ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াইজঘাটে ডিঙ্গি নৌকাসহ এরা তলিয়ে যায়

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চের ধাক্কায় নিখোঁজ ভাইবোনের লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২২ জুন ২০১৯

 বুড়িগঙ্গায় লঞ্চের ধাক্কায় নিখোঁজ ভাইবোনের লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ডিঙ্গি নৌকাসহ নিখোঁজ ভাইবোনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে নিহত দুই শিশুর মাসহ আরেক শিশু ও নিহতদের মামা এবং নৌকার মাঝি। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, লঞ্চের সারেং ও নৌকার মাঝির গাফিলতির কারণেই ভাইবোনের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। নির্ধারিত গতিতে লঞ্চ চালালে এবং ডিঙ্গি নৌকার মাঝি উভয়ই দেখেশুনে চলাচল করলে দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারত। নিহতদের পরিবারকে বিআইডব্লিউটিএ-এর তরফ থেকে দুই লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সদরঘাটের এক নম্বর পন্টুন বরাবর মাঝ নদীতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস জানায়, একটি ডিঙ্গি নৌকা করে ওয়াইজঘাট থেকে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ যাচ্ছিল একটি পরিবার। এ সময় মাঝ নদীতে এমভি পুবালী-৫ লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকায় থাকা সবাই নিখোঁজ হয়ে যায়। সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয় জনতা, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ জোসনা বেগম (৩৭), শামিম হাওলাদার (৩০) এবং জোসনা বেগমের ছয় মাস বয়সী মেয়ে নুসাইবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার ঘোষণা দেয়। আর নিখোঁজ হয় জোসনার বড় ছেলে মিশকাত (১২) ও মেঝো মেয়ে নুসরাত (৫)। সূত্র বলছে, তাদের দুর্ঘটনার ঘণ্টাখানের মধ্যেই উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত হওয়ার পর তাদের উদ্ধারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। খবর পাওয়ার পর থেকেই নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল উদ্ধারে অভিযান চালাতে থাকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে তল্লাশি চলতে থাকে। শুক্রবার বেলা প্রায় বারোটার দিকে মেশকাতের আর সোয়া বারোটার দিকে নুসরাতের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন ডুবুরিরা। কোস্টগার্ড সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম জানান, ডিঙ্গি নৌকাটি যেখানে ডুবেছিল তার পাশ থেকেই মেশকাত ও নুসরাতের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন ডুবুরিরা। কেরানীগঞ্জ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা সালাহ উদ্দিন মিয়া জানান, নিহত দুই শিশুর বাবার নাম বাবুল ফরাজি। তাদের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার উত্তমপুর গ্রামে। বাবুল ফরাজি কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ এলাকায় তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন। কালিগঞ্জ পশ্চিমপাড়া আবুল মিয়ার বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করেন। ঈদের ছুটিতে তিনি কেরানীগঞ্জেই থেকে যান। তবে তার স্ত্রী সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাবুল ফরাজি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিন সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী জোসনা বেগম লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ওদের সঙ্গে বিজিবিতে চাকরিরত তার শ্যালক শামীম হাওলাদার ছিল। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওরা সদরঘাটে এসে নামে। সেখান থেকে কেরানীগঞ্জের বাসায় আসার উদ্দেশে ওয়াইজঘাট থেকে একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিল। লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। সদরঘাট নৌ থানার ওসি রেজাউল করিম ভূইয়া জানান, নিহত দুই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নেয়ার আবেদন করা হয়। পরে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিনা ময়নাতদন্তে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে নৌ-দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুবুল ইসলাম, পরিচালক শফিকুল হক, সদস্য (অপারেশন প্ল্যানিং) দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমানসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ঢাকা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, নিহত দুই ভাইবোনের পরিবারকে প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিবহন পরিদর্শক মোঃ সেলিম জানান, পুবালী লঞ্চটি সদরঘাটে যাত্রী নামিয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। নৌকাটি লঞ্চের পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। লঞ্চের সারেং এবং মাঝি উভয়ই দেখেশুনে চলাচল করলে হয়ত দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারত। লঞ্চের গতি তুলনামূলক বেপরোয়া থাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
×