ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সময়ের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে চান তারা

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২২ জুন ২০১৯

 সময়ের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে চান তারা

নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়ে। দেশটির ছোট্ট দ্বীপ সোমারয়। বাসিন্দা মাত্র ৩৫০ জন। সময়ের ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চাইছেন, চাইছেন ঘড়ির অবসান ঘটাতে। বিশ্বের প্রথম টাইম-ফ্রি এলাকা ঘোষণা করে সময়ের নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে আসতে চান তারা। গ্রীষ্মে রাত দুইটায় দ্বীপের বিচে বন্ধুর সঙ্গে বসে কফি খাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর ভোর চারটায়ও বাড়ির সামনে ঘাস কাটা যায়। দ্বীপটিতে প্রচার দলের নেতা কেজেল ওভ ভেডিং নরওয়ের সরকারী সম্প্রচার মাধ্যম এনআরকেকে বলেন, ‘সারাবিশ্বেই মানুষ চাপ ও হাতশায় নিমজ্জিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় মনে হয় ঘড়ির ফাঁদে আটকাপড়ার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা টাইম-ফ্রি অঞ্চলে পরিণত হব, যাতে সবাই তাদের জীবন পুরোপুরি উপভোগ করবে... আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাতদিনের পুরো ২৪ ঘণ্টাই (২৪/৭) নমনীয় করা। কেউ যদি ভোর চারটায় তার বাড়ির সামনে ঘাস কাটতে চায়, তবে তিনি সেটা করতে পারবেন।’ দ্বীপের বাসিন্দাদের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন ও মৎস্য শিকার। তাদের কাজকর্ম শুরুর স্বাভাবিক সময়সীমা অবসান করার আহ্বান জানানো হবে এবং তাদের যখন খুশি, যা খুশি করার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান ভেডিং। যদিও শিশুদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। তবে নবেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। গ্রীষ্মে বাসিন্দারা বোঝে যখন সূর্য ওঠে তখন সেটা ১৮ মে। আর ২৬ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত সেটা অস্ত যাবে না। প্রচারাভিযানের ফেসবুক পেজে ভেডিং বলেন, একটানা দিনের আলো থাকে। রাত দুইটায় যদি আপনার রং করতে চান, সেটা করতে পারবেন। আমরা যদি রাত চারটায় সাঁতার কাটতে চাই, সেটাও করতে পারব। বাসিন্দারা আরও বলেন, ‘আমরা এখানে মধ্যরাতের সূর্যকে প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করি। আর হ্যাঁ, রাত দুইটায় বিচে বন্ধুর সঙ্গে বসে কফি খাওয়া খুবই খাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পর্যটন কর্মকর্তারা এনআরকেকে বলেন, তাদের ধারণা এই প্রচারাভিযানে চতুরতা রয়েছে আর সেটা হলো গ্রীষ্মে আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করা। তবে দর্শনের এক অধ্যাপক এটাকে চমৎকার ধারণা অভিহিত করে অভিনন্দন জানান। ট্রন্ডহেইমের নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ট্রালস ইজিল ওয়েইলার বলেন, ‘এটা একটা চমৎকার ধারণা।’ তিনি বলেন, ‘মাত্র গত শতাব্দী সমাজ আটকে ছিল ঘড়ির হাতে। ফলে বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখা গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে যতক্ষণ প্রয়োজন ছিল, মানুষ ততক্ষণ কাজ করেছে, যখন ক্ষুধা লেগেছে, তখন মানুষ খেয়েছে আর যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তখন বিশ্রাম নিয়েছে। আধুনিক সমাজে ঘুম থেকে উঠে আমরা যা কিছু করি, সব কিছু সময়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দ্বীপটির বাসিন্দারা গত মে মাসে একটি জনসভা করে পার্লামেন্টে প্রকল্পটির বিষয়ে বিতর্কের জন্য এমপি কেন্ট গাডমুন্ডসেনের কাছে একটি আবেদন তুলে দেন। তিনি আইট্রমস সংবাদপত্রকে বলেন, তাদের চিন্তাধারায় নতুনত্ব রয়েছে। তিনি ধারণা দেন যে, গ্রীষ্ম ও শীতকালের পাশাপাশি এটা তৃতীয় বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সোমারয় দ্বীপে ভ্রমণকারীরা বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন এবং অনেকেই তাদের ঘড়ি দ্বীপ অভিমুখী একটি সেতুতে রেখে গেছেন। তবে দ্বীপটির সব বাসিন্দাই বিষয়টি নিয়ে সে রকম নিশ্চিত না। সোমারয় আর্কটিক হোটেলের রিসিপসনিস্ট ম্যালিন নর্ডহেইম বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি।-গার্ডিয়ান
×