ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর পাইল বাকি আর মাত্র চারটি

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২২ জুন ২০১৯

 পদ্মা সেতুর পাইল বাকি আর মাত্র চারটি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ আষাঢ়ের শুরুতেই প্রকৃতিতে ভরা বর্ষার আমেজ। মেঘের গর্জন আর পাইল ড্রাইভের ছন্দমাখা শব্দ যেন একাকার। কিন্তু এই শব্দ আর বেশি বাকি নেই। সেতুর জাজিরা সংলগ্ন মাঝের চর এলাকার ২৬ ও ২৭ নম্বর খুঁটিতে (পিয়ার) চলছে এখন পাইল স্থাপনের কাজ। দু’টি করে পাইল স্থাপন বাকি রয়েছে এই দু’খুঁটিতে। ২৬ নম্বর খুঁটিতেও সাতটি পাইলের পাঁচটি পাইল এরই মধ্যে বসে গেছে। আর ২৭ নম্বর খুঁটিতেও অনুরুপ পাঁচটি পাইল বসেছে। এখন এই দুই পিয়ারেই পাইল ড্রাইভ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই চার পাইল বসানোর কাজও সম্পন্ন হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ভিত তৈরির অন্যতম প্রধান কাজ পাইল স্থাপন সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এদিকে পাইলের বসানোর পর রড লাগানো এবং কংক্রিটিংয়ের মাধ্যমে খুঁটিও উঠে যাচ্ছে সমানে। ৪২ খুঁটির মধ্যে এরই মধ্যে ২৯ খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি খুঁটিগুলো সম্পন্ন হওয়ার পথে পদ্মায় রাতদিন চলছে নির্মাণযজ্ঞ। বর্ষায় পদ্মা উত্তাল, মেঘ-বৃষ্টি ও রোদের মধ্যেই চলছে রাতদিন কাজ। তাই পদ্মার তলদেশের বহু গভীর থেকে বিশাল বিশাল পিয়ার মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। চার শ’ ফুটের বেশি গভীর থেকে পাইল করে সেতু নির্মাণ বিরল ঘটনা। সেই কাজটি হচ্ছে পদ্মার মতো উত্তাল নদীর ওপর। সেই পাইল স্থাপানের কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর নদীর তলদেশে নরম মাটিসহ নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। নক্সা পরিবর্তনসহ বিশ্বের প্রথমবারের মতো ট্যাম (খাঁজ কাটা) পাইলের নক্সা করা হয়। নদীতে ২৪০ পাইলের স্থলে ২২ খুঁটিতে আরও একটি করে পাইল বৃদ্ধি করে ২৬২ করা হয়। আর সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করে শেষ হতে যাচ্ছে এই পাইল স্থানের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি। বিশাল বিশাল স্টিলের টিউব জার্মানি হ্যামার দিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়। এরপর কাঁদা সরিয়ে রোড স্থাপন করে খুঁটি (পিয়ার ) তৈরি করা হয়। এদিকে ১৪তম স্প্যান বসতে যাচ্ছে আগামী ২৭ বা ২৮ জুন। ২৭ জুন সকালে স্প্যানটি কুমারভোগের বিশেষায়িত ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজে করে খুঁটির কাছে নিয়ে আসা হবে। সম্ভব হলে ২৭ জুনই স্প্যানটি বসানো হবে। কোন কারণে ওইদিন সম্ভব না হলে পরদিন ২৮ জুন এটি বসবে। এভাবেই সিডিউল তৈরি করা হচ্ছে বলে সেতু বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। ১৪তম স্প্যানটি বসতে যাচ্ছে সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১৫ ও ১৬ নম্বর খুটিতে। ‘৩-সি’ নম্বর স্প্যানটি বসানোর সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন। সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, স্প্যানটি বসানোর উপযোগী করে ইয়ার্ডের জেডির কাছে রাখা হয়েছে। ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিও স্প্যানটি বহনের সম্পূর্ণ উপযোগী করা হয়েছে। চীন থেকে আরও দু’টি স্প্যান এখন মাওয়ার পথে রয়েছে। সমুদ্রপথে এই এই স্প্যানটি দু’টি নিয়ে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীন থেকে রওনা হয়েছে। এদিকে এ পর্যন্ত আসা ২৪টি স্প্যানের মধ্যে ১৫ পরিপূর্ণ অবস্থায় ইয়ার্ড থেকে বের করে আনা হয়েছে। যার ১৩ খুঁটিতে উঠানো হয়েছে। আর দু’টি স্টোর করা হয়েছে খুঁটির কাছাকাছি মাঝের চরের প্লাটফর্মে। আর বাকি ৯টি স্প্যান ইয়ার্ডে ফিটিং করা হয়েছে বা হচ্ছে। এর মধ্য থেকেই একটি বসতে যাচ্ছে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর আইগার্ডার বসে গেছে ৩৩টি। আর রেলওয়ে স্লাব বসেছে ৩২০ ও রোডওয়ে স্লাব বসেছে ২৮। তবে এখানে একটি ক্রেন ইনস্টল করা হচ্ছে। এই ক্রেনটি সচল হলে প্রতিদিনই স্লাব বসবে এখানে। সেতুর ৫ নম্বর মডিউলের ডি নম্বর স্প্যান। অর্থাৎ এটি ‘৫-ডি’ নম্বর স্প্যানটি বসানোর উপযোগী করে শনিবার চরে স্টোর করা হয়। ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটি দু’টি এখনও সম্পন্ন না হওয়ায় পাশে এটি প্লাটফর্ম করে রাখা হয়েছে। ইয়ার্ডের জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ার কারণে এটি স্টোর করা হয়। জাজিরার কাছের ২৯ নম্বর খুঁটির কাছে ‘মাঝের চর’ এই তীরে এর আগে আরও একটি স্প্যান ঈদের পরদিনই প্লাটফর্মে স্টোর করা হয়েছে। এটি ‘৫-ই’ নম্বর স্প্যান।
×