ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের এখন গরুর লেজ ধরা উচিত!

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৪ জুন ২০১৯

 বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের এখন গরুর লেজ ধরা উচিত!

আমি বেশ কিছুদিন যাবত পত্রপত্রিকায় তেমন একটা লেখালেখি করছি না। এমনকি পত্রপত্রিকাও পড়ছি না। তবে মজার বিষয় হলো আমি খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি কিন্তু লেখালেখি নিয়েই। সেটা কিন্তু যা লিখছি তা বই আকারে প্রকাশ করার জন্য। বেশি পত্রপত্রিকা না পড়লেও বাসায় জনকণ্ঠ রাখা হয় নিয়মিত। ১২ জুন, ২০১৯ তারিখে জনকণ্ঠ পত্রিকায় গাফ্ফার চৌধুরীর লেখাটা পড়েছি। কারণ, আমি গাফ্ফার ভাইয়ের একজন ভক্ত পাঠক। কিন্তু তিনি মহাভারতের ভীষ্ম চরিত্রের সঙ্গে এমন এক সুবিধাবাদী ব্যক্তির তুলনা করেছেন, যে বিষয়টা আমার ভাল লাগেনি। ভীষ্মের সঙ্গে যাকে তিনি তুলনা করেছেন তিনি তেমন একজন বীরপুরুষ এ কথা কখনও শুনিনি। বীরপুরুষ না হতে পারেন কিন্তু তিনি যে খুব চতুর ব্যক্তি এ কথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন। গাফ্ফার ভাই আমাদের ইতিহাসের অনেক কিছু জানেন- যা আমরা জানি না। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান একাত্তর সালে কেমন করে তাঁর শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন সে কাহিনী গাফ্ফার ভাই ভাল করেই জানেন। এ বিষয়ে তিনি একটু বিস্তারিত লিখলে, আমাদের মতো সাধারণ জনের জ্ঞানের পরিধি অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। পত্রিকায় পড়লাম, টেলিভিশনে সংবাদ শুনলাম কয়েক দিন আগে আসম আব্দুর রবের বাসায় ঐক্যফ্রন্টের ‘নাটবল্টু’ একটু টাইট দিয়ে ঐক্যের বন্ধন আরও দৃঢ় করার অভিপ্রায় নিয়ে একটি মিটিং ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ভীষ্মদেব সেখানে গিয়ে উপস্থিত হননি। যারা মহাভারত পড়েছেন, তারা জানেন ভীষ্মদেব এবং শিখণ্ডি নামের চরিত্রের বিষয়ে। আসম রবের বাসায় দু’একজন শিখণ্ডির উপস্থিতির কথা জেনেই বোধহয় ভীষ্মদেব শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ওখানে যাননি। ঐক্যফ্রন্টের পার্শ্বচরিত্র নেতাদের মাঝে আত্মপ্রচারের প্রচেষ্টা উদগ্র মাত্রায় বজায় আছে। বার বার দল পাল্টানো নেতাদের নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য বজায় রাখা যে কঠিন, এতদিনে ভীষ্মদেব তা বুঝতে পেরেছেন। ॥ দুই ॥ আমি মাঝে মধ্যে টেলিভিশন দেখি। আমাদের দেশে তৈরি করা নাটক-সিনেমা দেখে বেশ মজা পাওয়া যায়। পরচুলা পরা আমাদের নাটকের নায়ক হুনুমানের সমান লাফ দিতে পারে। একাই বিরুদ্ধপক্ষের বিশ-পঁচিশ জন হুমদা আকৃতির গুন্ডার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়ে নায়িকাকে কোন উদ্যানে নিয়ে গিয়ে নাচানাচি করে। আমি ওইদিন অমন কিছু দেখছিলাম না। আমি দেখছিলাম, কোন একটা টিভি চ্যানেলে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় এবং বিএনপি নেতা হাবিব সাহেবের তর্কযুদ্ধ। বিএনপি দলটির সংরক্ষিত আসনের নারী প্রতিনিধি সংসদ সদস্য তাঁর বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সংসদকে ভীষণ উত্তপ্ত করে তুলেছিলেন। বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি চিন্তা করছিলেন, সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে বসে ‘ভাইয়া’ কি তাঁর দেয়া বক্তব্য শুনতে পাচ্ছেন। সংসদ উত্তপ্ত করার প্রসঙ্গে সুভাষ সিংহ রায় একটি গল্প বলছিলেন। কোন এক ব্যক্তির প্রচন্ড জ্বর হওয়ায় তার স্ত্রী ডাক্তারকে টেলিফোন করে বললেন, তার স্বামীর প্রচন্ড জ্বর। শরীর এমন গরম মনে হয় যেন পুড়ে