ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হতে পারে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র

ঐতিহ্য হারাচ্ছে সরল খাঁ দীঘি

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২২ জুন ২০১৯

ঐতিহ্য হারাচ্ছে সরল খাঁ দীঘি

খুলনার পাইকগাছার ঐতিহাসিক সরল খাঁ দীঘি ঐতিহ্য হারাচ্ছে। পাইকগাছা-খুলনা সড়কের পাশে অবস্থিত বিশাল এ দীঘিটির এখন বেহাল অবস্থা। দীঘির প্রায় সর্বত্রই কচুরিপনায় ভরপুর। সড়ক সংলগ্ন পাড় ছাড়া বাকি তিন পাড় ক্রমান্বয়ে অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। দীঘির পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি নানা ধরনের দোকান। এক কোণে আছে একটি কওমী মাদ্রাসা। দীঘির পাড়ে গোসল ও বাসন কোসন ধোয়ার পাকা ঘাটও রয়েছে। দীঘির পাড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এই পুকুরের পানি পরিশোধন করে পৌর এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পানি এখনও পুরোপুরি দূষিত না হলেও দূষণের সব ব্যবস্থা বিদ্যমান। অথচ এই দীঘিটিকে ঘিরে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে এটি হতে পারে খুলনার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র। খুলনা থেকে পাইকগাছা উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে পাকা সড়কের বাম পাশ ঘেঁষে প্রায় ১৬ বিঘা জমির ওপর সরল খাঁ দীঘি অবস্থিত। বিশাল আয়তনের সরকারী এই দীঘিটির এখন বেহাল অবস্থা। স্থানীয়রা জানান, দীঘিটিকে ঘিরে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দৃষ্টিন্দন করে সাজানো হলে এটি পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে, অবৈধ দখল বন্ধ হবে, সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ হবে, সর্বোপরি ঐতিহাসিক এই দীঘিটা হতে পারে এ জেলার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র। ঐতিহাসিক এই দীঘি দেখার জন্য অনেক মানুষ পাইকগাছায় আসেন। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরত্বের (খুলনার দিকে) এই দীঘিকে দিনাজপুরের রামসাগর, কুমিল্লার ধর্মসাগর দীঘির মতোই পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় বলে অনেকেই মনে করেন। এই দীঘির ইতিহাস সম্পর্কে পাইকগাছার একাধিক ব্যক্তি বলেন, মুরব্বিদের কাছে তারা শুনেছেন, এটা ছয়শ’ বছর আগে হযরত খান জাহান আলীর আমলে তার অনুসারী পীর সরল খাঁ এলাকাবাসীর সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এটি খনন করেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তারা বিভিন্নভাবে যেটা জেনেছেন তাতে এই দীঘি অষ্টাদশ শতাব্দীতে বার ভূঁইয়াদের আমলে খনন করা। সরল খাঁ নামে এক বিখ্যাত জমিদার এলাকাবাসীর মিঠা পানির ব্যবস্থার জন্য এই দীঘিটি খনন করেছিলেন। উভয় মতে, দীঘিটি সরল খাঁ খনন করেছিলেন। স্থানীয়রা জানান, ঐতিহাসিক সরল খাঁ দীঘির এখন বেহাল আবস্থা। তারা দূষণের হাত থেকে দীঘিটিকে রক্ষা করা এবং এই দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্থানীয়রা জানায়, সরল খাঁ দীঘির পানি এখনও কিছুটা ব্যবহার উপযোগী আছে। এই দীঘির পাড়ে মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে পরিশোধিত পানি সরবরাহের একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পুকুরের পানি পরিশোধন করে পাইকগাছা পৌর এলাকায় সরবরাহ করা হয়। পাইকগাছা পৌরসভা ও উন্নয়ন সংস্থা নবলোক এটি নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্লান্ট থেকে সরবরাহকৃত প্রতি লিটার পানির জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৮ পয়সা নেয় পৌরসভা। এ ছাড়া এই দীঘির পানি ফুটিয়ে ও ফিল্টার করে বহু মানুষ ব্যবহার করে থাকে। জরুরী ভিত্তিতে সরল খাঁ দীঘির কচুরিপনা অপসারণ, দীঘির পাড়ের অবৈধ দখল ও অবর্জনা ফেলা বন্ধসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলে বহু মানুষ উপকৃত হবে। সরল খাঁ দীঘিটি খুলনা জেলা পরিষদের অধীন। কিন্তু দীঘিটি সংস্কারসহ এর উন্নয়নে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, অন্যান্য সরকারী পুকুর-দীঘির ন্যায় সরল খাঁ দীঘিটিও জেলা পরিষদের। তবে এর দেখভাল করছে পাইকগাছা পৌরসভা। এ দীঘিতে মানুষ গোসল করে। পুকুরের পানি ফুটিয়ে ও ফিল্টার করে পান করা হয়। পাইকগাছা পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, সরল খাঁ দীঘির পানি অনেকটা ভাল রয়েছে। গোসল ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। অনেকে ফিল্টার করে এই দীঘির পানি ব্যবহার করে থাকেন। তিনি বলেন, এই দীঘির পানি যাতে আরও স্বচ্ছ ও অধিক ব্যবহার উপযোগী হয় এবং দীঘির পাড়কে দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে খুলনা মহানগরীর শহীদ হাদিস পার্কের মতো দর্শনীয় করা যায়। এটা করা গেলে পর্যটকরাও আকৃষ্ট হবেন। তিনি জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু এ ব্যাপারে একটি প্রজেক্ট আনার চেষ্টা করছেন। -অমল সাহা, খুলনা অফিস
×