ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর ফায়ার সার্ভিস ভবনে ফাটল ॥ আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২২ জুন ২০১৯

 যশোর ফায়ার সার্ভিস ভবনে ফাটল ॥ আতঙ্কে  কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে সংস্কার না করায় যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পুরাতন দোতলা ভবনে ও ফায়ারম্যানদের জরাজীর্ণ ব্যারাকের বিভিন্ন স্থানে বিপজ্জনক ফাটল, বিমের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পড়ে রড বের হয়ে রয়েছে। নির্মাণের এত বছরেও এখানে উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি ধসে পড়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। যে কোন সময় বিল্ডিং ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা দেখা দিতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সূত্র মতে, ১৯৬৪ সালে যশোর শহরের ভোলা ট্রাঙ্ক রোডে দুই একর জায়গার ওপর স্থাপিত হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস। জনবলের অভাব না থাকলেও ৪০ বছরের পুরাতন দুটি গাড়ি ও কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে এ অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভবনটির নিচতলায় রয়েছে যশোর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তার অফিস কক্ষসহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জায়গা। ২য় তলায় রয়েছে এখানকার কর্মকর্তার বাসস্থান। পাশের ভবনে স্টাফদের ব্যারাক। এখানে নিয়মিতভাবে বসবাস করেন ৩৫ জন। ব্যারাকে বসবাসকারীর মধ্যে রয়েছেন স্টেশন অফিসার, ফায়ারম্যান, টিম লিডার, গাড়ি চালক, বাবুর্চি ও ঝাড়ুদার। কক্ষগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, গাড়ি রাখার জায়গায় ও স্টাফদের ব্যারাকের বিমের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙ্গে পড়ে রড বের হয়ে আছে। তাছাড়া স্টাফদের ব্যবহারের জন্য বাথরুমগুলোর অবস্থাও করুণ। বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা, কমোড ব্যবহারের অনুপযোগী। বিদ্যুত ব্যবস্থা নাজুক। পুরনো আমলের সেই ওয়্যারিং দিয়ে চলছে ভারি ভারি যন্ত্রপাতি। স্টেশনের টাওয়ারও বহু পুরনো। একদিকে ঝুঁকে পড়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরা অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বিপণ্ণ মানুষের পাশে থাকেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এখন তারা নিজেরাই আতঙ্কে সময় পার করছেন। বর্ষাকালে ব্যারাকের রুমে হাঁটুপানি জমে থাকে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তার মধ্যে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকতে হয় তাদের। কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির ভগ্নদশা সম্পর্কে কয়েকবার লিখিতভাবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত এই ভবনের মেরামত কিংবা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য এখানে যে দুটি গাড়ি রয়েছে সেগুলোর বয়স ৩৫-৪০ বছর। পুরাতন গাড়ি হওয়ায় জেলার কোথাও আগুন লাগলে দ্রুততম সময়ে পৌঁছাতে পারে না। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে নেভানোর মতো অত্যাধুনিক কোন গাড়ি বা সরঞ্জাম নেই স্টেশনটির। এ বিষয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, বর্তমানে তাদের যে ফায়ার লেডার গাড়ি রয়েছে, এটি সর্বোচ্চ তিন থেকে চারতলা ভবনের আগুন নেভানোর ক্ষমতা রাখে। যার কারণে জেলার শহর ও শহরতলীর বহুতল ভবন ও মার্কেটগুলো প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে রয়েছে। পুরাতন গাড়ি নিয়েই বর্তমান সময়ের অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ভবনগুলো অনেক পুরনো। ভবনটির দুরবস্থার কারণে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন সব সময়।
×