ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে, গুঁড়া দুধ আগেই বেড়েছে

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২২ জুন ২০১৯

 চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে, গুঁড়া দুধ আগেই বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে চিনির দাম। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে শুল্ক না বাড়ালেও সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নতুন করে বাড়েনি। আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাজেট ঘোষণার পরের দিনই গুঁড়ো দুধের দাম বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, কাপ্তানবাজার, ফকিরাপুল বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট এবং মিরপুর সিটি কর্পোরেশন বাজারের খুচরা দরদাম থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এ সপ্তায় ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। প্রতিকেজি আদা ১৪০-১৮০ টাকা এবং ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি রসুন। চাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ-মাংস ও শাক-সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কাপ্তানবাজারের মুদিপণ্যের ব্যবসায়ী রাজিব হাসান সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট ঘোষণার পর শুধু চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া আর কোন পণ্যের দাম এখনও বাড়েনি। পুরো রমজানে এবার চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাজেটে এবার চিনি আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে তাতে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। মিলমালিক ও চিনির কাঁচামাল আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে নেতিবাচক কোন ভূমিকা না নিলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। প্রসঙ্গত, চিনি আমদানিতে র-সুগারের ক্ষেত্রে প্রতি মে. টন ২ হাজার টাকা এবং রিফাইন্ড সুগারের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ হাজার টাকা হারে স্পেসিফিক ডিউটিসহ ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বিদ্যমান রয়েছে। তবে স্থানীয় চিনি শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিকৃত র-সুগারের স্পেসিফিক ডিউটি ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা এবং রিফাইন্ড সুগারের ডিউটি সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া উভয় প্রকার সুগারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মূসক নিবন্ধিত গুঁড়োদুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ শতাংশ রেয়াতি হারে গুঁড়োদুধ আমদানির সুযোগ রয়েছে। দেশীয় ডেইরি ও দুগ্ধ খামারিদের সুরক্ষায় গুঁড়োদুধের বিদ্যমান রেয়াতি আমদানি শুল্কহার ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এদিকে, গুঁড়োদুধ ও চিনির ওপর শুল্ক বাড়ানোর ফলে ইতোমধ্যে খুচরা বাজারে এ দুটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ ভোক্তা বলছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এবার বিভিন্ন পর্যায়ে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তার কথা চিন্তা না করেই বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের নিয়মিত ক্রেতা বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা কামরুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পাসের আগে বেশকিছু বিতর্কিত ইস্যুর মীমাংসা করা জরুরী হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, চিনি ও গুঁড়োদুধের দাম বাড়ানের পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। কারণ, এ দুটি পণ্যের সঙ্গে সরাসরি সাধারণ ভোক্তা জড়িত। একইভাবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎসে কর কমানো হয়েছে সেখানে গরিব মানুষের সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি হাস্যকর। বাজেট পাসের আগেূ বিষয়গুলো সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারগুলোতে রসুন, আদা ও মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কাপ্তানবাজারের পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রেতা শামীম বলেন, রসুনের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারেই রসুনের কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। যে কারণে আমাদেরকে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩৫ টাকায়। বাজারে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। এছাড়া সরু চাল ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। এছাড়া পাইজাম ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা এবং মোটা চাল ৩৪ টাকা থেকে ৩৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
×