ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১৫ জন আটক

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২২ জুন ২০১৯

  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১৫ জন আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনুষ্ঠিত হলো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা। শুক্রবার দ্বিতীয় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রেক্ষাপটে নানা পদক্ষেপের মধ্যে শুক্রবারের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ নানা অপরাধে আটক করা হয়েছে অন্তত ১৫ জনকে। বরিশালে বৈরী আবহাওয়ার কারণে যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারায় পরীক্ষা দিতে পারেনি দুশতাধিক পরীক্ষার্থী। পরে তারা কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এবারো শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৪ ধাপে। গত ২৪ মে প্রথম ধাপে ২৫ জেলায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা মোটামুুটি শান্তিপূর্ণ হলেও সাতক্ষীরা ও লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশ্নফাঁসের চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৪০ অপরাধীকে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এসএসআইয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের আটক করেছিল র‌্যাব। ৩১ মে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপেও বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নফাঁস, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার আগেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কঠোর মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সরকার প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। গত দুই ধাপের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সকলকে গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর হতে জেলাভিত্তিক মনিটরিং টিম প্রেরণের পাশাপাশি এবার মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দফতরসমূহের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিভাগীয় শহরের পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন বলে জানানো হয়। এমন অবস্থার মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা। তৃতীয় ধাপে পরীক্ষা যেসব জেলা ও উজজেলায় ॥ শরীয়তপুর জেলার সদর, জাজিরা, ডামুড্যা, মাদারীপুর জেলার শিবচর, কালকিনি, ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী, নরসিংদী জেলার সদর, পলাশ, শিবপুর, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার সদর, ঘাটাইল, সখিপুর, গোপালপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার, কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর, কুলিয়ারচর, ইটনা, মিঠামইন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সব উপজেলা, শেরপুর জেলার সব উপজেলা, রাজবাড়ী জেলার উপজেলা, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, মহেশখালী, রামু, চাঁদপুর জেলার সদর, হাইমচর, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, মাধবপুর, চুনরুঘাট, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর। এছাড়া জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, দক্ষিণ সুরমা, পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, পটুয়াখালী জেলার বাউফল, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, রাঙাবালি, সাতক্ষীরা কলারোয়া, কালিগঞ্জ, নাটোর জেলার নলডাঙ্গা, লালপুর, বাগাতিপড়া, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ, জলঢাকা, ডিমলা, লালমনিহাট জেলা উপজেলা এবং ঠাকুরগাঁও জেলার সব উপজেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় জালিয়াতি করার সময় ঝালকাঠিতে সাত জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে চারজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে উঠিয়ে তিনজনকে এক বছর করে কারাদ- এবং একজনকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। ঝালকাঠির কীর্তিপাশা এলাকা থেকে পরীক্ষার্থী মনীষা বিশ্বাস, তার স্বামী রাজাপুরের বাসিন্দা অসীম বিশ্বাস এবং ভাই কিশোর দেউড়িকে আটক করা হয়। তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর তৈরি করছিলেন এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে সরবরাহেরও চেষ্টা করছিলেন। পরে তাদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হলে প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া ঝালকাঠি শহরের মহিলা কলেজ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা থেকে রাজাপুর উপজেলার বলাই বাড়ি গ্রামের নুরুল ইসলাম রিপন, ঝালকাঠি সদরের চর ভাটারাকান্দা এলাকার রাশেদ গাজী ও খাগুটিয়া এরাকার সিয়াম হাওলাদার নামের তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তারা মোবাইলের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তরপত্র সরবরাহ করছিলেন। এর বাইরে আরও একজনকে অসদুপায় অবলম্বন করায় আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। বরিশাল ॥ বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি প্রায় দুশতাধিক পরীক্ষার্থী। পরবর্তীতে তারা উপস্থিত হয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে পরীক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ৩২টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। প্রবেশপত্রের শর্ত অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরকারী বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে দুশতাধিক পরীক্ষার্থী ১০টার দিকে কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের পরে আসার তাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পরীক্ষার্থীরা সরকারী বরিশাল কলেজ কেন্দ্রের প্রধান ফটক ঠেলে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে পুলিশ তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। রিয়াজ শরীফ, হিরণ বৈরাগী, কেএম তরিকুল ইসলামসহ পরীক্ষা দিতে না পারা একাধিক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, হঠাৎ করেই বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে দূরের পরীক্ষার্থীদের সরকারী বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে আসতে বিলম্ব হয়। অর্থাৎ সকাল ১০টা পাঁচ মিনিটে এসে তারা দেখতে পায় গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর শত অনুরোধ করেও কোন কাজ হয়নি। ফলে তারা দুশতাধিক পরীক্ষার্থী বাহিরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে নগরীর অন্যান্য কেন্দ্রেও বিলম্বের কারণে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারেননি। বিএমপির উপ-কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা জানান, পরীক্ষার্থীরা সঠিক সময় আসতে না পারায় তাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বরিশালে দুইশ’ শূন্য পদের বিপরীতে ৩২টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার। ঝিনাইদহ ॥ ঝিণাইদহ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র কেনাবেচার সময় ৬ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। শহরের আরাপপুরের একটি বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সকালে শহরের আরাপপুরের আব্দুল মজিদের বাসায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেনাবেচা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তি সেখানে অভিযান চালানো হয়। সেসময় প্রশান্ত কুমার দাস, আব্দুল মজিদ, আল মাউন, তাইনুর আলম, হাসান ইকবাল ও রিপন হোসেন নামের ৬ জনকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয় বিক্রির ৬০ হাজার টাকা। এরা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আসা এ প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিক্রি করে জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে নিচ্ছিল। তবে পরীক্ষা শেষে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর খায়রুল ইসলাম আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে বিক্রি হওয়া প্রশ্নপত্র মেলানোর পর কোন মিল খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ॥ চট্টগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ধরা পড়েছে এক পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, আটক ফরিদ উদ্দিন সোবহান নামের এ যুবক কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার ইব্রাহিম কুতুবীর পুত্র। শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কায়সার খসরু গণমাধ্যমকে জানান, ফরিদ উদ্দিন সোবহান নামের এ যুবক বাঁশখালীর জনৈক মমতাজুল ইসলামের পুত্র তারিকুল ইসলামের হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষার হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে সে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তার সঙ্গে একটি চক্র রয়েছে, যে চক্রের মোঃ মামুন এবং আবুল কালাম নামের দুই সদস্যের মাধ্যমে সে এ ভর্তি পরীক্ষা দিতে চুক্তিবদ্ধ ছিল। অত্যন্ত সূক্ষ্ম জালিয়াতির মাধ্যমে প্রবেশপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে সে পরীক্ষার হলে বসেছিল। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
×