ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে বাড়ছে হত্যাকান্ড

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ জুন ২০১৯

নাটোরে বাড়ছে হত্যাকান্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন, ছিনতাই, পারিবারিক বিরোধসহ নানা কারণে নাটোরে হত্যাকান্ডের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলছে। চলতি বছরে জেলায় ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে শুধু জুন মাসেই সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সম্প্রতি তিনদিনের ব্যবধানে চারটি খুনের ঘটনায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসি। হত্যাকান্ড রোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উপর তাগিদ দিচ্ছেন সচেতনমহল। তবে জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং পরিস্থিতি আরো ভালো করতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানান, খুনের মাত্রা যেটা বলা হচ্ছে তা গতবছরের প্রথম ছয় মাসে যতোগুলো খুন হয়েছে, এ বছরের প্রথম ছয়মাসেও ততোগুলো খুন হয়েছে। কাজেই কোন ভাবেই বলা যাবেনা যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভাল রাখতে পুলিশ জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। জানা যায়, নাটোরের ৭টি উপজেলায় প্রয় প্রতি মাসেই নানা কারণে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আর বেশীর ভাগ হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হয় প্রকাশ্যেই। ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসনসহ পারিবারিক বিরোধে প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশুসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। জেলায় চলতি মাসে সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে তিনদিনের ব্যবধানে চার খুনের ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসী। গত ১২ জুন লালপুরে আলোক বাগচি নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ১৩ জুন গুরুদাসপুরে হত্যা মামলার প্রধান আসামী জালাল উদ্দিনকে কুপিয়ে এবং হাত-পা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। আর ১৪ জুন নলডাঙ্গায় আমেনা খাতুন নামে স্বামী পরিত্যাক্ত এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এবং একই দিনে সিংড়ায় জমির লোভে ১২ বছর বয়সী কিশোর হেদায়েত আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে তারই সৎ বড় ভাই। এছাড়া চলতি বছরের ছয় মাসে ২৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে যার বেশিরভাগই সংঘটিত হয় প্রকাশ্যে। একের পর এক হত্যার ঘটনায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। তবে গুরুদাসপুরে একটি হত্যা মামলার আসামী জালাল হত্যাকান্ডে মুল আসামী গ্রেফতার ছাড়া বাকি মামলা গুলোর তেমন কোন অগ্রগতি নেই। জেলা পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ১৮টি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় এই জেলায়। আর ২০১৭ সালে এই জেলায় একই ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২টি। ২০১৮ সালে হত্যার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ তে। সার্বিক পরিসংখ্যানে নাটোরে দিনদিন হত্যাকান্ডের পরিমান বেড়েই চলছে। যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে তাতে জনমনে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। নাটোরের দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা খুব চিন্তায় আছি যে, কখন আমরা হত্যাকান্ডের কথা শুনবো বা নিজেরাই আক্রান্ত হবো। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি তা এখনই রোধ করা দরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনির তৎপরতা বাড়ানো দরকার। সেই সাথে সামাজিক যে অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে তা সবাইকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। নাটোর জজকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট রতœা আহমেদ জানান, একের পর এক যেভাবে খুন খারাপি বেড়েই চলছে তাতে খুবই শংঙ্কায় আছি। খুনিদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি। সমাজকর্মী শামীমা লাইজু নীলা বলেন, সম্প্রতি নাটোবে তিনদিনের ব্যবধানে চারটি খুন হয়েছে। আর শুধু জুন মাসেই সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই। আসামীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে অপরাধ প্রবনতা অনেকাংশে কমে যাবে। নাটোর লাঠিবাঁশি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরি পদক্ষেপ ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোসহ কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করলে হত্যাকান্ডের পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে। মামলার অগ্রগতি ভালো উল্লেখ করে পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, নাটোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ চমৎকার। আর যে দুইটা তিনটা খুনের কথা বলা হচ্ছে তা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর আছে।
×