এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ বাসস্থান ও কর্মস্থলে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রবণতাটি সন্তানদের মধ্যে জাগিয়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। জলাধার সংরক্ষণ ও নদীর পুনর্জীবন দানের বিষয়টিও এবার জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে, যা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় বর্তমান সরকার নানা আঙ্গিকে কাজ করে চলেছে। জোরেশোরে পরিবেশ দিবস পালনের ফলে দেশে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষ করে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মতো পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও এখন অনেক বেশি সোচ্চার ও সচেতন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানব সমাজ যে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে সে কথা বার বার আলোচিত হচ্ছে। মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণেই প্রকৃতি এখন তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী কোনদিকে যায়, সেটা হলফ করে কেউই বলতে পারেন না। তবে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরিত্রী মনুষ্য বসবাসের উপযুক্ত থাকবে বড়জোর আর কয়েক শ’ বছর। তাই মানব সমাজ যদি নিজেদের মহাবিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে তাদের সামনে একটা পথই খোলা। গ্যালাক্সিতে নতুন আবাসের সন্ধান করে সেখানে বসতি স্থাপন করতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। পৃথিবী হলো মানুষসহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, বনভূমি হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে চিরচেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ক্রমেই উষ্ণতা বাড়ছে, বিগত ২০১৬ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই আশঙ্কা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচের ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, এ্যাসেসমেন্ট অব সি লেভেল রাইজ অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড এ্যানালাইসিস অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবু মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে নতুন করে অভিযোজনের পরীক্ষা দিতে হবে। তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ খুঁজে বের করতেই হবে। মানুষকে আন্তরিক হতে হবে পরিবেশ সুরক্ষায়।
শীর্ষ সংবাদ: