয়ঙ্কর সুন্দর, কখনও বা চিত্রনাট্যটা হয় আফসোস আর হতাশায় মোড়া। নিজের অজান্তেই বলে ওঠা,‘এও কি সম্ভব।’ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তেমনটি এক ঘটনার জন্ম দিলেন কার্লোস ব্রেথওয়েট। নিউজিল্যান্ডের ২৯১ রানের জবাবে ১৫২ রানে পঞ্চম ও এবং ১৬৪ রানে সপ্তম উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন বড় হারের প্রহরণ গুনছে তখনই জ্বলে উঠলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। ছয় নম্বরে নেমে ৮২ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় খেললেন অনবদ্য ১০১ রানের ইনিংস। ৬ বল (এক ওভার) বাকি থাকতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই তিনি যখন আউট হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন জয় থেকে মাত্র ৫ রানের দূরত্বে! ‘আসলে ম্যাচ জিততে না পারলে এমন সেঞ্চুরির কোন মূল্যই নেই। কি আর বলব, এটা হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ঘটনা।’ প্রতিক্রিয়া অনসাং হিরো ব্রেথওয়েটের। মধ্যপথে হেরে যাওয়া ম্যাচে লড়াইটা বলতে গেলে একাই চালিয়েছিলেন। অষ্টম উইকেট জুটিতে কেমার রোচকে নিয়ে তুলেছেন ৪৭ রান। নবম উইকেটে শেলডন কটরেলকে সঙ্গী করে আরও ৩৪। শেষ ব্যাটসম্যান ওশেন থমাসকে নিয়ে কাজটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন। শেষ জুটিতে ২০ বলে স্কোরবোর্ডে জমা করেন আরও ৪১ রান। ওই রানের পুরোটা ব্রেথওয়েট একাই করেন। শেষ ওভারের ৬ বল থেকে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে জিমি নিশামকে ছক্কা হাঁকিয়ে আগেই ম্যাচ শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উইনিং স্ট্রোক হয়নি সেটি। লং-অনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দী করেন ট্রেন্ট বোল্ট। হতাশায় ভেঙ্গে পড়লেন ব্রেথওয়েট। হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে পড়লেন মাটিতে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। শেষ জুটিতে ২০ বলে ৪১ রানের পুরোটাই তো তিনি একা করেছিলেন। ভেঙ্গে পড়া ব্রেথওয়েটকে সান্ত¡না দিতে ছুটে এলেন প্রতিপক্ষ কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর এবং বোলার জিমি নিশাম। ওল্ডট্র্যাফোর্ডের গ্যালারিতে ক্যারিবিয়ান তো বটেই নিউজিল্যান্ড সমর্থকরাও তখন হতভম্ব! এক অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবে অনূদিত করার খুব কাছে গিয়ে কষ্টের আগুনে পুড়েছেন ব্রেথওয়েট। উইলিয়ামসন সান্ত¡না যেন সেই পোড়া ক্ষতে নুনের ছিটা! পরশু নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের শেষ দৃশ্যটা ছিল সত্যিই ফ্রেমে বেঁধে রাখার মতো। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক সমর্থকই ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইবেন শুধু তীরে এসে ওভাবে তরী ডুবিয়ে ফেলার জন্য। অধিনায়ক জেসন হোল্ডার কিন্তু সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ম্যাচের ওই পর্যায়ে ব্রেথওয়েটের আরেকটু বাস্তববাদী হওয়া উচিত ছিল কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে হোল্ডারের ব্যাখ্যা, ‘কার্লোস না হলে ইনিংস শেষ হওয়ার আগের ওভার পর্যন্ত আমরা যেতে পারতাম না। সে কিন্তু ওই মুহূর্তে দারুণ খেলেছে।’ আর ব্রেথওয়েট নিজেও পরে ওই শট নিয়ে তেমন একটা বিচলিত হননি। বরং বুঝিয়ে দিয়েছেন, আরেকটা সুযোগ পেলে তিনি ওভাবে ছক্কা মেরেই জেতানোর চেষ্টা করতেন, ‘হারের জন্য সেঞ্চুরিটা অম্লমধুর লাগছে। তবে নিজেকে দোষ দিচ্ছি না। ওটা ছক্কা হওয়া উচিত ছিল, জেতা উচিত ছিল আমাদেরই।’ হতাশ ব্রেথওয়েট আরও বলেন, ‘এটা অত্যন্ত হতাশাজনক যে, ক্যারিয়ারে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেও ম্যাচটা জিততে পারিনি। সত্যি আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। জয়ের এতটা কাছে গিয়েও হারতে হলো। আমাদের সবারই আত্মবিশ্বাস ছিল যে পারব। কেমার রোচ ও কটরেল লোয়ার অর্ডারে ভাল ব্যাটিং করেছেন। সবমিলিয়ে আমরা জয়ের অবস্থাতেই ছিলাম’। যার হাতে আউট হয়েছেন সেই ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত ক্যাচের প্রসঙ্গ টেনে ব্র্যোথওয়েট যোগ করেন ‘সে (ট্রেন্ট) নিউজিল্যান্ডের একজন তারকা খেলোয়াড়। দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেছেন তিনি যা আমাদের চাপের মধ্যে ফেলেছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কঠোর পরিশ্রমও করেছিলাম; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিটা কাজে আসেনি এটাই সত্যি। আসলে ম্যাচ জিততে না পারলে এমন ব্যাটিংয়ের কোন মূল্যই থাকে না।’ ব্রেথওয়েটের এমন লড়াকু ইনিংসের পর সেই বোল্ট বলেন, ‘কার্লোসের কাছ থেকে এমন ইনিংস খেলতে দেখাটা দারুণ ছিল। এটা টুর্নামেন্টের জন্যও অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচের সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বোপরি ক্রিকেটের জন্য এটা ছিল দারুণ। দলের হয়ে এই ম্যাচের অংশ হতে পারাটা দুর্দান্ত। ভক্তরা এটা দীর্ঘদিন মনে রাখবে। পরের ম্যাচে ভাল করার জন্য আমরা এখান থেকে অনুপেরণা পাব।’ কেবল ‘অনসাং হিরো’ ব্রেথওয়েটের নিদারুণ কষ্টই নয়, এই হারে ক্যারিবীয়দের সেমির আশাটুকুও তো প্রায় শেষ হয়ে গেল।
×