যাবে। গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার সাহেব প্রশ্ন করলেন। শরীরের তাপমাত্রা কেমন হবে বলে মনে করেন? ভদ্রলোকের স্ত্রী বললেন, তা ১৩০ ডিগ্রী হবে। শুনে ডাক্তার সাহেব বললেন, শরীরের তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রী হয়ে থাকলে, আমাকে কেন ফোন করেছেন? দমকল বাহিনীকে ডাকুন। বিএনপি যদি সদ্য বিগত নির্বাচনে মনোয়ন বাণিজ্য না করে, গুরুত্ব সহকারে নির্বাচন করত, তবে আমার মনে হয় দলটি অনেকগুলো আসন লাভ করত। তখন সংরক্ষিত নারী আসনে বেশ কয়েক নারী নেত্রী সংসদে যোগ দিতে পারতেন। এখন একজন মাত্র নারী সংসদ সদস্য সংসদকে উত্তপ্ত করে তুলেছেন, তাতে মনে হয় কয়েকজনে মিলে সংসদে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারতেন। তখন সংসদের অধিবেশন শুরু হলে সব সময় ধারেকাছে দমকলবাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে হতো। এরপর সুভাষ সিংহ রায় আর একটি ঘটনার অবতারণা করে বলেছেন, জিয়া পুত্র তারেক রহমানকে যখন বিএনপি দলটির-যুগ্ম সিনিয়র সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় তখন তাঁর বয়স ছিল খুবই কম। তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানাতে তখনকার বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা সাইফুর রহমানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর প্রচন্ড ঝগড়া হয়। স্ত্রীর বক্তব্য ছিল তোমার নাতির বয়সী একজনকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য তুমি পাগলামি করছ কেন? বিএনপি নেতা হাবিব বললেন, পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেত্রী বেনজীর ভুট্টো নিহত হওয়ার পর তাঁর পুত্র বিলোয়াল ভুট্টোকে পিপলস পার্টির ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। ওই সময় বিলোয়ালের বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। সেটা কি পাকিস্তানের জনগণ মেনে নেয়নি? হাবিব সাহেব সব সময় পাকিস্তানের উদাহরণ কেন টেনে আনেন তা আমি বুঝতে পারি না। আসলে আমি আমার মূল বক্তব্য থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। আমার পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায়। গ্রামের নাম গোপালপুর। আমাদের গ্রাম থেকে কিছুটা পশ্চিমে গেলেই শুরু হয় বড় বড় বিল এবং জলাভূমি। বিল অঞ্চলে শীতকালে খুব ঘনকুয়াশা পড়ে। এমন ঘন সে কুয়াশা যে মাত্র কয়েক হাত দূরের কিছু দেখা যায় না। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি ওই বিল অঞ্চলে তেমন রাস্তাঘাটও নেই। তাই সন্ধ্যার পর কুয়াশা পড়লে পথ চিনে বাড়ি ফিরে আসা ছিল কঠিন ব্যাপার। ঘন কুয়াশার কারণে পথ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয় তখন সঙ্গে গরু থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তখন গরুর লেজ ধরে থাকলে গরুই পথ চিনে বাড়ি নিয়ে আসবে। কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়া গরু পথ চিনে আবার বাড়ি ফিরে আসা নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি অসাধারণ গল্প পড়েছিলাম অনেক দিন আগে। কিন্তু গল্পের কাহিনী এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে। সংবাদপত্র পড়ে, লোকজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এটুকু বুঝতে পারছি যে, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্ব এখন বেশ সঙ্কটে আছে। তাঁরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। এ সময় গরুর লেজ ধরেই তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারার একমাত্র উপায়। কিন্তু তাঁরা যে গরুর লেজ ধরবেন, সে গরুটা কে? লেখক : বৈমানিক
×