ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

আকাশ পথে তানিয়ার সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২১ জুন ২০১৯

 আকাশ পথে তানিয়ার সঙ্গে

নারীর অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রায় ঘর থেকে বাইরে পা রাখাই শুধু নয় দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোও আজ সময়ের যৌক্তিক গতিপ্রবাহ। সেই লক্ষ্যে উন্নয়নের সর্ববিধ সূচকে বাংলাদেশের নারীদের যথার্থ অভিগমন সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরিতে যুগান্তকারী অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দুরন্ত গতিবেগে অগ্রসরমান নতুন সময়কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে আত্মশক্তি আর উদ্দীপ্ত চেতনায় দৃঢ়প্রত্যয়ী। সেখানে অর্ধাংশ নারী জাতির সময়োচিত অংশীদারিত্ব দেশের সার্বিক উন্নয়নের সূচক। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় নারীদের সফল সংযোজন কোনভাবেই পুরুষের চাইতে কম নয়। শিক্ষার হারে ক্রমবর্ধমান উর্ধগতি কর্মক্ষেত্রেও নারীর বীরদর্পে এগিয়ে যেতে মোটেও সময় নিচ্ছে না। ভিন্নমাত্রার পেশায় নিজেদের প্রমাণ করা ছাড়াও চালকের আসনেও স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে উজ্জীবিত। দূর-দূরান্তরে চালকের ভূমিকায় নারীদের অংশগ্রহণ, সড়ক, রেল কিংবা নৌপথে দৃশ্যমান না হলেও আকাশ পথে নারী পাইলট দক্ষতার সঙ্গে বিমান চালিয়ে যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে যাচ্ছে। আকাশ পথে মেয়েদের বিমান চালনা আকাশ কুসুম স্বপ্নই বটে। সেই স্বাপ্নিক আবিষ্টতা যখন বাস্তব জগতকে স্বাগত জানায় তখন সেই সত্য কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর। তেমনই অভিভূত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে ১৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানে। কন্যা নমিকে নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে ফিরতে বিমানে উঠলাম। হঠাৎ বিস্ময় আর মুগ্ধতার সঙ্গে মাইক্রোফোনে কণ্ঠ সচকিত হলো বিমান চালাবেন পাইলট তানিয়া। পাইলট তানিয়াকে আগে থেকেই চিনতাম সাংবাদিকতার পেশায় জড়িত হওয়ার কারণে। ২/১ বার সম্পাদকীয়ও লিখতে হয়েছে নারী পাইলটকে নিয়ে। যখন লিখেছি মনে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা কতভাবেই না সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরিতে নতুন সময়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে। যদিও সংখ্যায় এখনও এমন ব্যক্তিত্ব হাতেগোনার মতো। দূর-দূরান্ত থেকে দেশ-দেশান্তরে আকাশ পথে ভ্রমণ সত্যিই একজন অভাবনীয় শঙ্কিত অনুভব। কোন দিকে তাকাতেও ভয় লাগে। মেয়েরা শারীরিকভাবে নরম-মানসিকভাবে স্পর্শকাতর তারা যে কিভাবে আকাশ পথে অন্যত্র পাড়ি দেয় সেই বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। পাইলট তানিয়ার বিমান চালানোর অদম্য মনোবল দেখে তেমন ঘোর কেটেও গেল। তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ সময়ে আমরা জানি যান্ত্রিক কলাকৌশলের বৈজ্ঞানিক নিয়মবিধিতে নীল আকাশে বিমান পাখির ডানা মেলে উড়তে থাকে। তার পরেও যেহেতু চালকের আসনে কাউকে না কাউকে বসতে হয় নিশ্চয়ই তার দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা পুরো বিমান চালনার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা অবশ্যই রাখে। বিশেষ করে বিমান উড্ডয়ন এবং নামার সময় রানওয়েতে চাকা স্পর্শ করা যাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলে সেও এক অসম সাহসের বলিষ্ঠ মনোসংযোগ। সেখানেও তানিয়ার অসামান্য দক্ষতায় আমরা ভীষণভাবে তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করলাম। চাকা যখন রানওয়েকে স্পর্শ করল বুঝতেই পারলাম না নামতে নামতে বিমান কিভাবে স্বাভাবিক গতিতে পুরো জায়গায় ঘুরে যাচ্ছে। আকাশে ওড়ার চরম মুহূর্তগুলোতে মেঘের মধ্যে যখন বিমান ঝাঁকুনির পর্যায়ে তখন বার বার সতর্ক সঙ্কেত ভেসে আসল মাইক্রোফোনে- যাত্রীরা যেন সঠিকভাবে সিট বেল্টে নিজেদের আটকে রাখে। সব ধরনের সাবধান বাণীতে বিমান যাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় সংশয় কেটে যেতে সময় লাগেনি। শেষ অবধি আমরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে-নির্বিঘ্নে অবতরণ করলাম। চার ঘণ্টার এই আকাশ ভ্রমণ আনন্দদায়ক, বিস্ময়কর এবং মুগ্ধতার ¯্রােতে যেন ডুবে থাকল। ধন্যবাদ পাইলট তানিয়া আপুকে এমন চমৎকার একটি ভ্রমণ উপহার দেয়ার জন্য।
×