ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানের ওপর হামলার অনুমোদন দিয়েও মত পাল্টান মার্কিন প্রেসিডেন্ট

পিছু হটলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২২ জুন ২০১৯

পিছু হটলেন ট্রাম্প

ইরানে সামরিক হামলার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে আকস্মিকভাবে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের বিপ্লবী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতি উত্তরে বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। এদিকে ড্রোন ভূপাতিত করার বিষয়ে ইরানের দাবি- আমাদের কাছে নিরপেক্ষ প্রমাণ আছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনটি আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় এটিকে ভূপাতিত করা হয়। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন ড্রোনটিকে ভূপাতিত করে ইরান চরম ভুল করেছে। দেশটিকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি, বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের। ইরানে হামলা প্রসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ইরানে হামলার প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুত করা হয়েছিল, যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে অবস্থান নিয়েছিল। শুধু অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছিল। এজন্য ইরানের দিকে কোন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি। শুক্রবারের আগের দিন এই হামলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক লোক হতাহতের আশঙ্কায় হামলার সিদ্ধান্ত থেকে আকস্মিকভাবে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, হামলা শুরুর সামান্য আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে হামলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। ইরানের সময় বৃহস্পতিবার ভোরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ওই দিন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকের পর ইরানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার কিছু সময় পর এই হামলার সময় নির্ধারণ করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের কিছু লক্ষ্যবস্তু যেমন রাডার সিস্টেম ও ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের স্থানে হামলার প্রাথমিক অনুমোদন দেন। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎ কেন তার মনোভাব পরিবর্তন করেন তা স্পষ্ট নয় বলে ওই কর্মকর্তা জানান। আবার ট্রাম্পের প্রশাসনই কেন হামলা থেকে পিছু হটল তাও জানা যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন কৌশল ও যুদ্ধ সরঞ্জামের কারণে পিছু হটেছে কি না সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মাটিতে এই হামলা শীঘ্রই চালাবে কি না তাও পরিষ্কার নয়। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার যৌক্তিকতা নিয়ে দেশটির সিনিয়র ডেমোক্র্যাট নেতা এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, এই মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনায় জড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ আমাদের সেনারা আর যুদ্ধে জড়াবে না- নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এখন একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছেন। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সঙ্কট জিইয়ে রাখার কোন মানে হয় না। আমাদের এখন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসা উচিত। তবে এ বিষয়ে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে। মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা প্রসঙ্গে ইরানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, মার্কিন ড্রোন ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। ইরানে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মার্কেস লেইটেনারের সঙ্গে শুক্রবার এক বৈঠকের সময় ইরানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। মার্কেস লেইটেনারকে আব্বাস আরাকচি বলেন, ইরানের জলসীমায় মার্কিন ড্রোনটির ভাঙ্গা অংশের প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা ইরানের জলসীমা থেকে ড্রোনটির কিছু অংশ উদ্ধার করেছি। ইরানকে চড়া মাসুল দিতে হবে ॥ মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) ভূপাতিত করে ইরান খুবই বড় ভুল করেছে। এক টুইটে একথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান তাদের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার কারণে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানালেও যুক্তরাষ্ট্র এ দাবি নাকচ করেছে। ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় থাকার সময় ইরান ‘বিনা উস্কানিতে’ এর ওপর হামলা করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি তেহরান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ড্রোন ভূপাতিত করে গুরুতর ভুল করেছে। এজন্য তেহরানকে মাসুল গুনতে হবে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বলেন, আমরা ইরানকে পরিষ্কার বলতে চাই দেশটি বর্তমান সময়ে যা করছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেউই যুদ্ধে জড়াতে চায় না। কিন্তু আমরা ইরানের একরোখা নীতি মেনে নিতে পারি না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অংশে অনুপ্রবেশ করেছে- এ অভিযোগ নিয়ে তারা জাতিসংঘে যাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু আমরা আমাদের আকাশ, মাটি এবং পানিপথ সুরক্ষিত রাখব। ইরানের ড্রোন ভূপাতিতের জবাব যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে দেবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ বেঁধে গেলে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে এবং তা অকল্পনীয় পরিণতি বয়ে আনবে।
×