ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩০ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে অনিয়ম

ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৩ জুন ২০১৯

ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট প্রশস্তের সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মিত সড়কে ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। ফলে অত্যন্ত নিম্নমানের এ কাজের প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা ঠিকাদারের লোকজনকে লাঞ্ছিত করে পুরো কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘটনাটি আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে গৌরনদীর ঘোষেরহাট সড়কের। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পুনরায় নির্মাণের জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে রাজিহার হয়ে গৌরনদীর ঘোষেরহাট পর্যন্ত বরিশাল অংশে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি কালভার্টসহ ১৮ ফুট প্রশস্তের ১২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করছে বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজ খান। সওজ বিভাগের একই কার্যাদেশে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে আরও প্রায় ৫৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য সুধীর রঞ্জন এবং ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাওসার আহম্মেদ মানিক একাধিক বাসিন্দারা জানান, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই এলাকার সুধীর মেম্বরের বাড়ির সামনের ব্রিজ থেকে বাকাই ফিরোজার মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে সড়কের কাজ অত্যন্ত নিম্ন মানের করা হয়েছে। শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই বিভিন্নস্থানের কার্পেটিং উঠে গেছে। এছাড়া সড়কের কার্পেটিং হাত দিয়েই টেনে তুলছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, সড়ক নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট শামসুল হকের উপস্থিতিতে বুধবার রাস্তার কার্পেটিং করা হয়। ওইসময় স্থানীয়রা তাকে ভাল করে প্রাইম করে কার্পেটিং ও সিলকোড করার অনুরোধ করেও কোন সুফল পাননি। সড়ক কার্পেটিং করার একদিনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কয়েকটি স্থানের কার্পেটিং উঠে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিম্নমানের কাজ করায় এলাকাবাসী ঠিকাদারের লোকজনকে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আত্মগোপন করে ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট শামসুল হক। পরবর্তীতে স্থানীয়রা পুরো কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় একাধিক ঠিকাদাররা জানান, এলএ-৩৫ গ্রেডের পাথর ও সিলেট চান বালু সমপরিমাণ মিশ্রণ করে ম্যাকাডাম দিয়ে ঠিকাদারের সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। ম্যাকাডম শেষে লুচ পাথরে ঢেকে সিলেট চান বালু দিয়ে কমপ্যাকশন করে প্রাইম করার কথা। প্রাইম শেষে পুনরায় সিলেট চান বালু দিয়ে ঢেকে দিয়ে তা পরিষ্কার করে ৪০ মিলি মিটার কার্পেটিং শেষে ১০ মিলি মিটার সিল কোড করার কথা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন সড়ক বিভাগের কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে তাদের উপস্থিতিতে সড়কে শুধু তিন থেকে চার ইঞ্চি লোকাল বালু দিয়ে তার ওপর কিছু মরা পাথর দিয়ে ম্যাকাডমের কাজ করেছে। সেই ম্যাকাডমে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়াও রয়েছে। এভাবে ম্যাকাডম করে তার ওপর লোকাল বালু দিয়ে নামকাওয়াস্তে প্রাইম করে তার ওপর আবার লোকাল বালু ছিটিয়ে কমপ্যাকশন ও পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করায় ঢালাই স্থায়ী হয়নি। তারা আরও জানান, মাগুরা থেকে ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়কের সব জায়গাই একই অবস্থা। সিডিউল অনুযায়ী নির্মিত সড়কের কোথাও সিলকোড করা হয়নি। এছাড়া সড়কের বিভিন্নস্থানে গাইড ওয়াল দিয়ে পাইলিং করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে বাঁশ ও ড্রাম শিট দিয়ে পাইলিং করা হয়েছে। যা সড়ক কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হতে না হতেই ধসে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার মাহফুজ খান সাংবাদিকদের বলেন, লেবাররা সাইট চুক্তিতে কাজ করেছে। সাইট বুঝিয়ে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সুনাম দুর্নাম নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা ভুল করলেও তিনি নিজে প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করে কাজের মান খরাপ হলে পুনরায় প্রাইম করে নতুন করে কাজ করবেন বলেও উল্লেখ করেন। প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক বিভাগের এসও মোঃ আবু হানিফ মিয়া বলেন, কাজ নিয়ে সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন। জুন মাসে ব্যস্ততার জন্য প্রতিদিন তিনি সাইটে যেতে পারছেন না। শীঘ্রই তিনি সাইটে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। কাজের মানের ব্যাপারে কোন আপোস করা হবে না। কাজ খারাপ হলে ঠিকাদারকে পুনরায় কাজ করতে হবে। সময় সুযোগ করে তিনি সাইট পরিদর্শন করবেন বলেও জানিয়েছেন।
×