ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও মাইলফলকের সামনে সাকিব

সেঞ্চুরির অপেক্ষা ফুরাবে আজ তামিমের?

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৪ জুন ২০১৯

 সেঞ্চুরির অপেক্ষা ফুরাবে আজ তামিমের?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ তিন ফরমেটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এ ওপেনার টি২০, ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করেছেন। তাই বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার আসরে বাঁহাতি এ ওপেনারের ওপর দলের প্রত্যাশা অনেক। অনেক সিরিজেই দুরন্ত ব্যাটিং করা তামিম দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে নিষ্প্রভ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছেন অথচ দেশের পক্ষে সর্বাধিক ১১ ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকানো তামিম এখন পর্যন্ত মর্যাদার এ মঞ্চে কোন শতকের দেখা পাননি। চলতি বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান দুটি ও মুশফিকুর রহীম একটি শতক হাঁকিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত ম্যাচে অর্ধশতক দিয়ে ফর্মে ফেরা তামিমের এবার সেঞ্চুরির অপেক্ষা ঘোচানোর সুযোগ। সে জন্য আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিসহ ৩ ম্যাচ সুযোগ পাবেন তিনি। অপরদিকে তামিমের বন্ধু সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে ইতোমধ্যেই সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। আর ৩৫ রান করতে পারলেই তিনি বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন। ৭৫ রান করতে পারলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে ৫০০ রান করার গৌরব দেখাবেন। আর বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার বল হাতেও বেশ কিছু অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এবার নিয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রতিটি বিশ্বকাপে দলগতভাবে গৌরবজনক কিছু করতে পারলেও ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে খুব বেশি আহামরি তেমন কিছুর দেখা পাওয়া ছিল দুষ্কর। বিশেষ করে ব্যাটিং নৈপুণ্যে! ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিও হাঁকাতে পারেননি। মোহাম্মদ আশরাফুল ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রভিডেন্সে ৮৭ রানের যে ইনিংস খেলেছিলেন সেটিই ছিল দীর্ঘদিন ধরে দেশের পক্ষে কারও সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য। তবে ২০১৫ সালে তামিম ইকবাল ৯৫ রান করে তাকে টপকানোর পর ওই আসরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১০৩ ও ১২৮* রানের দুটি ইনিংস খেলেন। বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান রিয়াদের পর এ বিশ্বকাপে সাকিব জোড়া শতক উপহার দিয়েছেন। অবশেষে এ দু’জনের পর চলতি আসরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে ৯৭ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহীম। বিশ্বকাপে নিজের ২৬তম ম্যাচে এসে এই ইনিংস খেলতে পারলেন বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারের এ নির্ভরতা। এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেঞ্চুরি সংখ্যা ৫। ২০০৩ বিশ্বকাপ ছাড়া প্রতিটি আসরেই দলগত নৈপুণ্যে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু চোখে লাগার মতো ব্যাটিং পারফর্মেন্স বলতে ছিল শুধু ২০০৭ বিশ্বকাপে আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রভিডেন্সে তার এই ব্যাটিংয়েই জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের সেরা নৈপুণ্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে আশরাফুলকে সর্বপ্রথম পেছনে ফেলেন তামিম। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেলসনে ১০০ বলে ৯৫ রানের যে ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন, তাতে করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ দল। তবে সেই বিশ্বকাপেই দেশের পক্ষে প্রথম শতক উপহার দেন রিয়াদ। তামিম ২৬টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে যা পারেননি, রিয়াদ বিশ্বকাপে নিজের মাত্র সপ্তম ইনিংসে (অষ্টম ম্যাচ) ব্যাট করতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকান এ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের ম্যাচেই আবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ৪ বিশ্বকাপে যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে কেউ সেঞ্চুরিই হাঁকাতে পারেননি, সেখানে পঞ্চম বিশ্বকাপে দল পেয়ে যায় টানা দু’টি জোড়া শতক। গত বিশ্বকাপে আগের যে কোন আসরের চেয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পারফর্মেন্স ছিল সবচেয়ে ভাল। কারণ এক আসরে দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৩৬৫ রান করেছিলেন রিয়াদ। ৬ ম্যাচে ৭৩.