ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা পাপড়ির ওপর হলদে ছোঁয়া, মিষ্টি গন্ধ ...

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২২ জুন ২০১৯

সাদা পাপড়ির ওপর  হলদে ছোঁয়া,  মিষ্টি গন্ধ ...

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ গোলাপের মতো নয়, আবার কাঠের সঙ্গে নেই কোন সম্পর্ক কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে ফুলটির নাম ‘কাঠ গোলাপ’। বড় আকারের পাতার মাঝখানে এক গুচ্ছ ফুল ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে মাদকতা তৈরি করে রাখে তার পাশ জুড়ে। পাঁচ-পাপড়ি মাঝখান থেকে হলুদের একটুখানি আভা উঁকি ঝুঁকি দেয়ার করণেই সাদা রূপ যেন আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। সাদা পাপড়ির ওপরে হলদে ছোঁয়া। মায়াময় মিষ্টি গন্ধ যুক্ত এই ফুল দেখে মনে হবে না এটি ‘গোলাপ’। কেউ তা বলবেও না। হঠাৎ করে কেউ দেখে বড়জোর বলতে পারে চম্পা ফুল। কেউ আবার এই নামেও ডাকে। তবে মজার বিষয় হলো বেশির ভাগ মানুষ এই ফুলটিকে ‘কাঠ গোলাপ’ নামেই চেনে। দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই কাঠ গোলাপ ফোটে। বিশেষ করে নদীর পাড় এলাকায় বেশির ভাগ চোখে পড়ে এই ‘কাঠ গোলাপ’ গাছ। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ব্রহ্মহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গফরগাঁও কলেজ রোড়ের পোস্ট অফিসের সামনে অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও ব্যবসায়ী খসরু ও নূরু মিয়ার কাছে এটি ‘কাঠ গোলাপ’। তারা বলেন, প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় এই গাছটি দেখে আসছি। এখনও দেখছি। রাতে যখন বাসায় যাই ‘কাঠ গোলাপ’-এর সুগন্ধ আমাকেসহ পথচারীদের মুখরিত করে। আবার কেউ এটাকে চাঁপা ফুল বলেও ডাকে। দেশে এমন একটি ফুল ফোটে অবহেলায় অনাদরে অনেকটা বনফুলের মতো। যিনি একবার এই ফুলের সুগন্ধ পেয়েছেন, তিনি আর ভুলতে পারবেন না। অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে ফুলের দোকানে এই ফুল খোঁজেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডঃ জসিম উদ্দিন ‘কাঠ গোলাপ’ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, এর ইংরেজী নাম ‘ফানগিপানি’। এটি দ্বিপদ প্লমিরিয়া বর্গের সদস্য। এই বর্গের মধ্যে ৭/৮ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এটি গুল্ম জাতীয়, কিংবা ছোট গাছের আকারের হয়। এ ধরনের উপজাতিগুলো সাধারণত আমেরিকা, মেক্সিকো, ওয়েস্টইন্ডিজ ও দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়াও ব্রাজিলের নানান এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীতে এ বর্গের প্রায় ৩শ’ নামধারী আলাদা ফুলের গাছ রয়েছে। গ্রীষ্মম-লীয় আবহাওয়ার সঙ্গে মিল থাকায় আমাদের দেশেও এই ‘কাঠ গোলাপ’ এর দেখা মেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় রয়েছে এ রকম দুটি গাছ। এটি সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার উঁচু, এর শাখা প্রশাখা খুব বেশি নয়। দেখে সহজেই বুঝে নেয়া যায় অন্যরকম বৃক্ষ। ফুলের বৈশিষ্ট্য অনেক। কোন ফুল বকের পালকের মতো সাদা। আবার কোনটি সাদা পাঁপড়ির মধ্যে হলদে ছোঁয়া, কোনটি আবার লালচে। ‘কাঠ গোলাপ’ ফুল নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গল্প। বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে এই ফুল প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রয়োজন। বৌদ্ধ মন্দিরে এই ফুল গাছ থাকতেই হবে। নিকারাগুয়া ও লাওসে এই ফুল জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। লাওসে এই ফুলের নাম চাজমা বা ডক চাজমা। গাছ থেকে পরাগায়ণ প্রক্রিয়ায় এই ফুল ফোটে। বসন্তকালে ফুল ফোটা শুরু হয়, বর্ষা অতিক্রম করে চলে ফুল ফোটা। একেক দেশে এই ফুলের একেক নাম। পারস্যতে নাম ইয়াসমিন, হিন্দী নাম চম্পা, গুজরাটে চাম্পো, থাইল্যান্ডে লিলাওয়াদি, মালয়েশিয়ায় পরিটনাক, ফিলিপিন্সে এর নাম কাকচিখি। হাওয়াই দ্বীপে এর নাম মিলিয়া। পুষ্পপ্রেমিক মোঃ হালিম উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ির বাগানে সম্প্রতি একটি কাঠ গোলাপের চারা ঢাকা থেকে এনে লাগিয়েছি শুধু সুগন্ধি পাওয়ার জন্য ...।
×