শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ হেডিংলিতে মাত্র ২৩২ রানের পুঁজি নিয়েও ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বলা হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম চমক এটি! অথচ আগের ম্যাচে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দেয়া ইংলিশরা তুলেছিল ৩৯৭ রান। ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে ‘নায়ক’ বনে গেছেন লাসিথ মালিঙ্গা। গ্রেট মাহেলা জয়বর্ধনে বলছেন, ‘ক্রিকেট খেলতে সিক্স প্যাক নয়, বুদ্ধি লাগে।’ পঁয়ত্রিশোর্ধ বোলারের বিশ্বকাপ অন্তর্ভুক্তিতে যে সমালোচনা ছিল, সেদিকে ইঙ্গিত করেই একথা বলেন তিনি। গ্লেন ম্যাকগ্রা ও স্বদেশী মুত্তিয়া মুরলিধরনকে পেছনে ফেলে এদিন বিশ্বকাপে দ্রুত ৫০ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও গড়েছেন বিজাতীয় এ্যাকশনের অধিকারী এ পেসার। সাবেক দুই কিংবদন্তির লেগেছিল ৩০ ম্যাচ, মালিঙ্গার ২৬। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। দুই জয়ে লঙ্কানরা যে এখনও সেমির আশা বাঁচিয়ে রেখেছে, সেখানে দুটিতেই মালিঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ‘বুড়ো হারে ভেল্কি’ বুঝি একেই বলে।
২০০৭ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলার স্বাদ নেয়া মালিঙ্গা মাত্র ২৬ ম্যাচেই শিকার করেছেন ৫০ উইকেট। দ্রুততম ৫০ উইকেটের আগের রেকর্ডটা ছিল ম্যাকগ্রা ও মুরলিধরনের দখলে। তারা ৩০তম ম্যাচে পেয়েছিলেন উইকেটের হাফ সেঞ্চুরির দেখা। এই কীর্তি গড়তে আরেক গ্রেট ওয়াসিম আকরামকে খেলতে হয়েছিল ৩৪ ম্যাচ। লিডসের হেডিংলিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে চমকে দিয়ে ২০ রানের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। দুর্দান্ত বোলিং করে স্মরণীয় জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ৩৫ বছর বয়সী মালিঙ্গা। ব্যাটসম্যানদের দেয়া অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করে পান ম্যাচসেরার পুরস্কার। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে ১টি মেডেনসহ ৪ উইকেট নেন মাত্র ৪৩ রানে। জো রুটকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকারের মাধ্যমে রেকর্ডের পাতায় নাম লেখান তিনি। ইংল্যান্ডের ইনিংসে জোর ধাক্কাটা মালিঙ্গাই দেন। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফেরান বিপজ্জনক জনি বেয়ারস্টোকে। এক বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ওপেনার। আরেক ওপেনার জেমস ভিন্সও মালিঙ্গার শিকার হন। ফলে দলীয় ২৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ইংলিশরা।
চতুর্থ উইকেটে ভাল জুটি গড়ে দলকে যখন জয়ের পথে এগিয়ে নিচ্ছিলেন জো রুট ও বেন স্টোকস, তখনি ফের লাইমলাইটে মালিঙ্গা। ৫৪ রানের জুটি ভেঙ্গে দলকে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। এরপর জস বাটলারের উইকেটটিও নিজের ঝুলিতে নেন তিনি। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে পরে আর লক্ষ্য তাড়া করে জয় পাওয়া হয়নি ইংল্যান্ডের। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের ২৬ ম্যাচে মালিঙ্গার দখল করা উইকেটসংখ্যা এখন ৫১টি। চলতি বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে মাঠে নেমে পেয়েছেন ৮ উইকেট। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে ১৮টি, ২০১১ বিশ্বকাপে ১৩টি ও ২০১৫ বিশ্বকাপে ১২টি উইকেট শিকার করেছিলেন ভিন্নধর্মী এ্যাকশনের এই পেসার। এছাড়াও এ ম্যাচে আরও বেশ কিছু রেকর্ড গড়েছেন মালিঙ্গা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখন তার উইকেট সংখ্যা ৪৮টি, যা ব্রেট লি (৬৫) ও ম্যাকগ্রা (৫৩) এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ। ৪৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট বিশ্বকাপে মালিঙ্গার দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। এর ওপরে আছে কেবল ২০১১ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ৩৮ রানের বিনিময়ে নেয়া ৬ উইকেট।
২২২ ওয়ানডেতে মালিঙ্গার মোট উইকেট এখন ৩৩০টি। ৫ উইকেট আট বার, ৪ উইকেট এগারো বার। মালিঙ্গার মেদবহুল শরীরের ছবি পোস্ট করে তারই একসময়ের সতীর্থ গ্রেট মাহেলা লিখেছেন, ‘ক্রিকেট সিক্স প্যাকের খেলা নয়। এখানে দরকার স্কিল, যেটা মালিঙ্গা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখিয়েছে। এর আগে অনেকবার সে এমন কিছু করেছে। তবে তাকে সেরা অবস্থায় দেখা ছিল আসলেই দারুণ।’
