ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াদ-সাকিবের পর মুশফিকুর রহীম

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২২ জুন ২০১৯

 রিয়াদ-সাকিবের পর মুশফিকুর রহীম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার নিয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রতিটি বিশ্বকাপে দলগতভাবে গৌরবজনক কিছু করতে পারলেও ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে খুব বেশি আহামরি তেমন কিছুর দেখা পাওয়া ছিল দুষ্কর। বিশেষ করে ব্যাটিং নৈপুণ্যে! ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিও হাঁকাতে পারেননি। মোহাম্মদ আশরাফুল ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রভিডেন্সে ৮৭ রানের যে ইনিংস খেলেছিলেন সেটিই ছিল দীর্ঘদিন ধরে দেশের পক্ষে কারও সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য। তবে ২০১৫ সালে তামিম ইকবাল ৯৫ রান করে তাকে টপকানোর পর ওই আসরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১০৩ ও ১২৮* রানের দুটি ইনিংস খেলেন। বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান রিয়াদের পর এ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান জোড়া শতক উপহার দিয়েছেন। অবশেষে এ দু’জনের পর চলতি আসরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে ৯৭ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহীম। বিশ্বকাপে নিজের ২৬তম ম্যাচে এসে এই ইনিংস খেলতে পারলেন বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারের এ নির্ভরতা। এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেঞ্চুরি সংখ্যা ৫। মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এ সপ্তম সেঞ্চুরির পর প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার সব ক্রিকেটার তাকে ঘিরে ধরে মাঠ ছেড়েছেন, অভিনন্দিত করেছেন তাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসে বাংলাদেশ দল ফেবারিট পাকিস্তানকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। ২০০৩ বিশ্বকাপে কোন ম্যাচই জিততে না পারা দলটি ২০০৭ বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মতো পরাশক্তিদের। ২০১১ বিশ্বকাপে আরও দুরন্ত হয়ে ওঠা টাইগাররা হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে। ২০১৫ বিশ্বকাপে দুর্বার বাংলাদেশ আবার ইংল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে পর্যুদস্ত করে। কিন্তু চোখে লাগার মতো ব্যাটিং পারফর্মেন্স বলতে ছিল শুধু ২০০৭ বিশ্বকাপে আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রভিডেন্সে তার এই ব্যাটিংয়েই জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের সেরা নৈপুণ্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে আশরাফুলকে সর্বপ্রথম পেছনে ফেলেন তামিম। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেলসনে ১০০ বলে ৯৫ রানের যে ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন, তাতে করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ দল। তবে সেই বিশ্বকাপেই দেশের পক্ষে প্রথম শতক উপহার দেন রিয়াদ। তামিম ২৬টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে যা পারেননি, রিয়াদ বিশ্বকাপে নিজের মাত্র সপ্তম ইনিংসে (অষ্টম ম্যাচ) ব্যাট করতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকান এ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের ম্যাচেই আবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ৪ বিশ্বকাপে যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে কেউ সেঞ্চুরিই হাঁকাতে পারেননি, সেখানে পঞ্চম বিশ্বকাপে দল পেয়ে যায় টানা দু’টি জোড়া শতক। গত বিশ্বকাপে আগের যে কোন আসরের চেয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পারফর্মেন্স ছিল সবচেয়ে ভাল। এ্যাডিলেডে যেদিন রিয়াদ শতক করলেন, মুশফিক সেদিন খেলেছিলেন বিশ্বকাপে তার সেরা ইনিংস। মাত্র ৭৭ বলে ৮৯ রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। একই আসরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ৭১ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন। কিন্তু ম্যাজিক ফিগার ‘তিন অঙ্কে’ পৌঁছুতে পারেননি আর কেউ। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা তামিম, সাকিব, মুশফিক আর রিয়াদ। মুশফিক, তামিম নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। আর রিয়াদ ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। কারণ সাকিব একাই হয়ে উঠলেন দুরন্ত। টানা দুই অর্ধশতক হাঁকানোর পর সেঞ্চুরিও পেয়ে গেলেন। রিয়াদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে তিনি কার্ডিফে ৮ জুন ১২১ রানের ইনিংস খেলেন ১১৯ বলে। বিশ্বকাপে শতকের দেখা পাওয়ার জন্য তার লেগেছে ২৪ ইনিংস। পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৯৯ বলে ১২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন অন্যরা। তামিম, মুশফিক, রিয়াদ কিছুই করতে পারেননি। মুশফিক প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু এরপর ১৯, ৪৪ ও ১ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। মিডলঅর্ডারের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা হওয়ার কারণে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। ৩৮২ রানের পাহাড় টপকে দলকে জেতানোর কঠিন চ্যালেঞ্জে তিনি যখন ব্যাট হাতে নেমেছিলেন তখনও যোজন-যোজন দূরে বাংলাদেশ দল। ২ উইকেটে ১০২ রান তখন, ৩১.৫ ওভারে দলকে করতে হবে আরও ২৮০ রান। অসম্ভব সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। চার-ছক্কা না হাঁকিয়ে মাথা ঠা-া রেখে বলে বলে রান করে দলের ইনিংস মেরামত করেন মুশফিক। ৫৪ বলে পেয়ে যান ফিফটি। তবে তামিমের সঙ্গে জুটিটা ৪২ রানের বেশি লম্বা হয়নি। চতুর্থ উইকেটে লিটন দাসও ৩১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তার সঙ্গে। তবে পঞ্চম উইকেটে সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গীকে পেয়ে যান। রিয়াদের সঙ্গে এই জুটিতে মুশফিক তোলেন ৯৭ বলে ১২৫ রান। এতে করেই জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রিয়াদ ৫০ বলে ৬৯ রান করে সাজঘরে ফেরার পর আর সেটি হয়নি বাকিদের ব্যর্থতায়। মুশফিক একাই লড়েছেন। সাব্বির রহমান (০), মেহেদী হাসান মিরাজ (৬) সাজঘরে ফিরে গেছেন দ্রুতই। আর মুশফিক ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। বিশ্বকাপে তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে শতক। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপে পঞ্চম শতকটি মুশফিকের প্রথম। সে জন্য বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচ খেলতে হয়েছে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে’। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। দীর্ঘ ২১ ইনিংস ও ৯ মাস পর আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুশফিক। মাঝে ৯৯ রানের একটি ইনিংসসহ ৫টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। ২১০ ওয়ানডের ১৯৬ ইনিংসে ব্যাট করে এখন তার রান ৫৮০২। তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৬০০০ ওয়ানডে রানের সবচেয়ে নিকটতম তিনিই। বিশ্বকাপে অবশ্য দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক মুশফিক। ২৬ ম্যাচের ২৫টিতে ব্যাট করে ৩৭.৭০ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৫ অর্ধশতকসহ তিনি করেছেন ৭৫৪ রান। চলতি আসরে ৫ ম্যাচেই ৪২৫ রান করা সাকিব এখন সবার ওপরে ২৬ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি, ৭ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৩.৮৬ গড়ে ৯৬৫ রান নিয়ে। তৃতীয় স্থানে আছেন তামিম। তিনি ২৬ ম্যাচে ২৫.০৭ গড়ে করেছেন ৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৬৫২ রান।
×