ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান স্পিনে বিপর্যস্ত ভারতীয় ব্যাটিং

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৩ জুন ২০১৯

 আফগান স্পিনে বিপর্যস্ত ভারতীয় ব্যাটিং

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ভারতীয় ক্রিকেট দলের। আর চলতি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বোলিং বিভাগ চরমভাবে বিপর্যস্ত। বিশেষ করে তাদের মূল শক্তি স্পিন আগের ৫টি ম্যাচে প্রায় অকার্যকরই ছিল। তবে শনিবার সাউদাম্পটনের রোজ বোল দু’হাত উজাড় করে দিল আফগান স্পিনারদের। সে কারণে স্পিন মোকাবেলায় পারদর্শী ভারতীয় ব্যাটিংও ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ২২৪ রান করতে পেরেছে। অথচ শুধু রোহিত শর্মা ছাড়া বাকি ৫ শীর্ষ ব্যাটসম্যানই রান পেয়েছেন। আফগান স্পিনাররা জ্বলে ওঠায় স্বচ্ছন্দে ব্যাট চালাতে পারেননি তারা। এ কারণেই চলতি বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস গড়েছে ভারত। রশীদ খানসহ চার আফগান স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ইতোমধ্যেই সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া আফগানরা অফস্পিনার মুজিব উর রহমানকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। অপরদিকে ছিলেন পেসার আফতাব আলম। এ জুটি ভারতীয় ওপেনারদের চেপে ধরেন। সে জন্য পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পায় তারা। মুজিবের অফস্পিনে ফর্মে থাকা রোহিত বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাত্র ১ রান করেই। তখন দলীয় রান মাত্র ৭! তবে দ্বিতীয় উইকেটে লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১০ ওভার জুটিবদ্ধ থেকে ৫৭ রানও তুলে ফেলেন। তাই প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে রানের চাকাও দ্রুত করে তুলেছিলেন তারা। ওই সময় আঘাত হানেন আরেক অফস্পিনার মোহাম্মদ নবি। অভিজ্ঞ এ আফগানই চলতি বিশ্বকাপে দলের হয়ে নিয়মিত ভাল বোলিং করছিলেন। এবার রাহুলকে (৫৩ বলে ৩০) সাজঘরে ফিরিয়ে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন আফগানদের। এরপর কোহলির সঙ্গে জুটি বাঁধেন বিজয় শঙ্কর। তিনি বেশ ভালই সঙ্গ দিচ্ছিলেন অধিনায়ককে। কোহলি বেশ দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তৃতীয় উইকেটে তিনি শঙ্করের সঙ্গে ৭১ বলে ৫৮ রান যোগ করে দলীয় ইনিংসটাকে ভালভাবেই মেরামত করেন। তবে শঙ্করও বেশিদূর যেতে পারলেন না। তাকে ফিরিয়ে দিলেন অনিয়মিত লেগস্পিনার রহমত শাহ। এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে ৪১ বলে ২৯ রান করা শঙ্কর ফিরে যান। কিন্তু কোহলি দারুণ এক অর্ধশতক তুলে নেন। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার টানা তৃতীয় অর্ধশতক। কোহলির সঙ্গে এরপর অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি যোগ দেন। তবে রহমতের কার্যকারিতায় আক্রমণে আসেন লেগস্পিনার রশীদ খান। এবার বিশ্বকাপে একেবারেই নিষ্প্রভ রশীদই আফগান বোলিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের বাজে রেকর্ড গড়েন। সেই রশীদ এদিনও শুরুটা ভালভাবে করতে পারেননি। তার বিপক্ষে ধোনি-কোহলি বেশ সাবলীল ছিলেন। অনিয়মিত রহমতসহ মুজিব-নবি যখন স্পিনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন সেখানে প্রথম ৫ ওভারে ২৬ রান দেন বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর স্পিনার রশীদ। তবে এর আগেই নবি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি দখল করেন। ৬৩ বলে ৫ চারে ৬৭ রান করা কোহলি বিপজ্জনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নবির হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলটিকে কাট করতে গিয়ে রহমতের হাতে ক্যাচ দেন কোহলি। এরপর মাঝের সময়টাতে বোলিংয়ে বিরতি নিয়েছিলেন রশীদ। কোহলি ফিরে যাওয়ার পর ধোনি-কেদার যাদব বেশ সতর্ক হয়েই ব্যাট চালাচ্ছিলেন। কারণ ১৩৫ রানের মধ্যেই চার টপঅর্ডার সাজঘরে ফিরেছেন। ততক্ষণে ৩০ ওভার পেরিয়ে গেছে। এরপর ৩৭তম ওভারে গিয়ে আবার বাউন্ডারির দেখা পায় ভারত। সেটিও ফিরতি স্পেলে বোলিং করতে আসা রশীদের ওই ওভারের পঞ্চম বলে। কেদার চার হাঁকান। ধোনি-কেদার জুটি একটি ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে থাকেন ভারতকে। তবে সেটিও আর দীর্ঘ হয়নি। নিজের নবম ওভারে গিয়ে রশীদ অবশেষে সাফল্য পান। ইনিংসের ৪৫তম ওভারের তৃতীয় বলে ৫২ বলে ২৮ রান করা ধোনি সাজঘরে ফেরেন তার শিকার হয়ে। ধোনি ফিরে যাওয়ার পরও সংগ্রহটাকে বড় করার আশা টিকে ছিল ভারতের। কিন্তু শেষদিকে উজ্জীবিত রশীদ ও মুজিবের পাশাপাশি দুই পেসার গুলবাদিন ও আফতাব দুর্দান্ত বোলিংয়ে আটকে রাখেন ভারতীয় বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের। উইকেটও তুলে নেন দ্রুত কয়েকটি। ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে শেষ করেন মুজিব! আর রশীদ শেষ করেন ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ধোনির উইকেটটি নিয়ে। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হারদিক পা-িয়া (৭) রানেই আফতাবের শিকার হলে বড় রানের ইনিংস পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে ভারতের। শেষ ওভারে মোহাম্মদ শামি (১) ও হাফ সেঞ্চুরিয়ান কেদারকে সাজঘরে ফেরান আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন। কেদার ৬৮ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৫২ রান করেছিলেন। ফলে ৮ উইকেটে ২২৪ রানেই শেষ হয় ভারতের ইনিংস। নবি ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২টি এবং গুলবাদিন ৯ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। রহমত ৫ ওভারে ২২ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচে এসে অবশেষে স্পিনারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যেই শক্তিশালী ভারতের ব্যাটিংকে এত স্বল্প রানেই বেঁধে ফেলে আফগানিস্তান।
×