ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের ভ্যাট-ট্যাক্স নীতি তামাক ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৩ জুন ২০১৯

 বাজেটের ভ্যাট-ট্যাক্স নীতি তামাক ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ভ্যাট ও ট্যাক্স পলিসি তামাক ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তামাকবিরোধ জোটগুলো মনে করে, সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। এছাড়া কর ফাঁকি দেয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তামাকবিরোধী জোটগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এর সহায়তায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, বিটা, সুপ্র, এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে তামাক কর বিষয়ক বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক সভাপতিত্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মর্তুজা হায়দার লিটন, এম এ সালাম, অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী, এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কো-অর্ডিনেটর মোঃ হাসান শাহরিয়ার। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট তামাকবিরোধীদের হতাশ করেছে। বিশেষত বিড়ি এবং নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় এগুলোর প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। অন্যদিকে, টানা তৃতীয় বছরের মতো সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টিতে অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার স্তর পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকবে এবং তামাক কোম্পানি করফাঁকির সুযোগ পাবে। এছাড়াও, অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং উপকরণ কর রেয়াত তামাক কোম্পানিকে ব্যাপকভাবে লাভবান করবে, সরকার হারাবে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। তামাক চাষ উৎসাহিত হবে, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। তবে, জর্দাগুলের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে খুচরা মূল্যের ওপর করারোপ পদ্ধতি প্রচলন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি এবং নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পণ্য আরও সস্তা হয়ে যাবে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য তাই বিড়ি এবং নিম্নস্তরের সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের প্রকৃত মূল্য আরও বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিগারেটের শুল্ক না বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিতে যাচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, তাতে তামাক কোম্পানির আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় দামী স্তরগুলো থেকে বিশেষ করে মধ্যম এবং উচ্চস্তরের সিগারেট ভোক্তার একটি অংশ নিম্নস্তরে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ থেকে যাবে। ফলে মূল্যবৃদ্ধি হলেও তা সার্বিকভাবে সিগারেটের ব্যবহার হ্রাসে উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাবই ফেলবে না। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা কমিয়ে চার থেকে দুইয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাবও দেন তিনি। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক তার বক্তব্যে বলেন, তামাক খাত থেকে যা আয় হয়, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয় তার তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণেই কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরী হয়ে পড়ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ৪টি মূল্যস্তরের পরিবর্তে দুইটি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্ক এডভ্যালোরেম (মূল্যের শতকরা হার) পদ্ধতির পাশাপাশি একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) হিসেবে আরোপ করার দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোন প্রতিফলন নেই।
×