ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেউ যেন সেবা নিতে এসে টাকার জন্য আটকে না থাকেন ॥ পূর্তমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৪ জুন ২০১৯

 কেউ যেন সেবা নিতে এসে টাকার জন্য আটকে না থাকেন ॥ পূর্তমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে সরকারী প্রতিষ্ঠানকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। কোন ফাইল যেন আটকে না রাখা হয় ও কোন অজুহাতে যেন কোন সেবাগ্রহণকারী ফিরে না যান সেজন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দফতর-সংস্থার বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৯-২০২০ অনুষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৭-১৮ সালের সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দফতর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, আসুন সকলে মিলে শুদ্ধ হই, সেবাধর্মী হই, দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করি এবং জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হই। কোন সেবা প্রার্থিকে যেন মন্ত্রণালয় থেকে কোন অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া না হয়। অহেতুক কারও ফাইল যাতে আটকে রাখা না হয়। তিনি বলেন, রাজউক, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ মন্ত্রণালয়ের সকল দফতর-সংস্থাকে জনবান্ধব করতে চাই। সকল বিভাগে পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনতে চাই। একজন মানুষও যেন আমাদের মন্ত্রণালয় ও দফতর-সংস্থায় সেবা নিতে এসে টাকার কারণে আটকে না থাকে, ঠুনকো অজুহাতে যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। ‘২৩ জুন বাঙালী জাতির ইতিহাসে, বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২৩ জুন আমাদের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের যা কিছু বড় বড় অর্জন, তা কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালী জাতির ইতিহাসে অবিসংবাদিত নেতা, কালজয়ী মহাপুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দফতর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে না ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য, বাংলাদেশকে সে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর টিমের সদস্য। আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, আমিসহ আমরা সকলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক এ দেশের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষদের কর্মচারী আমরা। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। যাদের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন ও আমার সম্মানী দেয়া হয়। যাদের কল্যাণের জন্য এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, তাদের জন্য আমরা একটি টিমে কাজ করছি। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। অতীতের ভুল, অশুদ্ধতা, অনাকাক্সিক্ষত অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন। অতীতের গ্লানি, অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিকতাকে পরিহার করে আমাদের শুদ্ধ হতে হবে। আমরা আশা করছি শুদ্ধাচার পুরস্কারে প্রত্যেকেই উৎসাহী হবেন।’ এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১২টি দফতর বা সংস্থা যথাক্রমে গণপূর্ত অধিদফতর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্য অধিদফতর, নগর উন্নয়ন অধিদফতর, হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারী আবাসন পরিদফতর ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদফতরের প্রধানগণ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৯-২০২০ সম্পন্ন করেন। অনুষ্ঠানের শেষে মন্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আখতার হোসেন, হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শামীম আখতার এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমানকে মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৭-২০১৮ তুলে দেয়া হয়। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত অধিদফতর গণপূর্ত অধিদফতর চত্বরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের ২৩ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত চলা সেবা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পূর্তমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক পরিশ্রম করেন। তার কোন ক্লান্তি নেই, কোন কাজে অনীহা নেই। কোন অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে কোনভাবে তার সম্পৃক্ততা নেই। এরকমের একটি পরিশ্রমী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আজ আমরা রয়েছি। গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা আমাকে সহযোগিতা করছেন। অনেকেই পূর্বের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। আপনাদের কর্মকান্ডে, আচার-আচরণে অনেক গতি ফিরে এসেছে। স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা ফিরে এসেছে। আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা, জনমুখী ও দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করার জায়গাটাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। আমাদের কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে। দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে। গণপূর্ত অধিদফতরের গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। প্রকৌশলীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, প্রথাগত জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে আমরা ব্যতিক্রম কিছু আনতে চাই। আধুনিক, যুগোপযোগী, পরিবেশসম্মত, ঝুঁকিমুক্ত, সাধারণের আনন্দমুখর বিচরণ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা এখন থেকে নিতে হবে।
×