০০ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিসহ এ রান করেছিলেন তিনি। এ্যাডিলেডে বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতক করলেন, মুশফিক সেদিন খেলেছিলেন বিশ্বকাপে তার সেরা ইনিংস। মাত্র ৭৭ বলে ৮৯ রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাজিক ফিগার ‘তিন অঙ্কে’ পৌঁছুতে পারেননি আর কেউ। এবার বিশ্বকাপে সাকিব একাই হয়ে উঠলেন দুরন্ত। টানা দুই অর্ধশতক হাঁকানোর পর সেঞ্চুরিও পেয়ে গেলেন। রিয়াদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে তিনি কার্ডিফে ৮ জুন ১২১ রানের ইনিংস খেলেন ১১৯ বলে। বিশ্বকাপে শতকের দেখা পাওয়ার জন্য সাকিবের লেগেছে ২৪ ইনিংস। পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৯৯ বলে ১২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন অন্যরা। তামিম, মুশফিক, রিয়াদ কিছুই করতে পারেননি। মুশফিক এবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। মুশফিকও নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এবার তামিমের নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। এক বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক মাত্র ১৭২ রান করতে পেরেছেন তামিম। সেটি ২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে। এবার অবশ্য নিজের সেই রেকর্ডকে পেছনে ফেলার সুযোগ এসেছে। ৫ ম্যাচে ইতোমধ্যে করেছেন ১৬৯ রান। এবার শতক হাঁকাতে পারলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে তামিমের। সার্বিকভাবে বিশ্বকাপ ব্যাটিংয়ে দেশের সেরা এখন সাকিব। তিনি এখন পর্যন্ত ২৬ ম্যাচে ৪৩.৮৬ গড়ে ৯৬৫ রান করেছেন। শচীন টেন্ডুলকর সর্বাধিক ২২৭৮ রান করেছেন বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচ খেলে। কোন ব্যাটসম্যানেরই আর ২০০০ রান নেই বিশ্বকাপে। আর ৩৫ রান করতে পারলেই বিশ্বের ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রানের মালিক হয়ে যাবেন। বাংলাদেশের পক্ষে তো অবশ্যই প্রথম। আর ৭৫ রান করতে পারলে ৫০০ পূর্ণ হবে এক বিশ্বকাপ আসরে রানের সংগ্রহ। সেটি মাত্র ৮ ব্যাটসম্যান করতে পেরেছেন আজ পর্যন্ত। শচীন টেন্ডুলকর ২০০৩ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ৬৭৩, ম্যাথু হেইডেন ২০০৭ আসরে ১১ ম্যাচে ৬৫৯ ও মাহেলা জয়বর্ধনে ১১ ম্যাচে ৫৪৮, ২০১৫ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে মার্টিন গাপটিল ৫৪৭ ও কুমার সাঙ্গাকারা ৭ ম্যাচে ৫৪১, ২০০৭ সালে রিকি পন্টিং ১১ ম্যাচে ৫৩৯, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শচীন ৭ ম্যাচে ৫২৩ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে তিলকারত্নে দিলশান ৯ ম্যাচে ৫০০ রান করেছিলেন। বর্তমানে তিন নম্বর পজিশনে যে ফর্মের তুঙ্গে আছেন সাকিব, বাকি তিন ম্যাচে সেই ধারাবাহিকতার কিছুটা দেখাতে পারলেও ৫০০ ছোঁয়া সম্ভবপরই। এখন পর্যন্ত সাকিব তিনে ব্যাটিং করেছেন ২০ ইনিংস। এই পজিশনে ৫৮.৫৮ ব্যাটিং গড় তার। তিনে নেমে ২ সেঞ্চুরি এবং ৮ হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। ওয়ানডেতে সাকিবের ব্যাটিং গড় ৩৭.৪৫ হলেও তিনে তার ব্যাটিং গড় ৫৮.৫৮। যা বিশ্ব ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেরা। ওয়ানডেতে তিন নম্বরে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ২৩০ ওয়ানডে খেলা কোহলি তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছেন ১৬৯ ইনিংসে। যেখানে তার গড় ৬৩.২৬। স্পিনার সাকিব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত ৫ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। আর দুই উইকেট নিতে পারলেই তার বিশ্বকাপে সর্বমোট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০টি। ৩০ উইকেট করে পাওয়া শহীদ আফ্রিদি (২৭ ম্যাচ), শোয়েব আখতার (১৯ ম্যাচ), ইয়ান বোথাম (২২ ম্যাচ) ও শেন বন্ডদের (১৬ ম্যাচ) ছাড়িয়ে যাবেন দুটি উইকেট নিতে পারলেই। পেছনে ফেলবেন ভারতীয় লিজেন্ড কপিল দেবের ২৬ ম্যাচে ২৮ ও ইংল্যান্ডের ফিলিপ ডিফ্রেইটাসের ২২ ম্যাচে ২৯ উইকেট নেয়ার রেকর্ডকে। স্পিনারদের তালিকায় বিশ্বকাপে উইকেট শিকারের তালিকাতেও উঠে আসবেন ৭ নম্বরে। খুব কাছাকাছি থাকবেন তখন দুই নম্বরে ইমরান তাহির (৩৯), তিনে থাকা ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩৬), চারে থাকা ব্র্যাড হজ (৩৪), পাঁচে থাকা শেন ওয়ার্ন (৩২) ও ছয়ে থাকা অনীল কুম্বলেদের (৩১)।
×