ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ আফগানিস্তান

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২৪ জুন ২০১৯

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ আফগানিস্তান

মিথুন আশরাফ ॥ ‘এবার ক্রিকেট বিশ্ব দেখবে আমরা কতটা শক্তিশালী।’-বিশ্বকাপ শুরুর আগে কথাগুলো বলেছিলেন আফগানিস্তানের সেরা স্পিনার রশীদ খান। দলের অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবতো আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের (আফগানিস্তানের) বিশ্বকাপ জেতাটাও অসম্ভব কিছু না।’ কিন্তু কথা ও কাজে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেরা ‘ফ্লপ’ দলটি আফগানিস্তানই। সবার আগে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া দলও তারা। এই দলটির বিপক্ষেই আজ সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোলে খেলবে বাংলাদেশ। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এই গতির মাঝে আজ আতঙ্কও থাকছে। আফগানরা যে বরাবরই টাইগারদের আতঙ্ক! তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে যেভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে, হারলেও কোহলিবাহিনীকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাতে এই দলটি নিয়েতো ভয়ও থাকছে! বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে পারফর্মেন্স তার ধারে কাছেও নেই আফগানিস্তান। নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান লড়াইয়ে বাংলাদেশই ফেবারিট। বাংলাদেশের জয়ের ম্যাচও এটি, তাও ধরা হচ্ছে। আফগানরা যে এবার বিশ্বকাপে ব্যর্থতার গোলকধাঁধায় আটকা পড়েছে। শুধু কি ব্যর্থতাই সঙ্গী হচ্ছে। দলের মধ্যে আছে কোন্দলও। যে কারণে দলের কোন কিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না। দলের সেরা তারকা রশীদওতো টালমাটাল অবস্থায় আছেন। যাকে নিয়ে বিশ্বকাপে আফগানরা সবচেয়ে বেশি ভরসা করছেন, কিন্তু রশীদ খানতো কিছুই করতে পারছেন না। আফগানিস্তান ৬ ম্যাচ খেলে কোন পয়েন্টতো তালিকায় যোগ করতে পারেইনি, আবার রশীদতো ৬ ম্যাচে ৪ উইকেটের বেশিও নিতে পারেননি। দুর্দশার মধ্যেই সময় কাটাচ্ছেন রশীদ। এই সময়ের সেরা স্পিনারদের মধ্যে একজন ধরা হয় রশীদকে। অথচ তিনিই কিনা স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বোলার হয়ে গেছেন। রান দেয়ার দিক থেকে প্রথম স্পিনার হিসেবে এক ম্যাচে ১১০ রান দিয়েছেন। তাও আবার ৯ ওভারেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচেই ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়ে সবচেয়ে খরুচে স্পিন বোলারের বাজে রেকর্ডটি এখন রশীদের। বিশ্বকাপে তার বল যেন কোন কাজ করছে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে রশীদই আতঙ্ক! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আবার দুর্দান্ত বোলিংও করেছেন। তবে আজও যেন রশীদের বলগুলো ভোঁতা হয়েই থাকে। তা না থাকলেও সমস্যা নেই। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন, তাতে রশীদকে নিয়ে ভাবারই সময় নেই। বাংলাদেশকে এখন শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়েই ভাবতে হচ্ছে না, চিন্তায় থাকছে রানরেটও। তার মানে আফগানদের শুধু হারাবে বাংলাদেশ, সেই বিষয়টির মধ্যে রানরেটও ঢুকেছে। তাতে করে আফগানদের বড় ব্যবধানে হারানোর লক্ষ্যও থাকছে। আর তা খুব ভালভাবেই সম্ভব। আফগানিস্তান ৬ ম্যাচের সবকটিতে নাজুকভাবে হেরেছে। পাত্তাই পায়নি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে হেরেছে। শ্রীলঙ্কার কাছে বৃষ্টি আইনে ৩৪ রানে হেরেছে। নিউজিল্যান্ডের কাছেতো নাস্তানাবুদ হয়েছে। ১০৭ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে হেরেছে। যে দক্ষিণ আফ্রিকা দলটি এবার বিশ্বকাপে ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের কাছেও বৃষ্টি আইনে ১১৬ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে হেরেছে। আর স্বাগতিক ইংল্যান্ডতো এবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩৯৭ রানের স্কোরই গড়েছে। তাতে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানেই হার হয়েছে আফগানিস্তানের। ভারতের সঙ্গে দাপট দেখিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের ছুড়ে দেয়া ২২৫ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। ১১ রানে হেরেছে আফগানিস্তান। তাতে আফগান ব্যাটসম্যানদের বেহাল অবস্থাই ধরা পড়ছে। কি বাজে অবস্থা। তা হচ্ছে দলের ক্রিকেটারদের ছন্নছাড়া পথ চলা এবং দলের মধ্যে কোন্দল ঢুকে যাওয়ায়। তা হচ্ছে বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় নিয়মিত অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের পরিবর্তে গুলবাদিন নাইবকে হঠাৎ নেতৃত্ব দিয়ে ফেলায়। তার নেতৃত্বে কোন ক্রিকেটারই স্বস্তিতে নেই। দলের দুই নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার রশীদ খান ও মোহাম্মদ নবিতো সমালোচনাও করেছেন। স্ট্যানিকজাইকেতো আবার প্রথম তিন ম্যাচে খেলানোও হয়নি। দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স তাতে বেজায় ক্ষেপেছেনও। বিশ্বকাপের পর দল নিয়ে বোমা ফাটানোর কথাও বলেছেন। উইকেটরক্ষক মোহম্মদ শেহজাদকে আনফিট ঘোষণা করে হঠাৎ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়েও ঝামেলা হয়েছে। ড্রেসিংরুমে বোর্ড হস্তক্ষেপ করছে প্রতিনিয়ত। তাতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ম্যানচেস্টারের এক রেস্তরাঁয় সমর্থকদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। অধিনায়ক গুলবাদিন এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে উঠে যাওয়ার হুমকিও দেন। আফগানিস্তান দলটি যে কি ঝামেলায় আছে তাতো বোঝাই যাচ্ছে। এরপরও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে যেভাবে খেলেছে আফগানরা, তাতে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এই খেলা যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে তাহলে মাশরাফিবাহিনীর বিপদ থাকতে পারে। তবে উল্টো চিত্র বাংলাদেশ শিবিরে। সুখী পরিবারের মতোই দলটি। সবার সঙ্গে সবার কি সখ্যতা। কোচিং স্টাফ ও ক্রিকেটারদের মধ্যেও যেন আত্মার বন্ধন। চলাফেরাতেও আছে কি নিয়মানুবর্তিতা। বিশ্বকাপে যে নিজেদের অন্যভাবে চেনানোর মিশনে নেমেছেন ক্রিকেটাররা, তা বোঝাই যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১ রানে জিতে বিশ্বকাপের মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর ২৪৪ রান করেও নিউজিল্যান্ডকে বিপদে ফেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। ২ উইকেটে হারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে লড়াই করা যায়নি। ৩৮৬ রান করে ফেলে ইংল্যান্ড। এরপর ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। তবে দমে যায়নি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি যখন পরিত্যক্ত হয় তখন খানিক হতাশা যুক্ত হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট মিলে। আশা ছিল জিতে ২ পয়েন্ট পাওয়ার। কিন্তু তা না হওয়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটিতে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটারদেরই দেখা মিলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২২ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়। সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন কুমার দাসের অপরাজিত ৯৪ রানে ৫১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। কি অসাধারণ পারফর্মেন্স। এমন পারফর্মেন্সে মানসিকভাবে আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠেন ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়াকেও হারানোর বিশ্বাস ভালভাবেই জন্মায়। কিন্তু এবার বোলারদের ব্যর্থতায় তা সম্ভব হয়নি। অসিরা ৩৮১ রানের বড় স্কোর গড়ে ফেলে। এরপরও আশা জাগায় বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ১০২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৬৯, তামিম ইকবালের ৬২ ও সাকিবের ৪১ রানে ৩৩৩ রান করা যায়। ৪৮ রানে হারে বাংলাদেশ। এই হারেও গর্ব জড়িয়ে থাকে। বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা দেখায়। তাতে বিশ্ব ক্রিকেটে প্রশংসাও কুড়ায়। ৬ ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে হয়নি। ৫ ম্যাচ খেলে ৩টি ম্যাচেই ৩০০ রানের বেশি করে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরও করে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে, সেখানে দুর্বল দল আফগানিস্তানতো উড়ে যাওয়ার কথা! যেভাবে বিশ্বকাপ মাতিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ, তাতে আফগানদের পাত্তা পাওয়ারই কথা নয়। সামনে আফগানিস্তান, আছে জেতার আশা। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলেছে, তাতেতো আফগানদের হারানোর ছক কষাই আছে। আফগানিস্তানকে হারাতে না পারলে হবে সমালোচনা। জিতলে মিলবে না তেমন সাধুবাদ। আর তাতে করে বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তান বরাবরই আতঙ্কের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা হলেই চাপ তৈরি হয়। জয়ের প্রত্যাশা মেটানোর চাপ থাকে। আবার ভারতের বিপক্ষে আফগানদের অসাধারণ নৈপুণ্যে সেই চাপ বাড়ার চেয়ে কমার কথা নয়। তবে আফগানরা যতই আতঙ্ক হয়ে ধরা দিক বাংলাদেশ দল এবার দুর্বার। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে, মানসিকতাও অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে চাঙ্গা। আজ বাংলাদেশ সময় সাড়ে তিনটায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটিতে আফগানিস্তানকে এখন উড়িয়ে দেয়া গেলেই হলো।
×